সুকান্ত মজুমদারের স্বীকারোক্তি ২০২৬ ভোটের আগে বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতার খোলামেলা মন্তব্য

সুকান্ত মজুমদারের স্বীকারোক্তি ২০২৬ ভোটের আগে বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতার খোলামেলা মন্তব্য

বুথে বুথে সংগঠন তৈরিতে বিজেপির জোর

রাজ্যের রাজনীতির ময়দানে বিজেপি এবার সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটের আগে তাদের মূল টার্গেট রাজ্যের ৮১ হাজার বুথে শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলা। দলীয় সূত্রে খবর, এর মধ্যে ইতিমধ্যেই প্রায় ৬৫ হাজার বুথে কমিটি গঠন সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি কমিটিতে আপাতত ১ জন সভাপতি ও ২ জন সহযোগী সদস্য রাখা হয়েছে। তবে ৫০ হাজার বুথ কমিটির যাচাই পর্ব শেষ হলেও বাকি ১৫ হাজার বুথে এখনও ভেরিফিকেশন চলছে।

সংখ্যালঘু বুথেই কি দুর্বলতা?

সংগঠনের অভাব নিয়ে যখন নানা জল্পনা, তখন প্রশ্ন উঠছে—কোথায় বাদ পড়ছে বিজেপির বুথ কমিটি? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মূল সমস্যা সংখ্যালঘু ভোটার-প্রধান বুথগুলোতেই। যদিও রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের দাবি, কিছু সন্ত্রাস কবলিত এলাকায় কাজ করা যাচ্ছে না, তবে সংখ্যালঘু বুথে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চালু রয়েছে।

শুধু কমিটি নয়, দরকার মজবুত পারফরম্যান্স

বুথ কমিটি গঠন হলেই কাজ শেষ নয়—এ কথা স্বীকার করছে রাজ্য বিজেপিও। দলের মতে, শুধু কাঠামো তৈরি নয়, প্রয়োজন সাংগঠনিক শক্তি ও মাঠ পর্যায়ে ভাল পারফরম্যান্স। তাই গঠিত কমিটিগুলিকে কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে এবং নিচু স্তরের কর্মীদের চাঙ্গা করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

প্রশিক্ষণ শিবিরে সদস্যদের প্রস্তুতি

দলীয় সূত্রের খবর, আগামী ১৬ থেকে ২২ অগাস্ট পর্যন্ত জেলা পর্যায়ে বুথ কমিটি সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। একই সময়ে বাকি ১৫ হাজার বুথের ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়াও শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রশিক্ষণ শিবিরে সদস্যদের ভোটকেন্দ্রভিত্তিক পরিকল্পনা, ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগের কৌশল ও বিরোধী দলের মোকাবিলার স্ট্র্যাটেজি শেখানো হবে।

কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ধমক খেয়েছে রাজ্য বিজেপি

এতসব পরিকল্পনা সত্ত্বেও বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে সমালোচনার মুখে পড়েছে বঙ্গ বিজেপি। সূত্র জানাচ্ছে, বারবার সুযোগ পাওয়ার পরও বুথ স্তরের কাজে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি না হওয়ায় রাজ্য নেতৃত্বকে ধমক দিয়েছেন দিল্লির শীর্ষ নেতৃত্ব। বিশেষত, বুথ সংগঠনের অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ স্পষ্ট।

স্বীকারোক্তির সুরে সুকান্ত মজুমদার

দলীয় বিতর্কের মাঝেই সামনে এল প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের বিস্ফোরক মন্তব্য। তিনি সরাসরি স্বীকার করেছেন, রাজ্যের সব জায়গায় বুথ কমিটি গঠন সম্ভব নয়। কিছু বুথ রয়েছে যা সংখ্যালঘু ভোটারদের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল—সেইসব জায়গায় বিজেপি কার্যকর সংগঠন দাঁড় করাতে পারছে না।

সংখ্যালঘু বুথে সীমাবদ্ধতার কারণ

সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য অনুযায়ী, এই সীমাবদ্ধতার মূল কারণ হল সংগঠনের অনুপস্থিতি ও ভোটার সংযোগের ঘাটতি। অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা সমস্যার কারণে বিজেপি ওইসব বুথে সক্রিয় হতে পারছে না। তবে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বাকিদের ক্ষেত্রে বুথ সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করাই এই মুহূর্তে একমাত্র লক্ষ্য।

লক্ষ্য—নিচু স্তরের কর্মীদের চাঙ্গা করা

প্রাক্তন সভাপতির মতে, শুধু সংখ্যায় বুথ কমিটি বাড়ালেই হবে না, সেই সংগঠনকে জমাট ও প্রাণবন্ত করাই জরুরি। এজন্য নিচু স্তরের কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ, প্রশিক্ষণ ও উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। ভোটের আগে প্রতিটি বুথে কর্মীদের সক্রিয় উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চাইছে বিজেপি।

২০২৬ ভোটের আগে চূড়ান্ত প্রস্তুতি

রাজনৈতিক মহলে এখন নজর—২০২৬-এর আগে বিজেপি ঠিক কতগুলি বুথ সংগঠন গড়ে তুলতে পারবে। বিশেষত, সংখ্যালঘু ভোটার-প্রধান বুথে সাফল্য আসবে কিনা, তা নিয়েই চলছে আলোচনা। সুকান্ত মজুমদারের এই প্রকাশ্য স্বীকারোক্তি নিঃসন্দেহে দলীয় কৌশল ও আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।বিজেপি ২০২৬-এর আগে বুথে বুথে শক্তি বাড়াতে মরিয়া, কিন্তু সংখ্যালঘু ভোটার-প্রধান এলাকায় সাংগঠনিক ঘাটতি স্বীকার করলেন প্রাক্তন সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। এখন দেখার, প্রশিক্ষণ ও ভেরিফিকেশন শেষ করে ভোটের আগেই কতটা শক্তিশালী হতে পারে বঙ্গ বিজেপির বুথ সংগঠন।

Leave a comment