তাইওয়ানের সামরিক মহড়া: চীনের প্রতিক্রিয়া ও তাইওয়ানের জবাব

তাইওয়ানের সামরিক মহড়া: চীনের প্রতিক্রিয়া ও তাইওয়ানের জবাব

তাইওয়ান তাদের বার্ষিক হান কুয়াং সামরিক মহড়া শুরু করেছে, যেখানে তার সেনাবাহিনী শক্তি, কৌশল এবং যুদ্ধ ক্ষমতার ব্যাপক প্রদর্শন করছে। এই মহড়া তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এতে সেনা, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর যৌথ অভিযান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

তাইপে: তাইওয়ানের হান কুয়াং সামরিক মহড়া ২০২৫ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চীন তার কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক অসন্তোষের সরাসরি বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং-এর নেতৃত্বে চীনা সরকার তাইওয়ানের আটটি প্রধান প্রতিরক্ষা ও এয়ারোস্পেস কোম্পানির উপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে চীন স্পষ্ট বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে যে তারা তাইওয়ানের সামরিক কার্যকলাপ কোনোভাবেই বরদাস্ত করবে না।

তাইওয়ানের ‘হান কুয়াং’ মহড়া: আত্মরক্ষার প্রস্তুতি

প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হওয়া তাইওয়ানের হান কুয়াং সামরিক মহড়া এবার সবচেয়ে দীর্ঘ এবং উন্নত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা ১০ দিন ধরে চলবে। মহড়ার উদ্দেশ্য হল – সম্ভাব্য চীনা সামরিক আক্রমণ মোকাবিলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়া। এই মহড়ায় তাইওয়ান সেনাবাহিনী আধুনিক অস্ত্র, সমুদ্র নজরদারি প্রযুক্তি এবং সাইবার নিরাপত্তা সক্ষমতার ব্যাপক প্রদর্শন করছে।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে খবর, মহড়ার সূচনা চীনের উপকূলরক্ষী জাহাজের আক্রমণাত্মক কার্যকলাপের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ করা হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে চীনা নৌবাহিনী তাইওয়ানের উপকূলবর্তী দ্বীপগুলির কাছে বেশ কয়েকবার প্রবেশ করেছে, যা পুরো এলাকায় কৌশলগত অস্থিরতা বাড়িয়ে দিয়েছে।

চীনের প্রতিক্রিয়া: আঞ্চলিক নিরাপত্তার অজুহাত, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কৌশল

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক সরকারি বিবৃতিতে জানিয়েছে যে তাইওয়ানের কোম্পানিগুলির উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা "জাতীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা উদ্বেগ"-এর অধীনে নেওয়া হয়েছে। এই আটটি কোম্পানির মধ্যে অধিকাংশই জাহাজ নির্মাণ, প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি এবং ডুয়াল-ইউজ ম্যাটেরিয়াল (বেসামরিক ও সামরিক উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত প্রযুক্তি) নির্মাণের সঙ্গে জড়িত। 

এবার এই কোম্পানিগুলিকে চীন থেকে কোনো প্রকার সংবেদনশীল সরঞ্জাম বা প্রযুক্তিগত পণ্য রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হবে না। এই নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে কার্যকর হয়েছে।

তাইওয়ান জানিয়েছে - চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তাইওয়ান সরকার স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে চীনের নিষেধাজ্ঞা বা হুমকি তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা নীতিকে প্রভাবিত করবে না। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জনসাধারণকে ধৈর্য ধরার এবং গুজব থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে। তাইওয়ান সরকার আরও বলেছে যে মহড়ার সময় বেসামরিক বিমান চলাচল এবং পরিবহন পরিষেবাগুলিতে কোনো ধরণের অসুবিধা হলে, মানুষ যেন সহযোগিতা করে।

চীন-তাইওয়ানের বিবাদ

চীন দীর্ঘদিন ধরে তাইওয়ানকে তার অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করে এবং বারবার এটিকে জোর করে নিজেদের সঙ্গে মেশানোর হুমকি দিয়েছে। তাইওয়ান, অন্যদিকে, নিজেকে একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে। সম্প্রতি বেইজিং তাইওয়ানের রাষ্ট্রপতি লাই চিং-তে-কে "বিচ্ছিন্নতাবাদী" আখ্যা দিয়েছে এবং তাঁর সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক আলোচনার সম্ভাবনা সম্পূর্ণভাবে নাকচ করে দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সামরিক মহড়ার উপর চীনের প্রতিক্রিয়া এই উত্তেজনাকে আরও গভীর করবে।

আন্তর্জাতিক কৌশলগত বিষয়গুলির বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে চীন এই মুহূর্তে সরাসরি সামরিক পদক্ষেপের পরিবর্তে অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের অস্ত্র ব্যবহার করছে। তাইওয়ানের কোম্পানিগুলির উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এই কৌশলেরই অংশ, যাতে দ্বীপরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সরবরাহ শৃঙ্খলকে দুর্বল করা যায়।

Leave a comment