গুজরাতের সুরাট জেলার ভারাছা এলাকায় পুলিশ একটি বড় অনলাইন জুয়ার চক্রের পর্দা ফাঁস করেছে। সুরাট স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ (SOG) মোটা ভারাছাতে অবস্থিত "মেরিডিয়ান বিজনেস সেন্টার"-এ "সানরাইজ ডেভেলপার্স" নামক একটি নির্মাণ সংস্থার অফিসে অভিযান চালায়। এই অভিযানে ৯৬৩.৩৭ কোটি টাকার লেনদেন জড়িত একটি সুসংগঠিত চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা অবৈধ অনলাইন ডাব্বা ট্রেডিং এবং জুয়ায় লিপ্ত ছিল। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১০ লক্ষ টাকা নগদ, বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন, কম্পিউটার এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি জব্দ করেছে।
৮ জন অভিযুক্ত পুলিশ হেফাজতে, মূল চক্রীও গ্রেফতার
SOG-এর অভিযানে এই জুয়ার নেটওয়ার্কের ৮ জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের মতে, এই চক্রের মূল হোতা হলেন নন্দলাল ওরফে নন্দো গেভারিয়া এবং তাঁর আত্মীয় বিশাল গেভারিয়া। অভিযুক্তরা উচ্চ মুনাফা এবং করমুক্ত উপার্জনের লোভ দেখিয়ে কয়েকশ বিনিয়োগকারীকে তাদের জালে ফাঁসিয়ে কোটি কোটি টাকার প্রতারণা করেছে।
বিদেশি ওয়েবসাইটগুলির মাধ্যমে জুয়ার কারবার চলত
তদন্তে জানা গেছে, অভিযুক্তরা Betfair.com, Nexonex.com, Pavenec, এবং English999-এর মতো নিষিদ্ধ ওয়েবসাইট ও অ্যাপ ব্যবহার করত। এই প্ল্যাটফর্মগুলির মাধ্যমে ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিস, ক্যাসিনো এবং অন্যান্য খেলার উপর অনলাইনে বাজি ধরা হতো। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এদের বেশিরভাগ ওয়েবসাইটের সার্ভার বিদেশে অবস্থিত, যার ফলে তাদের ট্র্যাক করা এবং প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নেওয়া তদন্তকারী সংস্থাগুলির জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
প্রমাণ লোপাটের কৌশলও সামনে এসেছে
পুলিশের তদন্তে আরও জানা গেছে, অভিযুক্তরা প্রমাণ নষ্ট করার জন্য পেপার কাটিং মেশিন ব্যবহার করছিল। তবে SOG-এর তৎপরতায় তার আগেই লক্ষাধিক নগদ টাকা এবং প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক প্রমাণ জব্দ করা হয়েছে। বর্তমানে জব্দ করা ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য ডিভাইসের ফরেনসিক তদন্ত চলছে।
সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি
পুলিশের মতে, এই চক্রটি কেবল সাধারণ নাগরিকদের প্রতারিত করেনি, বরং সরকারের কোটি কোটি টাকার কর ক্ষতির জন্যও দায়ী। এই সমস্ত লেনদেন কর ব্যবস্থার বাইরে রাখা হয়েছিল, যার ফলে এই অপরাধ কেবল জুয়া নয়, অর্থনৈতিক অপরাধের শ্রেণীতেও পড়ে।
নেটওয়ার্ক দেশজুড়ে বিস্তৃত
পুলিশ জানিয়েছে, এই চক্রটি কেবল সুরাটেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এর নেটওয়ার্ক সারা দেশেই বিস্তৃত ছিল। তদন্তকারী সংস্থাগুলি এখন এই পুরো নেটওয়ার্কের জাল উন্মোচনে ব্যস্ত এবং যারা এতে বিনিয়োগ করেছে বা লাভবান হয়েছে, তাদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
সুরাটের এই ঘটনাটি আরও একবার দেখায় যে কীভাবে প্রযুক্তির আড়ালে সংগঠিতভাবে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। একটি নির্মাণ অফিসের আড়ালে কোটি কোটি টাকার জুয়ার কারবার পরিচালনা করা কেবল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর প্রশ্ন তোলে না, বরং এটি প্রমাণ করে যে সাইবার এবং অর্থনৈতিক অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি।