বর্ষার আর্দ্রতায় ত্বক হচ্ছে ক্লান্ত জানুন কীভাবে রাখবেন ত্বক তরতাজা উজ্জ্বল ও সংক্রমণমুক্ত

বর্ষার আর্দ্রতায় ত্বক হচ্ছে ক্লান্ত জানুন কীভাবে রাখবেন ত্বক তরতাজা উজ্জ্বল ও সংক্রমণমুক্ত

বর্ষায় বাড়ে আর্দ্রতা, সঙ্গে ত্বকের নানা সমস্যা! কীভাবে সুরক্ষিত রাখবেন নিজেকে?

বর্ষাকালে বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় ত্বকে অতিরিক্ত তেলতেলেভাব আসে। এই আর্দ্র পরিবেশ ফাঙ্গাস, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস বৃদ্ধির আদর্শ সময়। যার ফলে ত্বকে দেখা দেয় একজ়িমা, র‍্যাশ, ব্রণ, পিম্পল এমনকি ফাঙ্গাল ইনফেকশন। তাই বর্ষার সময় একটি সঠিক ও নিয়মিত স্কিনকেয়ার রুটিন মেনে চলা ভীষণ জরুরি।

একজ়িমা থেকে বাঁচতে বিশেষ নজর দিন শুষ্ক ত্বকে, কুমকুমাদি তেল হতে পারে কার্যকর

বর্ষায় অনেকেরই একজ়িমা বা র‍্যাশের সমস্যা বাড়ে। শুষ্ক ত্বকে সহজেই ছড়ায় ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাল জীবাণু। এই সময় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা যেমন কুমকুমাদি তেল বা মাখন ব্যবহারে মিলতে পারে স্বস্তি। এটি ত্বককে ময়েশ্চারাইজ় করে এবং র‍্যাশ প্রতিরোধ করে। দিনের শুরু ও রাতে ঘুমানোর আগে এটি ব্যবহার করলে একজ়িমার সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে।

প্রাকৃতিক উপাদানেই মিলবে ত্বকের সুরক্ষা, বাড়িতেই বানান ফেসপ্যাক

কেমিক্যাল নয়, বর্ষায় ত্বকের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হল ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপাদান। মুলতানি মাটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে, অ্যালোভেরা হাইড্রেট করে, হলুদ জীবাণুনাশক হিসাবে কাজ করে। তুলসি পাতা পেস্ট ও খাঁটি মধু মিশিয়ে মুখে লাগালে ত্বক থাকে সতেজ ও ব্রণমুক্ত। গোলাপজল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করলে ত্বক ফ্রেশ থাকে সারাদিন।

দিনে ২-৩ বার জলে মুখ ধোন, ব্যবহার করুন হালকা আয়ুর্বেদিক ফেসওয়াশ

বর্ষাকালে ঘাম ও ধুলোর সংমিশ্রণে মুখে জমে ময়লা ও তেল। দিনে অন্তত ২-৩ বার শুধু জলে মুখ ধোয়া উচিত। এর সঙ্গে দু’বার আয়ুর্বেদিক বা হার্বাল ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন। মধু ও তুলসি ভিত্তিক ফেসওয়াশ ব্যবহার করলে ত্বকে কোনও প্রতিক্রিয়া হয় না এবং সংক্রমণের সম্ভাবনাও কমে।

জল পান করুন প্রচুর, শরীরের ভিতরের আর্দ্রতাই ত্বককে রাখে উজ্জ্বল

ত্বক যতটা বাহ্যিকভাবে যত্নের প্রয়োজন, ততটাই ভেতর থেকে হাইড্রেশনও জরুরি। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস জল পান করুন। চাইলে তাতে লেবু বা মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। শরীর ঠিকভাবে হাইড্রেটেড থাকলে ত্বকের রক্তসঞ্চালন ভালো হয়, ফলে ত্বক দেখতে ভালো লাগে এবং তাজা থাকে।

টোনিং ও ময়েশ্চারাইজ়িং ছাড়া স্কিনকেয়ার অসম্পূর্ণ

ত্বক পরিষ্কার করার পর পরবর্তী ধাপ হল টোনিং। গোলাপজল বা নিমপাতা সিদ্ধ জল ব্যবহার করুন টোনার হিসেবে। এটি ছিদ্র বন্ধ করে এবং ব্রণের সম্ভাবনা কমায়। এরপর হালকা, নন-কমেডোজেনিক ময়েশ্চারাইজ়ার লাগান যা ত্বককে আর্দ্র রাখবে কিন্তু অতিরিক্ত তেলতেলেভাব আনবে না।

সানস্ক্রিন জরুরি! রোদ না থাকলেও ইউভি রশ্মি থেকে রক্ষা জরুরি

অনেকে ভাবেন বর্ষায় সূর্য দেখা যায় না, তাই সানস্ক্রিনের দরকার নেই। কিন্তু এই ভাবনা ভুল। বর্ষার মেঘলা আকাশেও ইউভি রশ্মি সক্রিয় থাকে। তাই বাইরে বেরোনোর আগে অবশ্যই SPF ৩০ বা তার বেশি যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। এটি ত্বককে রোদে পোড়া ও কালো হওয়া থেকে বাঁচায়।

নিম ও তুলসি—বর্ষাকালের প্রকৃত ত্বকরক্ষক

এই দুটি উপাদান বর্ষাকালে যেন অমূল্য। নিমপাতা ফোটানো জল বা পাতার রস ত্বকে ব্যবহার করলে জীবাণুনাশ হয়। তুলসির রস ব্রণ ও র‍্যাশের বিরুদ্ধে কার্যকর। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক থাকে সতেজ ও সংক্রমণমুক্ত। ঘরোয়া এসব উপাদানে ব্যয়ও কম এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়ও নেই।বর্ষায় ত্বকের যত্ন নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। কারণ আর্দ্র পরিবেশে ত্বকের সমস্যা দ্রুত বাড়ে। তাই নিয়মিত পরিষ্কার, প্রাকৃতিক উপাদান, পর্যাপ্ত জলপান ও সঠিক স্কিনকেয়ার রুটিন মেনে চললে ত্বক থাকবে উজ্জ্বল, স্বাস্থ্যকর ও সংক্রমণমুক্ত।

Leave a comment