সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মানহানির মামলায় এফআইআর স্থগিত, হাইকোর্টে তোপ পুলিশের ওপর

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মানহানির মামলায় এফআইআর স্থগিত, হাইকোর্টে তোপ পুলিশের ওপর

কলকাতা: প্রভাবশালী ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মানহানির অভিযোগে কলকাতার এক সাংবাদিক দীপঙ্কর গুহের বিরুদ্ধে পুলিশ দ্রুত এফআইআর দায়ের করে। অভিযোগ, সাংবাদিকের মন্তব্যে সৌরভকে অসম্মানজনকভাবে আঘাত করা হয়েছে। কিন্তু সাংবাদিকের পক্ষের আইনজীবীরা হাইকোর্টকে জানান, সাংবাদিকের বক্তব্যে এমন কিছু নেই যা মানহানির যোগ্য, তাই পুলিশ অতিসক্রিয় হয়ে অবিলম্বে এফআইআর দায়ের করেছে।হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের এজলাসে তদন্তকারী অফিসারকে তলব করা হয়। আদালত স্পষ্টভাবে প্রশ্ন তোলেন, “মানহানির অভিযোগের ভিত্তিতে কীভাবে এফআইআর দায়ের করা সম্ভব?” পুলিশ পক্ষ যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় আদালত ওই এফআইআর স্থগিত করেন।

পুলিশি পদক্ষেপ ও হাইকোর্টের সমালোচনা

এই মামলায় পুলিশি কর্মকাণ্ডকে হাইকোর্ট কড়া ভাষায় সমালোচনা করে। আদালত উল্লেখ করেন, সাধারণ নাগরিকদের প্রতি পুলিশ কতটা দায়িত্বশীল হতে হবে তা প্রমাণ করতে হবে। শুধুমাত্র দ্রুত এফআইআর দায়ের করে কাউকে হেয় করার প্রচেষ্টা আদালতের নীতি ও আইনের বিরুদ্ধে। হাইকোর্ট বলেন, প্রত্যেকটি এফআইআর আদালতের অনুমোদন ছাড়া করা হলে তা আইনগত ও সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।এছাড়া আদালত তলব করেন সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী অফিসারকে, কেন সংবাদিকের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগে তৎক্ষণাৎ এফআইআর দায়ের করা হলো। অফিসার যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হন। এর ফলে আদালত ওই এফআইআর স্থগিত করে দেন। একই সঙ্গে নির্দেশ দেন, পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত সকল পক্ষ হলফনামা জমা দেবেন।

আইনি বিশ্লেষণ

আইনজীবীরা জানান, মানহানির মামলা একটি সংবেদনশীল বিষয়। বিশেষ করে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও প্রকাশনার অধিকারকে মাথায় রাখতে হবে। আদালত স্পষ্ট করেছেন, আইনের সীমা ছাড়িয়ে পুলিশ যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তা সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করতে পারে। এফআইআর দায়েরের ক্ষেত্রে প্রমাণভিত্তিক ও আইনি ন্যায্যতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য।বৃহত্তর অর্থে, এই ঘটনা প্রকাশ করেছে যে, ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে সাংবাদিকদের কাজ ও বক্তব্যের স্বাধীনতা রক্ষা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। হাইকোর্টের দ্রুত এবং সুস্পষ্ট পদক্ষেপ এই স্বাধীনতা বজায় রাখার জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া

সাংবাদিক দীপঙ্কর গুহ বলেছেন, “আমি সবসময় তথ্য-ভিত্তিক প্রতিবেদনের চেষ্টা করি। তবে পুলিশের অতিসক্রিয় পদক্ষেপে আমার পেশাগত স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়ে। হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ আমাকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছে।”তার আইনজীবী বলেন, এই রায় সাংবাদিক সমাজের জন্য এক ধরনের সুরক্ষা। পুলিশ ও প্রশাসনকে আইনের দিক থেকে আরও সংবেদনশীল হতে হবে। কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ বা চাপের কারণে এফআইআর দায়ের করা যায় না।

পরবর্তী শুনানি ও সম্ভাব্য প্রভাব

হাইকোর্ট আগামী ৬ নভেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি নির্ধারণ করেছে। এর আগে আদালত সমস্ত পক্ষকে হলফনামা জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে। এই মামলার ফলাফল ভবিষ্যতে সাংবাদিক স্বাধীনতা, মানহানি আইন এবং পুলিশি দায়িত্ব সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।

ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মানহানির অভিযোগে কলকাতার এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে পুলিশ তড়িঘড়ি এফআইআর দায়ের করায় হাইকোর্ট তীব্র প্রশ্ন তোলেন। তদন্তকারী অফিসারকে তলব করে আদালত জানতে চায়, কীভাবে মানহানির মামলায় এফআইআর করা হলো। অবশেষে হাইকোর্ট ওই এফআইআর স্থগিত করে, সমস্ত পক্ষকে হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।

Leave a comment