শুভেন্দু অধিকারীর আবেদনে পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধনের দাবি, উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি

শুভেন্দু অধিকারীর আবেদনে পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধনের দাবি, উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি

বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধন সংক্রান্ত বিশেষ সমীক্ষা (SIR)-কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ডামাডোল এবার বাংলাতেও পৌঁছেছে। যেখানে বিহারে এই প্রক্রিয়া নিয়ে বিরোধী দলগুলি প্রশ্ন তুলেছে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি বিধায়ক এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই পদক্ষেপের জোরালো সমর্থন করেছেন। অধিকারী বলেছেন, এটি নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা বাড়ানোর একটি উদ্যোগ, যা পশ্চিমবঙ্গ সহ অন্যান্য রাজ্যেও অবিলম্বে চালু করা উচিত।

বাংলায় ভুয়া ভোটার নিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর আক্রমণ

বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন যে, পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় বিপুল সংখ্যক অবৈধ অভিবাসী এবং রোহিঙ্গা ভুয়া নথিপত্রের মাধ্যমে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে সফল হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, এরা জাল আধার কার্ড এবং জন্ম প্রমাণপত্রের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিক হয়ে ভোট দিচ্ছে, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ।

শুভেন্দু নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছেন যে, পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা থেকেও ভুয়া ভোটারদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিতে বিহারের মতোই বিশেষ সমীক্ষা চালানো হোক। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, "ভারতের ভোটার তালিকায় কেবল ভারতীয় নাগরিকদের নাম থাকা উচিত, যাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বজায় থাকে।" অধিকারীর এই মন্তব্যের পর পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে এবং সবার দৃষ্টি এখন নির্বাচন কমিশনের পরবর্তী সিদ্ধান্তের দিকে।

বিহারের SIR প্রক্রিয়া নিয়ে বিরোধীদের হৈচৈ

বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন রাজ্যে ভোটার তালিকা সংশোধন করার জন্য বিশেষ সমীক্ষা (SIR) শুরু করেছে। এই প্রক্রিয়ার অধীনে কমিশনের লক্ষ্য হল ভুয়া এবং অযোগ্য নামগুলি বাদ দেওয়া এবং সকল যোগ্য নাগরিককে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে তাদের ভোটাধিকার প্রদান করা। কমিশনের মতে, এই পদক্ষেপটি নির্বাচনকে আরও স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং নির্ভরযোগ্য করার দিকে নেওয়া হয়েছে।

তবে এই অভিযানের ওপর INDIA জোটের দলগুলি তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, SIR-এর নামে গরিব, দলিত এবং বঞ্চিত শ্রেণির মানুষদের ভোট দেওয়া থেকে বিরত রাখা হচ্ছে। তারা এটিকে জনগণের ভোটাধিকারের উপর আক্রমণ হিসেবে দেখছেন। যদিও নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট করেছে যে, এই প্রক্রিয়া শুধুমাত্র বিহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি আসাম, কেরালা, পুদুচেরি, তামিলনাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গ-এর মতো রাজ্যগুলিতেও কার্যকর করা হবে, যেখানে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।

গণতন্ত্রের পবিত্রতা এবং স্বচ্ছতার উপর জোর

যেখানে বিরোধীরা এটিকে জনমতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা হিসেবে দেখছে, সেখানে বিজেপি এবং শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতারা এটিকে গণতন্ত্রকে শুদ্ধ ও স্বচ্ছ করার উপায় হিসেবে বিবেচনা করছেন। অধিকারীর মতে, ভোটার তালিকায় ভুয়া নামের উপস্থিতি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে, এবং এই কারণেই SIR-এর মতো প্রক্রিয়া জরুরি।

এখন প্রশ্ন হল, নির্বাচন কমিশন পশ্চিমবঙ্গে কবে এই প্রক্রিয়া শুরু করে এবং বিরোধীদের আপত্তির পরেও এটি কতদূর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আপাতত, এই ইস্যুতে বাংলা এবং বিহার উভয় জায়গাতেই নির্বাচনের পরিবেশ ইতিমধ্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

Leave a comment