গোয়া ও চেন্নাইতে স্মার্ট ট্র্যাফিক সিগন্যাল: যানজট কমিয়ে আনবে এআই

গোয়া ও চেন্নাইতে স্মার্ট ট্র্যাফিক সিগন্যাল: যানজট কমিয়ে আনবে এআই

গোয়া এবং চেন্নাইতে এআই ভিত্তিক স্মার্ট ট্র্যাফিক সিগন্যাল বসানো হবে, যা ট্র্যাফিক জ্যাম কমাবে এবং সফরের সময় কমিয়ে আনবে। এই প্রযুক্তি সেন্সর এবং ক্যামেরার সাহায্যে রিয়েল-টাইম ট্র্যাফিক পরিচালনা করবে।

স্মার্ট ট্র্যাফিক সিগন্যাল: ভারতে ট্র্যাফিক জ্যামের সমস্যা প্রায় প্রতিটি বড় শহরেই একটি সাধারণ ঘটনা। কিন্তু এখন এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দেশ প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়ার একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শীঘ্রই গোয়া এবং চেন্নাইয়ের মতো শহরগুলিতে এআই অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ভিত্তিক স্মার্ট ট্র্যাফিক সিগন্যাল সিস্টেম বসানো হবে। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে ট্র্যাফিককে আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে এবং মানুষের সফরও সহজ হবে। এই পদক্ষেপটি আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনা শহরে সফলভাবে প্রয়োগ করা স্মার্ট সিগন্যাল সিস্টেম থেকে অনুপ্রাণিত, যা সেখানকার ট্র্যাফিকের পরিস্থিতিতে বড় পরিবর্তন এনেছে।

গোয়া এবং চেন্নাইতে এআই ট্র্যাফিক সিস্টেমের প্রস্তুতি জোরকদমে চলছে

গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে রাজ্যের ৯১টি স্থানে এআই ট্র্যাফিক সিগন্যাল বসানো হবে। অন্যদিকে, চেন্নাইতে এই পরিকল্পনা আরও বড় আকারে বাস্তবায়িত করা হচ্ছে, যেখানে ১৬৫টি প্রধান চৌরাস্তাকে এই প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করা হবে। চেন্নাইতে এই সিস্টেমটি প্রথম পর্যায়ে আন্না সালাই, জওহরলাল নেহেরু সালাই, কামরাজার সালাই, সরদার প্যাটেল রোড, রাজাাজি সালাই এবং টেইলরস রোডের মতো প্রধান রাস্তাগুলিতে লাগানো হবে। এই প্রকল্পের পরিচালনা স্থানীয় ট্র্যাফিক পুলিশ বিভাগ এবং নগর নিগমের সহযোগিতায় করা হচ্ছে।

কীভাবে কাজ করে এআই ভিত্তিক স্মার্ট ট্র্যাফিক সিগন্যাল?

এআই ট্র্যাফিক সিগন্যাল সিস্টেম ঐতিহ্যবাহী ট্র্যাফিক লাইট থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এটি তিনটি প্রধান প্রযুক্তিগত অংশে বিভক্ত:

১. এআই ক্যামেরা

এই ক্যামেরাগুলি যানবাহনের সংখ্যা, তাদের প্রকার (গাড়ি, বাইক, ট্রাক ইত্যাদি) এবং দিক চিহ্নিত করে। ক্যামেরা দিনরাত কাজ করে এবং ক্রমাগত ডেটা সংগ্রহ করে।

২. স্মার্ট সেন্সর

রাস্তায় বসানো সেন্সর গাড়ির গতি এবং ট্র্যাফিকের ঘনত্ব পরিমাপ করে। এর থেকে সিগন্যাল জানতে পারে যে কোন লেনে ট্র্যাফিক বেশি এবং কোথায় কম।

৩. এআই কন্ট্রোল ইউনিট

ক্যামেরা এবং সেন্সর থেকে আসা ডেটা একটি এআই অ্যালগরিদম প্রসেস করে এবং ট্র্যাফিক লাইটের সময়কে সেই অনুযায়ী রিয়েল-টাইমে অ্যাডজাস্ট করে। এই সময় ৩০ থেকে ১২০ সেকেন্ড পর্যন্ত পরিবর্তিত হতে পারে।

এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এটি মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাজ করতে পারে, যার ফলে ম্যানুয়াল ত্রুটির সম্ভাবনা হ্রাস পায়।

ইমার্জেন্সি এবং ভিআইপি মুভমেন্টের জন্যও পথ তৈরি হবে

সিস্টেমটি সম্পূর্ণরূপে স্বয়ংক্রিয় হলেও পুলিশের কাছে এর ম্যানুয়াল কন্ট্রোলও থাকবে। এর উদ্দেশ্য হল অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার ব্রিগেড বা ভিআইপি মুভমেন্টের সময় ট্র্যাফিককে তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এআই সিস্টেম নিজেও এই ধরনের জরুরি কার্যক্রম সনাক্ত করতে সক্ষম এবং সেই অনুযায়ী সিগন্যালকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কাজ করে।

গ্রিন করিডোর: বিরতিহীন সফরের পরিকল্পনা

চেন্নাই পুলিশের পরিকল্পনা হল ভবিষ্যতে সমস্ত ট্র্যাফিক সিগন্যালকে একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল সিস্টেমের সাথে যুক্ত করা, যার মাধ্যমে ‘গ্রিন করিডোর’ তৈরি করা সম্ভব হবে। এর মানে হল একবার কোনো যানবাহন প্রধান রাস্তায় প্রবেশ করলে সেটি একটানা সবুজ আলো পেতে থাকবে এবং বার বার থামতে হবে না। এতে ট্র্যাফিকের গতি বাড়বে, জ্বালানি সাশ্রয় হবে এবং মানুষ সঠিক সময়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে।

ট্রায়াল রান থেকে ইতিবাচক ইঙ্গিত

চেন্নাইতে ইভিআর সালাইয়ের ছয়টি চৌরাস্তায় এই সিস্টেমের ট্রায়াল রান করা হয়েছে। প্রাথমিক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে ট্র্যাফিক জ্যাম ২০% পর্যন্ত কমেছে এবং যাত্রীদের ভ্রমণের সময়ও হ্রাস পেয়েছে। স্থানীয় মানুষজন এবং অফিসে যাতায়াত করা যাত্রীরা জানিয়েছেন যে আগে যেখানে ৪৫ মিনিট লাগত, এখন সেই পথ ২৫-৩০ মিনিটে অতিক্রম করা যাচ্ছে।

প্রযুক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে একটি বিপ্লবী পদক্ষেপ

এআই ট্র্যাফিক সিগন্যাল সিস্টেম ভারতকে একটি স্মার্ট এবং প্রযুক্তি ভিত্তিক ট্র্যাফিক কন্ট্রোল সিস্টেমের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এটি কেবল মানুষের সময় বাঁচাবে না, পাশাপাশি পরিবেশকেও উপকৃত করবে, কারণ গাড়ি কম থামবে এবং জ্বালানির ব্যবহারও কম হবে। এছাড়াও, এই সিস্টেম ভবিষ্যতে আইওটি (ইন্টারনেট অফ থিংস) এবং ডেটা অ্যানালাইসিস-এর মতো প্রযুক্তিকেও ট্র্যাফিক কন্ট্রোলে যুক্ত করার পথ খুলে দেবে।

Leave a comment