ভক্ত সমাগমে উৎসবের আবহ
বৃহস্পতিবার হুগলির মাটিতে শুভ সূচনা হল শ্রাবণী মেলার। আগামী ১৮ আগস্ট পর্যন্ত চলবে এই বার্ষিক পুণ্যতীর্থ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ ভক্ত আসেন তারকেশ্বর মন্দিরে, শ্রাবণ মাসে শিবের মাথায় পবিত্র জল ঢালতে।
প্রতিবছরের মতো এবারও ব্যাপক ভিড় সামাল দিতে আগেভাগেই তৈরি প্রশাসন।
ভক্তদের পায়ে চলা পথের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা | চিরাচরিত রীতি মেনে বৈদ্যবাটির নিমাইতীর্থ ঘাট থেকে ৪০ কিমি পথ অতিক্রম করে ভক্তরা পৌঁছন তারকেশ্বরে। ভক্তদের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসন তৈরি করেছে বিস্তারিত নির্দেশনাপত্র, যাতে রয়েছে রুট ম্যাপ থেকে শুরু করে বিশ্রাম ও সহায়তা কেন্দ্রের অবস্থান।
এই তথ্য ডিজিটালি পাওয়া যাবে নতুন চালু হওয়া ওয়েবসাইটে।
ওয়েবসাইটে মিলছে সমস্ত ভৌগলিক সহায়তা | কোথায় রয়েছে শৌচালয়, কোথায় পানীয় জলের ব্যবস্থা, কোথায় আছে মেডিক্যাল ক্যাম্প কিংবা পুলিশ ক্যাম্প—সবটাই হাতের মুঠোয়। এমনকি আবর্জনা ফেলার জায়গার ঠিকানাও জানিয়ে দিচ্ছে ওয়েবসাইট।
এটি প্রথমবার, যেখানে এত বিস্তারিতভাবে তথ্য ডিজিটাল মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে।
ভাণ্ডারা চালাতে চাইলে অনলাইন আবেদনই যথেষ্ট | প্রতি বছরের মতো এবারও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভাণ্ডারার আয়োজন করছে। তবে এবার আর ছুটতে হচ্ছে না কারও কাছে—ওয়েবসাইট থেকেই সহজেই আবেদন করা যাচ্ছে এই পুণ্য কাজে অংশগ্রহণের জন্য।
ভক্তসেবার ইচ্ছুক সংগঠনগুলোর জন্য এটি বড় সুবিধা।
তীর্থযাত্রীদের জন্য পর্যটন তথ্যও এক ক্লিকে | শুধু তারকেশ্বর নয়—তার আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলির তথ্যও রয়েছে ওয়েবসাইটে। ব্যান্ডেল চার্চ, হংসেশ্বরী মন্দির, ইমামবাড়া থেকে শুরু করে জয়রামবাটি ও কামারপুকুর—সবকিছুর ছবিসহ বর্ণনা পাওয়া যাবে।
ভক্তদের আধ্যাত্মিক সফরের পাশাপাশি পর্যটন অভিজ্ঞতাও হয়ে উঠবে সমৃদ্ধ।
ভাষার বৈচিত্র্যে ডিজিটাল ভক্তিসেবা | ওয়েবসাইটটি তিনটি ভাষায়—বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজিতে উপলব্ধ। ফলে রাজ্য ও রাজ্যের বাইরের ভক্তদের জন্য যোগাযোগ ও নির্দেশনা সহজ হয়েছে বহুগুণ।
ভাষা-নির্বিশেষে সকল পুণ্যার্থীর কাছে পৌঁছানোর প্রয়াস সফল।
‘ভোলে বাবা, পার করেগা!’—শুরু হয়ে গিয়েছে পায়ে হাঁটা যাত্রা | বৃহস্পতিবার থেকেই নিমাইতীর্থ ঘাটে শুরু হয়েছে জল তোলার ধুম। শিবের মাথায় জল ঢালার উদ্দেশ্যে হাতে পিতলের কলসি, কাঁধে বাঁক আর মুখে ভক্তির উচ্ছ্বাস—“ভোলে বাবা, পার করেগা”—এই ধ্বনিতে মুখরিত বৈদ্যবাটি।
শ্রাবণী মেলার আবেগে গা ভাসাচ্ছেন হাজার হাজার তীর্থযাত্রী।
নিরাপত্তায় প্রশাসনের কড়া নজরদারি | চন্দননগরের মহকুমা শাসক বিষ্ণু দাস জানিয়েছেন, সমস্ত পথ, ঘাট, বিশ্রামশিবিরে নজরদারির জন্য মোতায়েন করা হয়েছে বিশেষ পুলিশ বাহিনী। প্রতিটি পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে মনিটরিং ক্যাম্প।
সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ উৎসব নিশ্চিত করতেই সর্বোচ্চ সতর্কতা।
রাজনৈতিক স্তরেও গুরুত্ব বাড়াচ্ছে শ্রাবণী মেলা | মন্ত্রী বেচারাম মান্না জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে শ্রাবণী মেলাকে জাতীয় স্তরে পরিচিতি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আগের সমস্যা আর অব্যবস্থার দিন শেষ, বর্তমানে বৈদ্যবাটি-তারকেশ্বর সড়কের আমূল সংস্কার হয়েছে।