সিদ্দিকুল্লার তোপ নিজের দলের নেতার দিকেই পঞ্চায়েত সভাপতিকে ‘গুন্ডা’ বলে সরাসরি আক্রমণ মন্ত্রীর

সিদ্দিকুল্লার তোপ নিজের দলের নেতার দিকেই পঞ্চায়েত সভাপতিকে ‘গুন্ডা’ বলে সরাসরি আক্রমণ মন্ত্রীর
সর্বশেষ আপডেট: 30-11--0001

সাতগেছিয়া অফিসে বসে বিস্ফোরক মন্তব্য, মন্তেশ্বরে আইনের শাসন নেই বলে স্বীকারোক্তি বিধায়কের

জনতার রোষের পরেই সরব সিদ্দিকুল্লা, অভিযোগের নিশানায় এবার নিজের দলের পঞ্চায়েত সভাপতি মাসের শুরুতে মন্তেশ্বরে সাধারণ মানুষের হাতে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর। সেই ঘটনার রেশ না কাটতেই মুখ খুললেন নিজেই, তোপ দাগলেন নিজের দলের পঞ্চায়েত সভাপতির বিরুদ্ধে। শনিবার সাতগেছিয়ায় বিধায়ক কার্যালয় থেকেই জানান, তাঁর কেন্দ্র আইনের শাসনহীন এক ‘গুন্ডারাজ’-এ পরিণত হয়েছে।

আহমেদ হোসেনকে তুলোধোনা, ‘গুন্ডাবাহিনীর নেতা’ বলে কটাক্ষ রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রীর

সিদ্দিকুল্লার অভিযোগ, মন্তেশ্বর জুড়ে সন্ত্রাস চালাচ্ছে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আহমেদ হোসেন ও তাঁর অনুগামীরা। দলীয় ব্যানার সামনে রেখে চলছে ভয় দেখানো, হুমকি, এমনকি ‘সান্ডবাহিনী’ নামেই পরিচিত একটি চক্র রোজ ঢুকছে লালঘরে। তাঁর কথায়, যে রাজনীতির ‘র’ জানে না, সেই আহমেদ এখন মমতা-অভিষেকের ছবি সামনে রেখে ত্রাস সৃষ্টি করছে।

‘জমি বিক্রি করলেই চাঁদা, নতুন বাড়ি করলেই টাকা দাবি’, বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রীকেও চিঠি দিয়েছেন মন্ত্রী

মন্ত্রী দাবি করেছেন, দুই ভাইয়ের মধ্যে অশান্তি হলেও টাকা চাইছে আহমেদের দল। কেউ নতুন বাড়ি করলেও চাঁদা চাইছে। তিনি নিজে মুখ্যমন্ত্রীকে চার পাতার অভিযোগপত্র দিয়েছেন বলেও জানান। তাঁর কথায়, দিদি এখন ২১ জুলাইয়ের কাজে ব্যস্ত। সময় এলেই ব্যবস্থা নেবেন।

পুলিশ ক্যাম্পের প্রস্তাব, অনাস্থা আনতে চলেছেন সিদ্দিকুল্লা, আহমেদকে অপসারণই লক্ষ্য?

সিদ্দিকুল্লার দাবি, মেমারি-২ ব্লকে আহমেদের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হবে। ইতিমধ্যেই ১৬ জনের লিখিত প্রস্তাব তাঁর হাতে এসেছে। তাঁর অভিযোগ, একজন গুন্ডা পঞ্চায়েত সমিতির অর্থ লুটেপুটে খাচ্ছে। মিটিং পর্যন্ত ডাকছে না। এমনকী পুলিশ সুপারকে কুসুমগ্রামে ক্যাম্প করার কথা বলেছি।

নিজের কাজকেও তুলে ধরলেন সিদ্দিকুল্লা, ‘৫০ বার আহমেদের বাড়িতে গেছি, সভা করেছি, বস্ত্র বিতরণ করেছি’

নিজের কাজের খতিয়ান তুলে ধরে বলেন, “আমি তো ওর এলাকায় বহু সভা করেছি, গরীবদের বস্ত্র দিয়েছি। তা কেউ দেখে না, শুধু আমার বিরুদ্ধে লোক সাজিয়ে উত্তেজনা তৈরি করছে। তাঁর দাবি, সাধারণ মানুষ জানে কারা প্রকৃত কাজ করেছে, আর কারা শুধুই নাম ভাঙিয়ে চলছে।বিরোধীদের সুর আরও চড়া, ‘গণতন্ত্র কেড়ে নিচ্ছে তৃণমূল, পুলিশ দর্শক’— সিপিএমের কটাক্ষসিপিএম নেতা সৈয়দ হোসেন বলেন, তৃণমূলের এই লুটেরা সংস্কৃতি গোটা রাজ্য জুড়ে। মানুষের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, ভয় দেখিয়ে চলছে শাসন। মন্তেশ্বর বা বর্ধমান নয়, এটাই পশ্চিমবঙ্গের সার্বিক চিত্র। তাঁর দাবি, পুলিশের ভূমিকা এ ঘটনায় একেবারে ‘দর্শকের’।

‘নিজের দলের লোকের হাতেই মার খেয়েছেন মন্ত্রী’— কটাক্ষ বিজেপি নেতার

বিজেপির জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা বলেন, আজ মন্ত্রী নিজেই স্বীকার করছেন, নিজের দলের লোকদের হাতেই আক্রান্ত হয়েছিলেন। এটা প্রমাণ করছে তৃণমূলের ভেতরের গণ্ডগোল কতটা গভীর। বাংলায় পরিবর্তন আসবেই।

জেলা সভাপতির মন্তব্যে পাল্টা ইঙ্গিত— ‘যা বলার দলের মধ্যেই বলব’, একপ্রকার ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা?

বর্ধমান জেলার তৃণমূল সভাপতি সংবাদমাধ্যমে মুখ না খুললেও বলেন, যা জানাবার, দলের মধ্যে জানাব। জনগণ গত ৩৪ বছরের বামশাসন দেখেছে, তাই উন্নয়নের জন্যই আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই ক্ষমতায় এনেছে এবং আনবেও।

তৃণমূলের অন্দরেই কলহের বিস্ফোরণ, মুখ্যমন্ত্রীর সামনে চ্যালেঞ্জ— নিয়ন্ত্রণ করবেন কীভাবে?

২১ জুলাইয়ের আগে এই ধরনের অন্দরকলহ তৃণমূলের ভাবমূর্তিতে বড় ধাক্কা দিচ্ছে। সিদ্দিকুল্লার মতো অভিজ্ঞ মন্ত্রীর প্রকাশ্য ক্ষোভ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের দিকেই চাপ বাড়াচ্ছে। এখন দেখার, মুখ্যমন্ত্রী কী ব্যবস্থা নেন— নাকি সবটাই চাপা পড়ে যাবে ২১ জুলাইয়ের ঢাকে?

Leave a comment