ভারতীয় নৌবাহিনীতে যুক্ত হল আইএনএস উদয়গিরি ও হিমগিরি: সমুদ্র সুরক্ষায় নতুন দিগন্ত

ভারতীয় নৌবাহিনীতে যুক্ত হল আইএনএস উদয়গিরি ও হিমগিরি: সমুদ্র সুরক্ষায় নতুন দিগন্ত

ভারতীয় নৌবাহিনী ২৬শে অগাস্ট আইএনএস উদয়গিরি এবং হিমগিরি ফ্রিগেট কমিশন করবে। এই অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজগুলি ভারত মহাসাগরের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে, যা স্বদেশী ডিজাইন এবং মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগের প্রদর্শণ করবে।

Indian Navy: ভারতীয় নৌবাহিনী ২০২৫ সালের ২৬শে অগাস্ট দুটি অত্যাধুনিক স্টিলথ ফ্রিগেট আইএনএস উদয়গিরি এবং আইএনএস হিমগিরি কমিশন করতে চলেছে। এই পদক্ষেপ নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণ এবং ভারতের স্বনির্ভর প্রতিরক্ষা শিল্পের ক্ষমতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এই যুদ্ধজাহাজগুলি সম্পূর্ণরূপে ভারতে নির্মিত এবং এটি দেশের সমুদ্র নিরাপত্তা জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

উদয়গিরি এবং হিমগিরি: নৌবাহিনীর নতুন শক্তি

আইএনএস উদয়গিরি এবং আইএনএস হিমগিরি প্রোজেক্ট 17A-এর স্টিলথ ফ্রিগেট। এইগুলি শিвалиক-শ্রেণির ফ্রিগেটগুলির উন্নত সংস্করণ এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর ওয়ারশিপ ডিজাইন ব্যুরো (WDB) দ্বারা ডিজাইন করা হয়েছে। বিশেষ বিষয় হল, আইএনএস উদয়গিরি এই ব্যুরো দ্বারা ডিজাইন করা ১০০তম যুদ্ধজাহাজ।

আইএনএস উদয়গিরি মুম্বাইয়ের মাজগাঁও ডক শিপবিল্ডার্স লিমিটেড (MDL) নির্মাণ করেছে এবং এটি ১লা জুলাই ২০২৫ তারিখে নৌবাহিনীকে হস্তান্তর করা হয়েছে। আইএনএস হিমগিরি কলকাতার গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স (GRSE) নির্মাণ করেছে। প্রোজেক্ট 17A-এর অধীনে মোট সাতটি ফ্রিগেট তৈরি করা হচ্ছে, যার মধ্যে চারটি MDL এবং তিনটি GRSE দ্বারা নির্মিত। প্রথম যুদ্ধজাহাজ, আইএনএস নীলগিরি, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে কমিশন করা হয়েছে।

যুদ্ধজাহাজগুলির বৈশিষ্ট্য

উদয়গিরি এবং হিমগিরি অনেক দিক থেকে তাদের শিвалиক-শ্রেণির পূর্বসূরীদের চেয়ে বেশি উন্নত।

ওজন এবং ডিজাইন: এই যুদ্ধজাহাজগুলির ওজন প্রায় ৬,৭০০ টন, যা শিвалиক-শ্রেণির থেকে ৫% বেশি। এর স্টিলথ ডিজাইন তাদের শত্রুর রাডার থেকে বাঁচায়।

প্রেষণ প্রণালী: এই জাহাজগুলি CODOG (Combined Diesel and Gas) প্রণালী দ্বারা চালিত, যেখানে ডিজেল ইঞ্জিন এবং গ্যাস টারবাইন মিলিতভাবে প্রপেলার চালায়। এটি সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (IPMS) এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

অস্ত্রশস্ত্র:

  • সুপারসনিক ভূমি থেকে ভূমি ক্ষেপণাস্ত্র।
  • মাঝারি পাল্লার ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র।
  • ৭৬ মিমি মাঝারি পাল্লার কামান।
  • ৩০ মিমি এবং ১২.৭ মিমি ক্লোজ-ইন ওয়েপন সিস্টেম।
  • সাবমেরিন বিধ্বংসী অস্ত্র।

এই যুদ্ধজাহাজগুলির ভূমি, আকাশ এবং সাবমেরিন বিধ্বংসী যুদ্ধের বহুমুখী ক্ষমতা রয়েছে।

কঠিন সামুদ্রিক পরীক্ষা

কমিশন করার আগে দুটি যুদ্ধজাহাজকেই কঠোর সামুদ্রিক পরীক্ষা দিতে হয়েছে। এই পরীক্ষাগুলিতে জাহাজের কাঠামো, মেশিনারি, অগ্নিনির্বাপণ এবং ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ, নেভিগেশন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষাগুলিতে এটি নিশ্চিত করা হয়েছে যে এই যুদ্ধজাহাজগুলি তাৎক্ষণিক পরিচালনার জন্য প্রস্তুত।

মেক ইন ইন্ডিয়া এবং আত্মনির্ভর ভারত

উদয়গিরি এবং হিমগিরির নির্মাণ মেক ইন ইন্ডিয়া এবং আত্মনির্ভর ভারতের একটি বড় সাফল্য। এই যুদ্ধজাহাজগুলির নির্মাণে ২০০টির বেশি মাইক্রো, স্মল এবং মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ (MSME) অবদান রেখেছে। এই প্রকল্পে প্রায় ৪,০০০ প্রত্যক্ষ এবং ১০,০০০ পরোক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। এই যুদ্ধজাহাজগুলি সম্পূর্ণরূপে স্বদেশী, যা ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষমতাকে বিশ্ব মঞ্চে প্রদর্শন করে।

দুটি শিপইয়ার্ডের মিলিত ক্ষমতা

আইএনএস উদয়গিরি এবং আইএনএস হিমগিরির নির্মাণ দুটি আলাদা শিপইয়ার্ড MDL এবং GRSE দ্বারা করা হয়েছে। এটি ভারতের সেই ক্ষমতাকে দেখায় যে দেশ একসাথে অনেক জায়গায় জটিল যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ করতে পারে। এটি দেশের প্রতিরক্ষা শিল্পের দৃঢ়তা এবং বিস্তারের প্রতীক।

২০২৫: নৌবাহিনীর জন্য ঐতিহাসিক বছর

২০২৫ ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য একটি ঐতিহাসিক বছর। এই বছর অনেক স্বদেশী প্ল্যাটফর্ম কমিশন করা হয়েছে, যেমন:

  • আইএনএস সুরাট: গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার।
  • আইএনএস নীলগিরি: স্টিলথ ফ্রিগেট।
  • আইএনএস वागशीर: पारंपरिक पनडुब्बी।
  • আইএনএস অর্নালা: সাবমেরিন বিধ্বংসী অগভীর জলযান।
  • আইএনএস নিস্তার: ডাইভিং সাপোর্ট পোত।

এছাড়াও, সম্প্রতি রাশিয়াতে কমিশন করা আইএনএস তমাল ৬-৯ অগাস্ট মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কায় থেমেছিল, যা ভারতের সামুদ্রিক কূটনীতিকে दर्शाता है।

रणनीतिक महत्व

আইএনএস উদয়গিরি এবং আইএনএস হিমগিরির কমিশন ভারতের সমুদ্র শক্তি বৃদ্ধি করবে, বিশেষ করে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, যেখানে চীনের নৌবাহিনীর কার্যকলাপ বাড়ছে। এই যুদ্ধজাহাজগুলি গভীর সমুদ্রে (ব্লু ওয়াটার) অপারেশনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং এটি पारंपरिक ও অপ্রচলিত বিপদগুলির মোকাবিলা করতে সক্ষম। এটি ভারতের ৭,৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলরেখা এবং ২.০২ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটারের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (EEZ) এর সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।

Leave a comment