এসসিও সম্মেলনে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে জয়শঙ্করের সাক্ষাৎ: ভারত-চিন সম্পর্কের নতুন দিগন্ত?

এসসিও সম্মেলনে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে জয়শঙ্করের সাক্ষাৎ: ভারত-চিন সম্পর্কের নতুন দিগন্ত?

এসসিও সম্মেলনে বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর চিনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধের সঙ্গে যুঝতে থাকা চিন ভারত ও রাশিয়ার সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়ানোর আবেদন জানাচ্ছে।

India-China Relation: ভারত ও চিনের মধ্যে সম্পর্ক গত কয়েক বছরে বেশ উত্তেজনাকর ছিল, বিশেষ করে ২০২০ সালে গালওয়ান ঘাটির সংঘর্ষের পর। তবে এখন এই সম্পর্কের উন্নতির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন এবং চিনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই সাক্ষাৎ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে কারণ চিন এই মুহূর্তে আমেরিকার শুল্ক যুদ্ধের সঙ্গে যুঝছে এবং ভারতের থেকে সহযোগিতার নতুন চেষ্টা করছে।

গালওয়ানের পর সম্পর্কে আসে তিক্ততা

গালওয়ান ঘাটির হিংসাত্মক সংঘর্ষ ভারত-চিন সম্পর্কে গভীর ফাটল তৈরি করেছিল। দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত বিতর্ক নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা চলে কিন্তু বিশ্বাসের অভাব বজায় থাকে। এরই মধ্যে অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রেও উত্তেজনা বাড়ে। ভারত চিনা অ্যাপের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং বাণিজ্যে আত্মনির্ভরতার দিকে পদক্ষেপ নেয়।

এসসিও সম্মেলনে দেখা গেল নরম সুরের শুরু

২০২৪ সালে আয়োজিত এসসিও সম্মেলনে এস জয়শঙ্করের চিন সফর দুই দেশের সম্পর্কের নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। সম্মেলনের সময় এস জয়শঙ্কর ও শি জিনপিংয়ের গোপন বৈঠকের বিষয়ে নানা ধরনের আলোচনা চলছে। মনে করা হচ্ছে এই সাক্ষাৎ শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং ভবিষ্যতে আরও ভালো সম্পর্কের ভিত্তি রাখার চেষ্টা।

আমেরিকার শুল্ক যুদ্ধের কারণে চিনের অর্থনীতিতে চাপ

চিন এই মুহূর্তে আমেরিকার শুল্ক যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক চাপে রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে শুরু হওয়া শুল্ক নীতি এখনও চলছে এবং এর ফলে চিনের রপ্তানিতে প্রভাব পড়েছে। চিনকে এখন ভারত ও রাশিয়ার মতো দেশের প্রয়োজন অনুভব হচ্ছে, যাতে তারা আঞ্চলিক ও বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের শক্তিশালী রাখতে পারে।

আরআইসি ফ্রন্টকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় চিন

চিন এখন রাশিয়া ও ভারতের সঙ্গে মিলিত হয়ে একটি নতুন ত্রিপাক্ষিক ফ্রন্ট RIC (Russia-India-China) সক্রিয় করতে চাইছে। এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য কেবল বাণিজ্য নয়, বরং কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখাও। চিনা বিদেশমন্ত্রকের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তিনটি দেশের সহযোগিতায় আঞ্চলিক শান্তি, সুরক্ষা ও উন্নয়ন বাড়বে।

রাশিয়া আগেই নিয়েছে উদ্যোগের পদক্ষেপ

এই ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতার শুরু চিন থেকে নয়, বরং রাশিয়া থেকে হয়েছিল। রাশিয়া তিনটি দেশের মধ্যে সংলাপ ও মিটিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছিল। রাশিয়ার জন্য ভারত একটি বিশ্বস্ত সহযোগী, যার থেকে তারা প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও জ্বালানি সম্পদের বড় বাজার পায়। পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার খারাপ সম্পর্কের মধ্যে ভারত তার কূটনৈতিক প্রয়োজনে পরিণত হয়েছে।

ভারতের জন্য কী অর্থ বহন করে এই উদ্যোগ

ভারতের জন্য RIC এমন একটি মঞ্চ হতে পারে যেখানে তারা কোনো রকম চাপ ছাড়াই চিন ও রাশিয়া উভয়ের সঙ্গেই নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে। বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেছেন, এই আলোচনা তিনটি দেশের মধ্যে সমঝোতা এবং বিশ্ব সমস্যাগুলোতে সহযোগিতার সুযোগ। পরবর্তী বৈঠকের জন্য পারস্পরিক আলোচনা চলছে।

ভারতের সতর্ক কিন্তু ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া

ভারত এখনও পর্যন্ত চিনের এই উদ্যোগে সরাসরি সমর্থন জানায়নি, তবে তাদের প্রতিক্রিয়ায় ভারসাম্য বজায় রেখেছে। ভারত চায় সীমান্ত বিতর্ক ও অন্যান্য সংবেদনশীল বিষয়গুলোতে স্পষ্টতা আসুক, তবেই কোনো গভীর সহযোগিতার ভিত্তি রাখা যেতে পারে। এটিও মনে রাখার মতো যে ভারত আমেরিকারও ঘনিষ্ঠ, তাই তারা কোনো একটি অক্ষের উপর নির্ভর করতে চায় না।

Leave a comment