সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, দেশীয় শেয়ার বাজারে আবারও ভারী পতন দেখা গেল। সকালের দিকে বাজার উঠলেও দুপুরে হঠাৎ করেই পড়ে যায়। সেনসেক্স তার দিনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে প্রায় ৪৫০ পয়েন্ট কমে ৮১১১৪.৪৫-এ এসে পৌঁছায়, যেখানে নিফটি ২৪৭৫০-এর গুরুত্বপূর্ণ স্তর টপকে ২৪৭৩৮.৮৫ পর্যন্ত নেমে যায়।
দিনভর লেনদেনে বিনিয়োগকারীদের মেজাজ খারাপ দেখা যায়। কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক, ভারত ইলেকট্রনিক্স, এয়ারটেল, টাইটান এবং অ্যাপোলো হসপিটালসের মতো বড় শেয়ারগুলিতে বড় পতন নজরে আসে।
কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের ফলে ধাক্কা
বাজারের পতনের সবচেয়ে বড় কারণ হল কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের দুর্বল ত্রৈমাসিক ফলাফল। ব্যাঙ্কের শেয়ারে ৭ শতাংশ পর্যন্ত পতন দেখা যায়। এপ্রিল থেকে জুন ত্রৈমাসিকে ব্যাঙ্কের কনসোলিডেটেড নেট প্রফিট ৪৪৭২ কোটি টাকা হয়েছে, যেখানে গত বছর এই একই সময়ে এটি ছিল ৭৪৪৮ কোটি টাকা।
যদিও গতবারের ফলাফলে এককালীন ৩০০০ কোটি টাকার আয় অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে অংশীদারিত্ব বিক্রি করে এসেছিল, কিন্তু এইবারের মুনাফা প্রত্যাশার থেকে অনেক কম ছিল। ব্যাঙ্কের রিটেল কমার্শিয়াল ভেহিকেল লোন ক্যাটাগরিতেও দুর্বলতা দেখা গেছে, যা বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক বিক্রি
বাজারে পতনের দ্বিতীয় বড় কারণ ছিল বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিক্রি। শুক্রবার এফআইআই ১৯৮০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। গত পুরো সপ্তাহে এই সংখ্যাটা ১৩৫৫২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। যখনই বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এভাবে প্রচুর পরিমাণে শেয়ার বিক্রি করে, তখন বাজারে চাপ বাড়তে বাধ্য।
জিওজিৎ ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের চিফ ইনভেস্টমেন্ট স্ট্র্যাটেজিস্ট ভি কে বিজয়কুমার জানান, এত বড় বিক্রির কারণে বাজারে দুর্বলতা আরও বেড়েছে এবং ছোট বিনিয়োগকারীদের ধারণার ওপরও প্রভাব ফেলেছে।
এশিয়ার বাজারগুলো থেকে কোনো সাহায্য মেলেনি
সোমবার এশিয়ার বাজারগুলোর অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিল না। জাপানের নিকেই, দক্ষিণ কোরিয়ার কোস্পি এবং চীনের সাংহাই কম্পোজিট ইনডেক্স—সবকটিই লাল চিহ্ন দিয়ে বন্ধ হয়েছে। যখন বিশ্ব বাজারে পতন হয়, তখন ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের ধারণার ওপরও প্রভাব পড়ে এবং তারা সতর্ক হয়ে ট্রেডিং থেকে সরে আসে।
অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি
আরেকটি কারণ যা বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগে ফেলেছিল, তা হল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম বৃদ্ধি। এটা বেড়ে ৬৮.৬৪ ডলার প্রতি ব্যারেল পর্যন্ত পৌঁছেছে। ভারত এর মতো দেশ, যারা বেশিরভাগ তেল আমদানি করে, সেখানে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়লে মুদ্রাস্ফীতি এবং খরচ বাড়তে পারে। এতে কোম্পানিগুলোর মার্জিনের ওপর প্রভাব পড়তে পারে, যার সরাসরি প্রভাব শেয়ার বাজারেও হয়।
আইটি শেয়ারে বিক্রি এবং নেতিবাচক খবর
আইটি সেক্টর এইবারও বাজারকে সামাল দিতে পারেনি। টিসিএস, উইপ্রো, এইচসিএল টেক এবং টেক মাহিন্দ্রার মতো বড় আইটি শেয়ারগুলিতে বিক্রি দেখা গেছে। টিসিএস-এর তরফে ২ শতাংশ গ্লোবাল ওয়ার্কফোর্স ছাঁটাইয়ের খবরে বাজারের ধারণা আরও খারাপ হয়ে যায়।
আইটি কোম্পানিগুলোর দুর্বল আউটলুক এবং কমতে থাকা ডিলগুলোর কারণে বিনিয়োগকারীরা এই সেক্টর থেকে দূরত্ব বজায় রাখছেন। এটাও বাজারের জন্য একটি নেতিবাচক সংকেত ছিল।
কারিগরী সঙ্কেত কি বলছে
জিওজিতের রিসার্চ প্রধান আনন্দ জেমসের মতে, কারিগরি দিক থেকে নিফটি ২৪৪৫০ এবং ২৪০০০ এর স্তরে সাপোর্ট পেতে পারে। যদি বাজার নিফটিকে ২৪৯২২-এর উপরে বন্ধ করে, তাহলে শর্ট কভারিংয়ের কারণে এতে ২৫৩২৪ পর্যন্ত উত্থান দেখা যেতে পারে। যদিও ২৫০০০-এর কাছেই শক্তিশালী প্রতিরোধও তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে বাজার দুর্বল অবস্থানে রয়েছে এবং আগামী কয়েক দিন পর্যন্ত উত্থান-পতনের সম্ভাবনা বজায় থাকবে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিক্রি, বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তা এবং সেক্টরাল দুর্বলতার মতো কারণে বাজারে আস্থা কমতে দেখা যাচ্ছে।
এই শেয়ারগুলোর ওপর সবচেয়ে বেশি চাপ ছিল
- কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক: দুর্বল ফলাফলের কারণে ৭ শতাংশ পর্যন্ত পতন
- ভারত ইলেকট্রনিক্স: বিনিয়োগকারীদের বিক্রির চাপ
- ভারতী এয়ারটেল: কোম্পানির অপারেশনাল মেট্রিক্স নিয়ে উদ্বেগ
- টাইটান এবং অ্যাপোলো হসপিটালস: হাই ভ্যালু স্টকগুলোতে মুনাফা আদায়
বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যতক্ষণ না বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আবার কেনাকাটা শুরু করে এবং ত্রৈমাসিক ফলাফল থেকে কোনো বড় ইতিবাচক সংকেত পাওয়া যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত বাজারে স্থিতিশীলতার আশা কম।
সোমবারের পতন এটাও দেখিয়ে দিয়েছে যে বাজার কতটা সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে এবং একটি-দুটি সংকেতে বড় আলোড়ন সৃষ্টি হতে পারে। বিনিয়োগকারী এবং বিশ্লেষক উভয়ই এখন আগস্টের শুরুতে আসা অর্থনৈতিক ডেটা এবং আমেরিকার নীতির দিকে তাকিয়ে আছেন, যা বাজারের পরবর্তী দিকনির্দেশ ঠিক করতে পারে।