তামিলনাড়ুর চাকরি কেলেঙ্কারি: সুপ্রিম কোর্টের কড়া পদক্ষেপ

তামিলনাড়ুর চাকরি কেলেঙ্কারি: সুপ্রিম কোর্টের কড়া পদক্ষেপ

তামিলনাড়ুর 'চাকরির বদলে টাকা' কেলেঙ্কারি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কড়া মন্তব্য। ২০০০-এর বেশি অভিযুক্ত থাকা এই মামলায় আদালতের বিচার বিভাগীয় হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে রাজ্য সরকারের কাছে জবাব চাওয়া হয়েছে।

Tamil Job Scam: তামিলনাড়ুতে প্রকাশ্যে আসা চাকরির বদলে টাকা কেলেঙ্কারি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বুধবার কড়া মন্তব্য করেছে। আদালত এই কেলেঙ্কারিকে ভারতের বৃহত্তম ফৌজদারি মামলাগুলির মধ্যে একটি বলে অভিহিত করেছে, যেখানে ২০০০-এর বেশি অভিযুক্ত রয়েছে। বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির বেঞ্চ বলেছে যে এত বিপুল সংখ্যক অভিযুক্তকে রাখার জন্য একটি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মতো জায়গার প্রয়োজন হবে, কারণ একটি সাধারণ আদালতকক্ষ এই কাজের জন্য যথেষ্ট নয়।

প্রাক্তন মন্ত্রী ভি. সেন্থিল বালাজির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

এই মামলায় প্রাক্তন ডিএমকে মন্ত্রী ভি. সেন্থিল বালাজির নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আদালত বলেছে যে এটা স্পষ্ট যে রাজ্য সরকার বালাজির বিরুদ্ধে মামলাগুলি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বিচার বিভাগীয় হস্তক্ষেপ সেই প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছে এবং এখন বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। আদালত বলেছে যে এই ধরনের মামলায় যখন ক্ষমতা এবং অর্থের প্রভাব থাকে, তখন সন্দেহ জাগে যে সরকারি আইনজীবীরা নিরপেক্ষভাবে বিচার করতে পারবেন কিনা।

আদালতের গভীর পর্যবেক্ষণ: ক্ষতিগ্রস্ত কারা?

সুপ্রিম কোর্ট এও বলেছে যে, প্রযুক্তিগতভাবে যারা অপরাধী, তারা আসলে ভুক্তভোগীও হতে পারে। বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন যে অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে চাকরির আশায় মানুষ ঘুষ দিয়েছে, কিন্তু এখন তাদের অপরাধী বানানো হয়েছে। আদালত প্রশ্ন তুলেছে যে এই ব্যক্তিদের অভিযুক্তের পরিবর্তে সাক্ষী হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে কিনা, যাতে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হয় এবং প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া যায়।

ঘুষ প্রদানকারীদের অবস্থা উদ্বেগজনক

সিনিয়র অ্যাডভোকেট গোপাল শংকরনারায়ণন আদালতকে জানিয়েছেন যে অনেক মানুষ সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য তাদের গয়না পর্যন্ত বন্ধক রেখেছেন। কিছু ক্ষেত্রে মা ও দিদিমারা তাদের গয়না বিক্রি করে সন্তানদের চাকরি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আদালত বলেছে যে এই ধরনের ব্যক্তিদের অভিযুক্ত করা হলে বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হবে এবং এর ফলে আসল অপরাধীরা পালাতে পারে। আদালত রাজ্য সরকারের কাছে স্পষ্ট জবাব চেয়েছে যে এই ব্যক্তিদের সাক্ষীর শ্রেণিতে রাখা যায় কিনা।

বিচারিক প্রক্রিয়ায় বিলম্ব অস্বীকার করা যায় না

সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়েও জোর দিয়েছে যে এই কেলেঙ্কারির শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিম্ন আদালত কোনও অভিযুক্তকে মুক্তি দিতে পারবে না। আদালত রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে যে তারা যেন নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেয়, কারণ এত বড় পরিসরে চলমান মামলায় বিলম্ব হলে ন্যায়বিচারের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে।

রাজ্য সরকারের ভূমিকায় আদালতের অসন্তোষ

শুনানির সময় আদালত রাজ্য সরকারের মনোভাবের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। আদালত বলেছে যে মনে হচ্ছে সরকার মামলাটিকে দুর্বল করার দিকে কাজ করছে। আদালত প্রশ্ন করেছে যে এত বড় কেলেঙ্কারিতে এখনও পর্যন্ত মূল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কেন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আদালত সতর্ক করে দিয়েছে যে নিরপেক্ষতা বজায় না থাকলে সুপ্রিম কোর্টকে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে হবে।

দেশের বৃহত্তম ফৌজদারি মামলার মধ্যে অন্যতম

এই কেলেঙ্কারির আকার এতটাই বড় যে সুপ্রিম কোর্ট এটিকে ভারতের ইতিহাসের বৃহত্তম কেলেঙ্কারি বলতে দ্বিধা করেনি। ২০০০-এর বেশি অভিযুক্ত এবং ৫০০-এর বেশি সাক্ষীর সাথে এই মামলা বিচার বিভাগের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদালত বলেছে যে এই ধরনের মামলায় ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়া দ্রুত করা প্রয়োজন, যাতে ক্ষতিগ্রস্তরা সময় মতোRelief পেতে পারে।

Leave a comment