অবিরাম বর্ষণে কয়েক দিন ধরেই ফুঁসছে যমুনা নদী। মঙ্গলবার সকালেই বিপদসীমা অতিক্রম করে তাজমহলের সীমানা প্রাচীর ছুঁয়ে ফেলেছে জল। এর জেরে আগ্রার নদীতীরবর্তী জনপদ প্লাবিত হয়ে গিয়েছে, শতাধিক বাড়িঘর ভেসে গেছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, অন্তত ৮,০১৮ জনকে নিরাপদ আশ্রয় শিবিরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে তাজমহলের মূল সৌধ আপাতত বিপদমুক্ত বলেই দাবি প্রত্নতত্ত্ব দফতরের।
যমুনার জল ছুঁল বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রাচীর
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে যমুনার জলস্তর মঙ্গলবার সকালে ২০৫.৩৩ মিটার স্পর্শ করেছে, যা বিপদসীমার চেয়ে বেশি। ফলে যমুনার জল তাজমহলের সীমানা প্রাচীর পর্যন্ত পৌঁছে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে যে, বিশ্ব ঐতিহ্যের এই স্থাপত্য কোনও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।
প্রশাসনের তৎপরতা
আগ্রা প্রশাসন জানিয়েছে, বিপর্যস্ত এলাকা থেকে দ্রুত উদ্ধারকাজ চলছে। নদীর ধার ঘেঁষে থাকা বসতিগুলি ভেসে যাওয়ায় বহু মানুষ গৃহহীন হয়েছেন। ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার মানুষকে নিরাপদ শিবিরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, প্রত্নতত্ত্ব দফতরের কর্মকর্তারা তাজমহলের চারপাশে বিশেষ নজরদারি শুরু করেছেন।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি
এই প্রথম নয়, এর আগেও যমুনার বন্যা তাজমহলের প্রাচীর পর্যন্ত পৌঁছেছে। ২০২৩ সালে প্রায় ৪৫ বছর পর এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যখন কমপ্লেক্সের পিছনের বাগান প্লাবিত হয়েছিল। তারও আগে ১৯৭৮ সালে ভয়াবহ বন্যায় একই ঘটনা ঘটেছিল।
স্থানীয় মানুষের দুর্দশা
নদীতীরবর্তী গ্রাম ও বাজারে জল ঢুকে পড়েছে। সাধারণ মানুষের অনেকে জানিয়েছেন, এ ধরনের পরিস্থিতি তারা প্রায় কয়েক দশক পর প্রত্যক্ষ করছেন। গবাদি পশু, দোকান–বাজার সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো অনেক পরিবার আশ্রয় শিবিরে ঠাঁই নিয়েছেন।
যমুনার জলস্তর তাজমহলের প্রাচীর ছুঁয়ে যাওয়ায় ইতিহাসপ্রেমী ও পরিবেশবিদদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যদিও প্রশাসন জানিয়েছে, মূল সৌধ আপাতত সুরক্ষিত, তবে আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস বলছে, আগামী দিনেও বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। তাই বিপদ এখনো কাটেনি। সরকার ও প্রশাসনের দ্রুত উদ্যোগের ওপর নির্ভর করছে—তাজমহল ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কতটা বজায় থাকবে।