অপারেশন সিন্দুরে জইশ বিধ্বস্ত: গোপন তহবিলের জন্য মাসুদের আবেদন

অপারেশন সিন্দুরে জইশ বিধ্বস্ত: গোপন তহবিলের জন্য মাসুদের আবেদন

অপারেশন সিন্দুরে জইশ-ই-মহম্মদের বাহাওয়ালপুর স্থিত সদর দফতর ধ্বংস হয়ে গেছে। মাসুদ আজহার এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় গোপন ফান্ডের মাধ্যমে এটি পুনরায় তৈরি করার আবেদন করছে।

পাকিস্তান নিউজ: পাকিস্তানে অবস্থিত জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ বর্তমানে আর্থিক সংকটে ভুগছে। ভারত কর্তৃক পরিচালিত কঠোর সামরিক অভিযান 'অপারেশন সিন্দুর'-এ এই সংগঠনের সদর দফতর সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এই হামলার পর থেকে জইশের নেটওয়ার্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সংগঠনটি এখন তাদের সদর দফতরকে পুনরায় তৈরি করার জন্য তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করছে।

সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে গোপন দান চাওয়া হচ্ছে

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জইশ-ই-মহম্মদ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট শেয়ার করে তাদের সমর্থকদের কাছে গোপন দানের আবেদন করেছে। সংগঠনটি বাহাওয়ালপুরে অবস্থিত তাদের সদর দফতর 'জামিয়া মসজিদ সুবহান আল্লাহ'র সংস্কারের জন্য অর্থ চেয়েছে। এই পোস্টে লেখা হয়েছে যে মসজিদের পুনর্নির্মাণের জন্য সকল সমর্থকদের একসঙ্গে কাজ করা উচিত এবং এই মহৎ কাজে অবদান রাখা উচিত।

বাহাওয়ালপুরে জইশের সদর দফতর

জইশ-ই-মহম্মদের সদর দফতর পাকিস্তানের দক্ষিণ পাঞ্জাব প্রদেশের বাহাওয়ালপুর নামক এলাকায় অবস্থিত। এই স্থানটি আবাসিক এলাকা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার ভেতরে জঙ্গলে অবস্থিত। জামিয়া মসজিদ সুবহান আল্লাহ নামক চত্বরে জঙ্গি প্রশিক্ষণ, কৌশল তৈরি এবং অস্ত্রের মজুত করা হত। এখানেই মাসুদ আজহার এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও থাকতেন।

ভারতের পাল্টা জবাব: অপারেশন সিন্দুর

২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যুর পর ভারত সরকার কড়া পদক্ষেপ নেয়। পাল্টা জবাবে ৬ ও ৭ মে রাতে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী পাকিস্তান ও গোলাম কাশ্মীরে অবস্থিত নয়টি জঙ্গি ঘাঁটিতে আকাশ ও স্থলপথে হামলা চালায়। এই অপারেশনকে 'অপারেশন সিন্দুর' নাম দেওয়া হয়। এতে জইশ-ই-মহম্মদের সদর দফতরও নিশানায় ছিল। এই অভিযানে মাসুদ আজহারের অনেক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের মৃত্যু হয়েছে।

ধ্বংস হয়েছে জঙ্গি নেটওয়ার্ক, তহবিল বন্ধ

অপারেশন সিন্দুরের পর জইশ-ই-মহম্মদের ফান্ডিংয়ের ওপর গুরুতর প্রভাব পড়েছে। আন্তর্জাতিক স্তরেও জঙ্গিদের কাছে আসা আর্থিক সাহায্যের ওপর নজর রাখা হচ্ছে। FATF (Financial Action Task Force)-এর কঠোরতার কারণে পাকিস্তানকে বিশ্ব মঞ্চে জবাবদিহি করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে জইশের মতো সংগঠনগুলোকে গোপন ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে কাজ চালাতে হচ্ছে। মসজিদের নামে চাঁদা তোলাও এরই অংশ।

জইশের জঙ্গি ইতিহাস

জইশ-ই-মহম্মদের নাম ভারতে অনেক বড় সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িত। ১৩ ডিসেম্বর ২০০১ সালে সংসদ ভবনে হামলা, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালের পুলওয়ামা অ্যাটাক এবং ২৬/১১ মুম্বাই হামলার পেছনে জইশের ভূমিকা ছিল। মাসুদ আজহার এই সমস্ত হামলার পেছনে প্রধান ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে বিবেচিত।

কীভাবে বেঁচে গেল মাসুদ আজহার

১৯৯৪ সালে মাসুদ আজহারকে ভারত গ্রেফতার করেছিল, কিন্তু ১৯৯৯ সালে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট IC-814 অপহরণের পর তাকে মুক্তি দিতে হয়। মুক্তির পর সে পাকিস্তানে জইশ-ই-মহম্মদের ভিত্তি স্থাপন করে এবং অনেক সন্ত্রাসী হামলা চালায়। আজ সেই মাসুদ আজহার তার সংগঠনের সদর দফতরকে পুনরায় তৈরি করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় সাহায্যের আবেদন করছে।

Leave a comment