স্পিরিট এয়ার বিহারে বিমান পরিষেবা শুরু করার পরিকল্পনার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেছে। রিজিওনাল কানেক্টিভিটি স্কিমের অধীনে এই কোম্পানিটি মধুবনী, সহরসা, মুজাফফরপুরের মতো শহর থেকে উড়ান শুরু করবে। পরিকল্পনায় ঘরোয়া উড়ানের পাশাপাশি নেপালের জন্য আন্তর্জাতিক উড়ানও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
৬ আগস্ট, ২০২৫ স্পিরিট এয়ার বিহারে তাদের বিমান পরিষেবা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, যার অধীনে রাজ্যের নতুন তৈরি হওয়া বিমানবন্দরগুলি থেকে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উড়ান শুরু করা হবে। এই ঘোষণাটি কেন্দ্র সরকারের রিজিওনাল কানেক্টিভিটি স্কিম ‘উড়ান’ এর অধীনে করা হয়েছে। কোম্পানিটি প্রথম পর্যায়ে বীরপুর, সহরসা, মধুবনীর মতো শহরগুলিকে দিল্লি, মুম্বাই এবং বারাণসীর সঙ্গে যুক্ত করবে। স্পিরিট এয়ার এই পরিকল্পনাকে বিহারে বিমান পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং আঞ্চলিক কর্মসংস্থানকে बढ़ावा দেওয়ার পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
কোন কোন শহর থেকে উড়ান শুরু হবে
স্পিরিট এয়ার যে শহরগুলি থেকে উড়ান শুরু করার পরিকল্পনা করেছে, তার মধ্যে রয়েছে বিহারের বীরপুর, সহরসা, মুঙ্গের, মধুবনী, মুজাফফরপুর, রক্সौल, বাল্মীকি নগর এবং বিহাটার মতো স্থান। এই সমস্ত বিমানবন্দর আঞ্চলিক স্তরে তৈরি করা হচ্ছে।
প্রথম পর্যায়ে এই বিমানবন্দরগুলিকে প্রধান শহরগুলির সঙ্গে যুক্ত করা হবে। বিশেষভাবে বারাণসী, দিল্লি, মুম্বাই এবং আহমেদাবাদের মতো বড় শহর থেকে সরাসরি বা কানেকটিং ফ্লাইট পাওয়া যাবে। এর ফলে এই অঞ্চলে পরিবহন, ব্যবসা এবং পর্যটন বাড়বে বলে আশা করা যায়।
বারাণসী ও ব্যাঙ্গালোর থেকে শুরু হবে বড় কানেকশন
স্পিরিট এয়ারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ে বারাণসীকে প্রধান হাব হিসেবে তৈরি করা হবে। এখান থেকে দিল্লি, মুম্বাই এবং আহমেদাবাদের সঙ্গে সংযোগ থাকবে। এর পরে ব্যাঙ্গালোরকে দ্বিতীয় হাব হিসেবে ব্যবহার করা হবে, যেখান থেকে হায়দ্রাবাদ এবং চেন্নাইয়ের মতো দক্ষিণ ভারতের শহরগুলিতে কানেক্টিভিটি দেওয়া হবে।
তৃতীয় পর্যায়ে বিহাটা বিমানবন্দর থেকে পাটনা, জামশেদপুর এবং বোকারোর উড়ান শুরু করা হবে। বিহাটা পাটনা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং রাজধানী অঞ্চলের জন্য একটি বিকল্প বিমানবন্দর হিসাবে তৈরি করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক উড়ানেরও প্রস্তুতি
স্পিরিট এয়ারের পরিকল্পনা শুধুমাত্র দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। কোম্পানিটি আন্তর্জাতিক কানেক্টিভিটিরও ঘোষণা করেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে নেপালের শহরগুলিকে যুক্ত করা হবে। এতে মুজাফফরপুর থেকে কাঠমান্ডু ও জনকপুর, বীরপুর থেকে বিরাটনগর ও রাজবিরাজ এবং বাল্মীকি নগর থেকে কাঠমান্ডু ও ভৈরহের উড়ানের পরিকল্পনা রয়েছে।
এছাড়াও, বিহাটা বিমানবন্দর থেকেও কাঠমান্ডুর জন্য সরাসরি উড়ান শুরু করা হবে। এটি নেপাল ও বিহারের মধ্যে পর্যটন, ব্যবসা এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানকে বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
উচ্চ-স্তরের বৈঠকে তৈরি হল পরিকল্পনা
এই পরিকল্পনাকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার জন্য স্পিরিট এয়ারের প্রোমোটার সুবোধ ভার্মা এবং বিহার সরকারের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব এস সিদ্ধান্তের মধ্যে মঙ্গলবার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। এতে উড়ান পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, বিমানবন্দর নির্মাণের অগ্রগতি এবং পার্টনার এয়ারলাইন্সের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বৈঠকে এই বিষয়টির উপর জোর দেওয়া হয়েছে যে উড়ান প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল ছোট শহরগুলিকে বিমান পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত করা এবং সাধারণ মানুষের জন্য ভ্রমণকে সহজ করা। এর পাশাপাশি স্থানীয় স্তরে কর্মসংস্থান এবং ব্যবসার নতুন সুযোগও এই উদ্যোগের মাধ্যমে তৈরি হবে।
ফ্লাইটে কোন বিমানগুলি অন্তর্ভুক্ত হবে
স্পিরিট এয়ার জানিয়েছে যে তারা তাদের পরিষেবার জন্য অত্যাধুনিক কিন্তু ছোট বিমান ব্যবহার করবে। তাদের বহরে Islander BN2T-4S-STOL এবং King Air 250 এর মতো বিমান অন্তর্ভুক্ত করা হবে। Islander বিমান কম জায়গায় উড়ান এবং অবতরণের সুবিধা দেয়, যা ছোট রানওয়ের জন্য উপযুক্ত।
অন্যদিকে King Air 250 একটি হাই পারফরম্যান্স প্লেন, যা চাপযুক্ত কেবিন, আরামদায়ক সিটিং এবং বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম। এই বিমান মেডিকেল ইমার্জেন্সি এবং বিজনেস ক্লাস যাত্রীদের জন্য একটি চমৎকার বিকল্প হতে পারে।
ছয়টি শহরে বিমানবন্দর উন্নয়নে ছাড়পত্র
বিহার সরকার ইতিমধ্যেই ছয়টি শহরে নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। ১৭ জুন মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে বিমান পরিবহন অধিদপ্তর এবং ভারতীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ (AAI) এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক (MOU) স্বাক্ষরিত হবে।
যে শহরগুলিতে বিমানবন্দর তৈরি করা হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে মধুবনী, বীরপুর (সুপौल), মুঙ্গের, বাল্মীকি নগর (বেতিয়া), মুজাফফরপুর এবং সহরসা। সরকার প্রতিটি বিমানবন্দরের জন্য ২৫ কোটি টাকা করে মোট ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।
রিজিওনাল কানেক্টিভিটির সঙ্গে যুক্ত হবেন সাধারণ মানুষ
স্পিরিট এয়ারের এই অপারেশনাল প্ল্যান কেন্দ্র সরকারের সেই পরিকল্পনার অংশ, যেখানে দেশের ছোট এবং পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলোকে এয়ার নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উড়ান স্কিমের মাধ্যমে এ পর্যন্ত সারাদেশে কয়েকশ রুটে উড়ান শুরু হয়েছে, যেখানে বিহারের এই নতুন সম্প্রসারণ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
কোম্পানিটি এও স্পষ্ট করেছে যে তাদের উদ্দেশ্য শুধু ব্যবসা নয়, আঞ্চলিক উন্নয়নে সহযোগিতা করাও। এর জন্য তারা স্থানীয় যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে গ্রাউন্ড স্টাফ, টেকনিক্যাল সহযোগী এবং এয়ার অপারেশনে কর্মসংস্থান দেবে।