মধ্য প্রদেশের সিঙ্গারোলি অঞ্চল যা এতদিন তার কয়লার বৃহৎ ভাণ্ডারের জন্য পরিচিত ছিল, এখন একটি নতুন পরিচয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। কেন্দ্র সরকার সংসদে এই তথ্য জানিয়েছে যে সিঙ্গারোলি কোলফিল্ডের জমিতে রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস অর্থাৎ দুর্লভ ধাতু মৌলের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এই উপাদানগুলি আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিসে কাজে লাগে।
রাজ্যসভায় দেওয়া তথ্য
রাজ্যসভায় কয়লা ও খনি মন্ত্রী জি. কিষাণ রেড্ডি জানিয়েছেন যে কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড অর্থাৎ সিআইএল এই রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস-এর খোঁজ শুরু করার জন্য কাজ শুরু করেছে। তিনি জানান, সিঙ্গারোলির গন্ডোয়ানা স্তরগুলিতে কয়লা, মাটি, শেল এবং বেলেপাথরের নমুনা নেওয়া হয়েছে, যেগুলিতে এই উপাদানগুলির ভাল পরিমাণ পাওয়া গেছে।
রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস কী
রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস অর্থাৎ আরইই হল ১৭টি বিশেষ ধাতুর একটি গোষ্ঠী, যার মধ্যে স্ক্যান্ডিয়াম, ইট্রিয়াম এবং ল্যান্থানাইডস প্রধান। এগুলি বৈদ্যুতিক গাড়ির (Electric Vehicle), উইন্ড টারবাইন, মোবাইল ফোন, সামরিক সরঞ্জাম, সোলার প্যানেল এবং উন্নত কম্পিউটার চিপের মতো আধুনিক প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত হয়। আজকের দিনে এই ধাতুগুলি যে কোনও দেশের কৌশলগত শক্তির অংশ হিসাবে বিবেচিত হয়।
কয়লা এবং নন-কোল নমুনায় উপস্থিতি
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, কয়লা-সংযুক্ত নমুনাগুলিতে ২৫০ পার্টস পার মিলিয়ন (পিপিএম) পর্যন্ত রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস পাওয়া গেছে। একই সময়ে, নন-কোল স্তর যেমন শেল এবং মাটিতে এদের পরিমাণ আরও বেশি, প্রায় ৪০০ পিপিএম পর্যন্ত পাওয়া গেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে সিঙ্গারোলি অঞ্চল শুধু শক্তির নয়, গুরুত্বপূর্ণ শিল্প খনিজগুলিরও একটি প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।
সিঙ্গারোলির মাটিতে লুকানো শিল্প শক্তি
সিঙ্গারোলি কোলফিল্ডের নাম দেশের বৃহত্তম কয়লা উৎপাদনকারী অঞ্চলের মধ্যে আসে। এখন এই অঞ্চলে পাওয়া রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস এটিকে শক্তি এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও বিশেষ করে তুলতে পারে। গন্ডোয়ানা স্তরগুলিতে পাওয়া এই ধাতুগুলির উপস্থিতির উপর বিজ্ঞানী এবং ভূगर्भ বিশেষজ্ঞদের গভীর নজর রয়েছে।
উত্তর-পূর্ব ভারতেও খোঁজ করা হয়েছে
সরকার জানিয়েছে যে উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু কোলফিল্ডেও রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস-এর সন্ধান করা হয়েছে। সেখানে এই উপাদানগুলির মোট পরিমাণ কম পাওয়া গেছে, তবে বিশেষ বিষয় হল সেখানে ভারী রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস-এর পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি। ভারী আরইই বেশি মূল্যবান এবং প্রযুক্তিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
নতুন প্রযুক্তির উপর কাজ চলছে
সরকার আরও জানিয়েছে যে এই খনিজগুলি বের করার জন্য দেশীয় প্রযুক্তির বিকাশ করা হচ্ছে। দুটি বিশেষ প্রযুক্তির উপর কাজ চলছে। প্রথমটি হল ফিজিক্যাল সেপারেশন অর্থাৎ ভৌত উপায়ে খনিজগুলিকে আলাদা করা এবং দ্বিতীয়টি হল আয়ন এক্সচেঞ্জ রেসিন প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে অ্যাসিড মাইন ড্রেpage এবং নন-কোল স্তর থেকে ধাতুগুলি বের করা যাবে।
খনন বর্জ্য থেকেও বের করা হবে খনিজ
কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড শুধু নতুন খনন অঞ্চলের দিকেই নয়, পুরনো খনন বর্জ্য অর্থাৎ মাইন ওয়েস্টের দিকেও নজর দিচ্ছে। এই ওয়েস্ট মেটেরিয়ালস-এও আরইই-এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে এবং সেগুলি বের করার জন্য গবেষণা করা হচ্ছে। এটি এক প্রকার আবর্জনাকে সম্পদে পরিণত করার মতো হবে।
দেশের জন্য বড় লাভ হতে পারে
ভারত এখনও রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস-এর চাহিদার জন্য চীন এবং অন্যান্য কিছু দেশের উপর নির্ভরশীল। যদি সিঙ্গারোলির মতো অঞ্চল থেকে এগুলির বাণিজ্যিক ভাবে নিষ্কাশন সম্ভব হয়, তবে এটি আত্মনির্ভর ভারত অভিযানকেও একটি নতুন শক্তি দেবে। দেশকে প্রযুক্তিগত ও শিল্প ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর করে তুলতে এই আবিষ্কারের অবদান গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
ভবিষ্যতে আরও খোঁজ সম্ভব
এই আবিষ্কারের পর এখন দেশের অন্যান্য কোলফিল্ড এবং গন্ডোয়ানা বেসিন অঞ্চলগুলিতেও একই ধরনের সম্ভাবনা খোঁজার পথ খুলে গেছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে ভারতীয় ভূগোলে আরও অনেক জায়গায় রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস লুকানো থাকতে পারে, যেগুলি নতুন প্রযুক্তি ও গবেষণার মাধ্যমে খুঁজে বের করা যেতে পারে।
সংসদে পাওয়া খবরে বাড়ল আশা
এই সম্পূর্ণ তথ্য সামনে আসার পর শিল্প জগৎ এবং সরকার উভয়ের মধ্যেই উৎসাহের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সিঙ্গারোলি কোলফিল্ডের এই নতুন পরিচয় ভারতের খনিজ সম্পদের জন্য একটি নতুন অধ্যায় প্রমাণিত হতে পারে। আগামী দিনে এই দিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।