ফের লোকাল ট্রেন বাতিল, নাজেহালে যাত্রীরা

ফের লোকাল ট্রেন বাতিল, নাজেহালে যাত্রীরা

পূর্ব রেলের সিদ্ধান্তে ফের ধাক্কা হাওড়া-বর্ধমান ও ব্যান্ডেল-কাটোয়া শাখায়। কয়েকদিন আগেই বাতিল হয়েছিল একাধিক লোকাল, এবারও একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। নিত্যযাত্রীদের স্বস্তি মিলল না, বরং আরও বেড়ে গেল ভোগান্তি।

ট্র্যাফিক ব্লকের জেরে বাতিল ট্রেন

রেল সূত্রে খবর, শনিবার রাত ৯টা ২০ মিনিট থেকে রবিবার ভোর ৩টে ২০ মিনিট পর্যন্ত টানা ৩৬০ মিনিট চলবে ট্র্যাফিক ব্লক। এই সময়ের মধ্যে বাতিল থাকবে মোট চারটি লোকাল ট্রেন। এর মধ্যে রয়েছে 36860 বর্ধমান–হাওড়া লোকাল, 36855 হাওড়া–বর্ধমান লোকাল, 37857 হাওড়া–বর্ধমান লোকাল এবং 37512 বর্ধমান–হাওড়া লোকাল।

যাত্রীদের মনে ক্ষোভ

কয়েকদিন আগেই একই শাখায় একাধিক লোকাল বাতিল হয়েছিল। তখনও নিত্যযাত্রীদের অসুবিধায় পড়তে হয়েছিল। অফিস টাইমে ট্রেন বন্ধ থাকায় যাত্রীদের বিকল্প পরিবহনের উপর ভরসা করতে হয়েছিল। ফের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

রক্ষণাবেক্ষণের কাজেই বন্ধ ট্রেন চলাচল

রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বাতিলকরণের মূল কারণ রক্ষণাবেক্ষণ। ট্র্যাক ও সিগন্যালিং সিস্টেমকে সুরক্ষিত রাখতে নির্দিষ্ট সময় অন্তর এই ধরনের ব্লক প্রয়োজন। যাত্রীদের সাময়িক অসুবিধা হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এর সুফল মিলবে বলে দাবি রেলের।

নবদ্বীপ ধাম থেকে পূর্বস্থলী পর্যন্ত বড় কাজ

শুধু একদিন নয়, এবার একটানা কয়েকদিনের রক্ষণাবেক্ষণেরও পরিকল্পনা রয়েছে। হাওড়া ডিভিশনের নবদ্বীপ ধাম ও পূর্বস্থলীর মধ্যে রাত ২টো ১০ থেকে ভোর ৫টা ১০ মিনিট পর্যন্ত চলবে ট্র্যাক মেরামতির কাজ। এই কাজ একটানা ৮ দিন ধরে চলবে—২ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

ব্যান্ডেল-কাটোয়া রুটে বড় প্রভাব

এই কাজের কারণে ব্যান্ডেল-কাটোয়া শাখার দুটি গুরুত্বপূর্ণ লোকাল ট্রেন বাতিল থাকবে। 37741 ব্যান্ডেল–কাটোয়া লোকাল ও 37742 কাটোয়া–ব্যান্ডেল লোকাল ওই সময়ে চালানো হবে না। প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রী এই রুটে চলাচল করেন, ফলে এই সিদ্ধান্তে ভোগান্তি বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অফিসযাত্রীদের দুঃস্বপ্ন

বেশিরভাগ যাত্রীই সকালে লোকাল ট্রেন ধরেই কলকাতায় অফিসে পৌঁছন। একটানা কয়েকদিন ট্রেন বন্ধ থাকলে যাতায়াতে সমস্যার মুখে পড়তে হবে তাঁদের। বিকল্প হিসেবে বাস বা অন্যান্য পরিবহন ধরতে হবে, যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়সাপেক্ষ। যাত্রীরা আগেই সতর্ক হতে শুরু করেছেন।

নিত্যযাত্রীদের চরম অসুবিধা

রেলের এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বেন নিত্যযাত্রীরা। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে দৈনন্দিন খেটে খাওয়া মানুষও এর শিকার হবেন। বিশেষ করে সকাল ও সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে ট্রেন না চলায় তাঁদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছবে।

ফের ক্ষোভের সুর উঠছে

একাধিক যাত্রী সংগঠন ইতিমধ্যেই এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তাঁদের দাবি, যাত্রীদের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বাড়তি স্পেশাল ট্রেন চালানো বা ব্লকের সময় কমানো গেলে যাত্রীরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন।

সামনের দিনগুলোতে আরও দুর্ভোগ আশঙ্কা

টানা আটদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলবে বলে পূর্ব রেল জানিয়েছে। ফলে শুধু একদিনের নয়, দীর্ঘসময় ধরেই নিত্যযাত্রীদের সমস্যার মুখে পড়তে হবে। যাত্রীরা আশঙ্কা করছেন, এই ধরণের অব্যাহত ট্রেন বাতিলে প্রতিদিনকার জীবন আরও বিপর্যস্ত হয়ে উঠতে পারে।

রেলের বক্তব্য

পূর্ব রেলের তরফে জানানো হয়েছে, এই কাজ অত্যন্ত জরুরি। পুরনো ট্র্যাক ও সিগন্যালিংয়ে সমস্যা তৈরি হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। তাই সাময়িক ভোগান্তি হলেও যাত্রী নিরাপত্তার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের সহযোগিতা কামনা করেছে।

যাত্রীদের শেষ প্রশ্ন

তবুও সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছেন—কেন বারবার অফিস সময়েই এই ধরনের কাজের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়? রেল কি অন্য কোনো সময় এই কাজ করতে পারে না? যাত্রীদের অভিযোগ, তাঁদের সুরক্ষা যেমন জরুরি, তেমনই প্রতিদিনের যাতায়াতও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a comment