সাত দিনের মধ্যে অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে— স্পষ্ট নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিল, স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) যদি এই নির্দেশ মানতে ব্যর্থ হয়, তবে কঠোর ফল ভুগতে হবে। এই পর্যবেক্ষণ নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্কে বড় গুরুত্ব বহন করছে।
নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কড়া নজর শীর্ষ আদালতের
আদালত জানিয়েছে, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপের উপর নজর রাখছে সুপ্রিম কোর্ট। সামান্য এদিক-ওদিক হলেও তার খেসারত গুনতে হবে কমিশনকে। বিচারপতিরা সাফ ভাষায় বলেছেন, অযোগ্যদের কোনওভাবেই পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়া যাবে না। যদি এমনটা ঘটে, তবে কঠিন শাস্তি এড়ানো যাবে না।
সিবিআই তদন্তের হুঁশিয়ারিও দিল বেঞ্চ
বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের মন্তব্যে স্পষ্ট সতর্কবার্তা— যদি আবারও অযোগ্যদের নিয়োগের চেষ্টা হয়, প্রয়োজনে ফের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হবে। আদালতের মতে, এতদিন ধরে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তা নস্যাৎ করার সুযোগ কমিশনকে দেওয়া হবে না। ফলে এসএসসি-র উপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে।
২০১৬ প্যানেল বাতিল, নতুন পরীক্ষায় নতুন বিতর্ক
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালের বিতর্কিত প্যানেল বাতিল করা হয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে পরীক্ষা নিচ্ছে কমিশন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, সেই পরীক্ষাতেও যোগ্যদের পাশাপাশি অযোগ্য প্রার্থীদের বসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এই তথ্য আদালতের নজরে আসতেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বেঞ্চ।
একজনও অযোগ্য বসতে পারবে না” স্পষ্ট বার্তা
আদালতের সাফ নির্দেশ— একজনও অযোগ্য প্রার্থীকে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া চলবে না। নচেৎ কঠোর ফলাফলের মুখোমুখি হতে হবে কমিশনকে। বিচারপতিরা বলেছেন, এত যোগ্য প্রার্থীর ভবিষ্যৎ নষ্ট করা হয়েছে। তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন করছে। এর জন্য রাজ্য সরকার, বোর্ড এবং কমিশন— সকলে দায়ী।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কড়া প্রশ্ন
আদালতে এসএসসি-র পক্ষের আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে উদ্দেশ করে বিচারপতি সঞ্জয় কুমার মন্তব্য করেন, “এত কিছুর পরেও আপনারা কি আবার নিজেদের ব্লু আইড বয়দের অন্যায়ভাবে সুযোগ করে দিচ্ছেন? জনগণ আমাদের দিকেও আঙুল তুলছে। এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না।” আদালতের এই মন্তব্যে স্পষ্ট— বিচারপতিরা আর কোনওরকম অনিয়ম বরদাস্ত করবেন না।
পিছোচ্ছে না পরীক্ষা, সেপ্টেম্বরেই হবে
যদিও আদালতের অবস্থান পরিষ্কার— পরীক্ষা কোনওভাবেই পিছোচ্ছে না। বিচারপতি জানান, “পরীক্ষা পিছোনো আমাদের উদ্দেশ্য নয়। নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা হবে।” অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে পরীক্ষার দিনক্ষণ অটল থাকছে। তবে তার আগে অযোগ্যদের নাম বাদ দিতে বাধ্য থাকবে কমিশন।
প্রার্থীদের আশা ও আদালতের কড়া নজরদারি
যতদিন যাচ্ছে, ততই যোগ্য প্রার্থীরা আশা করছেন ন্যায় বিচার পাবেন। আদালতের কড়া মনোভাব তাঁদের লড়াইকে শক্তি দিচ্ছে। দীর্ঘ আন্দোলন, দফায় দফায় বিক্ষোভের পর শীর্ষ আদালতের এই পদক্ষেপ তাঁদের কাছে বড় জয়ের ইঙ্গিত। একই সঙ্গে এসএসসি-র উপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে যাতে আর কোনও অনিয়ম না ঘটে।
স্বচ্ছতার দাবিতে কঠোর আদালত
মোটের উপর, সুপ্রিম কোর্টের বার্তা পরিষ্কার— নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনও ধোঁকাবাজি চলবে না। যোগ্য প্রার্থীরা যাতে তাঁদের অধিকার পান, তা নিশ্চিত করতেই এই কড়া নির্দেশ। ফলে আগামী সাত দিনের মধ্যে কমিশনকে তালিকা প্রকাশ করতেই হবে। না হলে আরও বড় বিপদের মুখোমুখি হতে হবে রাজ্য সরকার ও এসএসসি-কে।