ভোটের আগে বিজেপির বড় বার্তা
এসআইআর নিয়ে বিজেপির অবস্থান একেবারেই পরিষ্কার। ‘নো এসআইআর, নো ইলেকশন’—এই স্লোগানেই গর্জে উঠেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলার ভোটার তালিকা থেকে বেনো জল দূর করতে হলে এসআইআর অনিবার্য। শনিবার সল্টলেকের বিজেপি কার্যালয়ে বুথস্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে শুভেন্দু এ কথাই মনে করিয়ে দেন। তাঁর বক্তব্য, এটাই শেষ সুযোগ, আর এই সুযোগ কাজে লাগাতে না পারলে আসন্ন নির্বাচনে বিজেপি ক্ষতির মুখে পড়বে।
কমিশনের নীরবতা, রাজনীতির ঝড়
বাংলায় এসআইআর ঘোষণা নিয়ে এখনও মুখ খোলেনি নির্বাচন কমিশন। তবে বুথ বৃদ্ধি, বিএলও নিয়োগ, নতুন ইআরও-এইআরও নিয়োগ—সব মিলিয়ে প্রস্তুতির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বিজেপি মনে করছে, এই সবকিছু আসলে এসআইআর-এর পথ প্রশস্ত করছে। আর সেই কারণেই রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না। তাদের সরল বার্তা, যেভাবেই হোক বাংলায় এসআইআর কার্যকর করতে হবে, নইলে ভোটের মাঠে সমান লড়াই সম্ভব নয়।
তৃণমূল বনাম বিজেপি: মুখোমুখি সংঘাত
অন্যদিকে তৃণমূলের অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, বাংলায় যদি এসআইআর চাপিয়ে দেওয়া হয়, তবে দশ লক্ষ মানুষ নিয়ে কমিশন ঘেরাও করা হবে। এই হুঁশিয়ারি কার্যত বিজেপিকে চাপে ফেললেও উল্টোদিকে বিজেপি এটাকেই তাদের রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে তুলে ধরছে। তাদের বিশ্বাস, ভোটার তালিকা থেকে ভুয়ো নাম ছেঁটে ফেলা গেলে লড়াই অনেকটাই সহজ হবে।
‘শেষ সুযোগ’ কেন বললেন শুভেন্দু?
বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য ছিল জোরালো। তিনি বলেন, “এখনই যদি বিজেপির নেতা-কর্মীরা দায়িত্বশীলভাবে কাজ না করেন, তবে ভবিষ্যতে আর সুযোগ আসবে না।” তাঁর মতে, বুথস্তরের এজেন্টদের কাজে ঢিলেমি মানেই নির্বাচনের আগে বিজেপির পক্ষে বড় ক্ষতি। তাই দলীয় কর্মীদের পরিষ্কার নির্দেশ, প্রতিটি বুথের রিপোর্ট খুঁটিয়ে তৈরি করতে হবে, কারণ সেই রিপোর্টই যাবে কমিশনের টেবিলে।
বুথভিত্তিক খসড়া রিপোর্টের প্রস্তুতি
সূত্রের খবর, বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব জেলাস্তরের কর্মীদের ৫ থেকে ৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বুথ সংক্রান্ত রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। এই রিপোর্টগুলিকে রাজ্যস্তরে সাজিয়ে ৮ সেপ্টেম্বর কমিশনের হাতে তুলে দেওয়া হবে। সুতরাং আসন্ন এক সপ্তাহই বিজেপির কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই কারণেই শুভেন্দু বৈঠক থেকে সবাইকে সতর্ক করেছেন—যত খুঁটিনাটি তথ্য সংগ্রহ হবে, ততটাই নির্বাচনী প্রস্তুতি হবে মজবুত।
৭০০ জনের ভার্চুয়াল উপস্থিতি, বাড়ল গুরুত্ব
শনিবারের এই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, শিশির বাজোরিয়ার মতো রাজ্যের প্রভাবশালী বিজেপি নেতারা। পাশাপাশি ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন প্রায় ৭০০ জন নেতা-কর্মী। এত বড় পরিসরে আলোচনা থেকেই বোঝা যায়, বিজেপি বিষয়টিকে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। আসলে দল চাইছে প্রতিটি কর্মীকে বোঝাতে—এসআইআর শুধুই প্রশাসনিক কাজ নয়, বরং রাজনৈতিক অস্ত্র, যা দিয়ে তৃণমূলকে কোণঠাসা করা সম্ভব।
বিজেপির কৌশল, শাসকের পাল্টা
বিজেপি মনে করছে, এসআইআর কার্যকর হলে বাংলার ভোটের খেলায় তারা এগিয়ে যাবে। কারণ তাদের দাবি, বেনো জল সরিয়ে দিলে প্রকৃত ভোটারদের মতামতই প্রতিফলিত হবে। তবে তৃণমূলের দাবি সম্পূর্ণ উল্টো—এসআইআর মূলত বিরোধীদের হাতিয়ার, যার মাধ্যমে জনবিচ্ছিন্ন বিজেপি নিজেদের সুবিধা তুলতে চাইছে। ফলে এই নিয়ে মুখোমুখি সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাজনীতির মাঠে।
ছাব্বিশের নির্বাচনে কী ফল দেবে এসআইআর?
শুভেন্দু অধিকারীর বারবারের জোরাজুরি থেকে পরিষ্কার, বিজেপি আসন্ন ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য এসআইআরকেই ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ মনে করছে। তবে এই অস্ত্র কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসআইআর যদি কার্যকর হয়, তবে নির্বাচন কমিশন কঠোর নজরদারির মধ্যে দিয়ে তা করবে। ফলে বিজেপির প্রত্যাশা পূরণ হবে কি না, তার উত্তর লুকিয়ে আগামী দিনের রাজনৈতিক সমীকরণে।