বীরভূমের রাজনৈতিক বুকে ফের বুলেটের ঝাঁঝ! শনিবার রাত আড়াইটে নাগাদ লাভপুরের কোমরপুর গ্রামে খুন হলেন তৃণমূলের দাপুটে নেতা পীযূষ ঘোষ। শোকে স্তব্ধ শ্রীনিধিপুর অঞ্চল। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে মাথায় গুলি করে পালাল আততায়ীরা। গ্রামবাসীদের চোখের সামনেই নিভে গেল এক নেতার প্রাণপ্রদীপ।
নিশীথ ফোনের ডাকে ঘর ছাড়লেন পীযূষ, অন্ধকারেই ডেকে আনল মৃত্যু?
শনিবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ বাড়ি ফেরেন পীযূষ ঘোষ। স্থানীয় সূত্রে খবর, তার কিছুক্ষণের মধ্যেই এক অজানা ফোন কল আসে তাঁর কাছে। রাত ১২টা নাগাদ ওই কলের সূত্রেই তিনি বেরিয়ে যান বাড়ি থেকে। এরপরই গ্রামের মোড়ে ঘটে সেই ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ড। পুলিশ বলছে, রাত আড়াইটে নাগাদ গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা।
দলের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ, অঞ্চল সভাপতি— এলাকা চেনে 'দাপুটে' হিসেবেই!
নিহত পীযূষ ঘোষ শুধু অঞ্চল সভাপতি নন, ছিলেন সাঁইথিয়া পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষও। শ্রীনিধিপুর অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই সংগঠনের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কাছে ছিলেন 'আতঙ্ক', আবার অনুগামীদের কাছে 'ভরসার নাম'। ঠিক সেই নেতার জীবনই এমন নির্মমভাবে শেষ হল?
ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, না কি ব্যক্তিগত শত্রুতা? তদন্তে উঠে আসছে প্রশ্ন
একজন প্রতিষ্ঠিত তৃণমূল নেতা, যিনি দিনের শেষে হঠাৎ একটি ফোন পেয়ে গ্রাম্য মোড়ে যান এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মাথায় গুলি খেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন— এই ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই উঠছে নানা প্রশ্ন। পুলিশ ভাবছে, পরিচিত কেউ কি ফোন করেছিলেন তাঁকে? গুলি চালানোর পেছনে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নাকি ব্যক্তিগত শত্রুতা? তদন্তের শুরুতেই সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কাউকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি, সন্দেহের তালিকায় পরিচিত মুখরাই?
ঘটনার পর এখনও পর্যন্ত কোনও গ্রেপ্তারের খবর নেই। যদিও তিনজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। জানা যাচ্ছে, এদের মধ্যে কেউ কেউ এলাকায় নিহত নেতার ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। পুলিশের ধারণা, খুনের ছকটা ভীষণ গোছানো, এবং আততায়ীদের সঙ্গে পীযূষবাবুর পূর্বপরিচয় ছিল বলেই এত কাছ থেকে গুলি চালানো সম্ভব হয়েছে।
তৃণমূল বিধায়কের তৎপরতা, বোলপুর হাসপাতালে পৌঁছলেন অভিজিৎ সিনহা
এই ঘটনার খবর পেতেই রাতেই হাসপাতালে ছুটে যান লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক অভিজিৎ সিনহা। দলীয় নেতার এমন মৃত্যুতে স্তব্ধ তিনি। হাসপাতাল চত্বরে দলীয় কর্মীদের উপস্থিতিও নজর কাড়ে। একাংশের দাবি, কিছুদিন ধরেই এলাকায় দলীয় কোন্দল বেড়েছিল। পুলিশও বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
পুলিশের কড়া বার্তা, সমস্ত সম্ভাবনার দিকে নজর, প্রযুক্তির সাহায্যে তদন্তে গতি আনার চেষ্টা
বীরভূমের পুলিশ সুপার আমনদীপ জানিয়েছেন, এটা শুধু একটা খুন নয়, রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার চেষ্টাও হতে পারে। আমরা কোনও সম্ভাবনাকেই উড়িয়ে দিচ্ছি না। প্রযুক্তির সাহায্যে ফোন কল ট্র্যাক করা হচ্ছে। শীঘ্রই আততায়ীদের খুঁজে বার করে আইনের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
এক ফোনেই শেষ জীবন, লাভপুরের রাজনীতি কি তবে আরও রক্তাক্ত হবে?
ঘুমন্ত গ্রাম যেন জেগে উঠল গুলির শব্দে। পীযূষ ঘোষের মৃত্যু শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, বরং তার ছায়া লাভপুরের রাজনৈতিক আকাশ জুড়ে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে চলেছে। সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে— 'এই খুনের পিছনে কে? এবং কেন?'