মাথাব্যথার নাম কাঁথি-শিলিগুড়ি অভিষেকের নির্দেশ দ্বন্দ্ব ভুলে জয়ের লড়াইয়ে নামতে হবে

মাথাব্যথার নাম কাঁথি-শিলিগুড়ি অভিষেকের নির্দেশ দ্বন্দ্ব ভুলে জয়ের লড়াইয়ে নামতে হবে

শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলায় চরম সংকট

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের পর দার্জিলিং সমতল তথা শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের অবস্থান একেবারেই দুর্বল। শিলিগুড়ি, ফাঁসিদেওয়া ও মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি—এই তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রেই ২০২১ সালে শোচনীয় হারের মুখ দেখতে হয়েছিল ঘাসফুল শিবিরকে। এমনকি শিলিগুড়ি পৌরনিগমে ২০২২ সালে জয়ের স্বাদ পেলেও, ২০২৪ লোকসভা ভোটে কোনও ওয়ার্ডেই সাফল্য আসেনি। ফলে সংগঠনকে নতুনভাবে সাজাতে বাধ্য হয়েছে দল।

অভিষেকের বৈঠকে স্পষ্ট বার্তা

শনিবার রাজ্যের দুই প্রান্তে দুটি সাংগঠনিক জেলা নিয়ে বৈঠক করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শিলিগুড়ি ও কাঁথি—দুই এলাকাতেই গত লোকসভা নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে তৃণমূল। বৈঠকে অভিষেক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ভুলে সংগঠনের পক্ষে একজোট হয়ে লড়াই করতে হবে। প্রচারের অস্ত্র হাতে নিয়ে সাধারণ মানুষের দরজায় পৌঁছতে হবে, তবেই আসন্ন ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।

গৌতম বনাম পাপিয়া দ্বন্দ্বের ক্ষত

শিলিগুড়ির রাজনীতিতে গৌতম দেব বনাম পাপিয়া ঘোষাল দ্বন্দ্ব বহুদিন ধরেই সংগঠনকে দুর্বল করেছে। সম্প্রতি মেয়র নিজস্ব দলের কাউন্সিলরদের সঙ্গেই বোর্ড মিটিংয়ে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। এই অস্থিরতাকে কাজে লাগাচ্ছে বিজেপি। তাই শীর্ষ নেতৃত্ব পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে। নতুনভাবে চেয়ারম্যান পদে আনা হয়েছে টিব্রেওয়ালকে, সঙ্গে গঠন হয়েছে ৯ জনের কোর কমিটি। অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ শঙ্কর মালাকারের যোগদান দলকে কিছুটা হলেও প্রাণসঞ্চার করেছে।

শিলিগুড়ির জন্য বিশেষ রণকৌশল

বৈঠক শেষে মেয়র গৌতম দেব জানান, পুর এলাকার সাফল্যকে বিধানসভা ভোটে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিনি আশাবাদী—সঠিক প্রচার ও একজোট কাজ করলে শিলিগুড়ি পুনরুদ্ধার সম্ভব। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গে "বাংলা অস্মিতা"কেও প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার করা হবে। বিশেষ করে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির মতো কেন্দ্রগুলিতে বিশেষ নজর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক।

শুভেন্দুর গড় কাঁথিতে কাঁটা

পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের কাছে আরও বড় মাথাব্যথা। চণ্ডীপুর, খেজুরি, ভগবানপুর, কাঁথি উত্তর, কাঁথি দক্ষিণ, রামনগর, এগরা ও পটাশপুর—এই আটটি বিধানসভা মিলিয়ে গড়ে উঠেছে এই জেলা। কিন্তু এখানেই শুভেন্দু অধিকারীর দীর্ঘদিনের প্রভাব অদৃশ্য ছায়ার মতো তৃণমূলকে তাড়া করছে। কাঁথি লোকসভা আসনে হার, সঙ্গে খেজুরি, কাঁথি উত্তর ও দক্ষিণ, ভগবানপুরে প্রচণ্ড পিছিয়ে শাসক শিবির। যদিও সমবায় ভোটে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে।

উত্তম বনাম অখিল—অন্তর্দ্বন্দ্বে বিপর্যস্ত দল

কাঁথি জেলাপরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক ও বর্ষীয়ান নেতা অখিল গিরির দ্বন্দ্ব দলকে চাপে ফেলেছে। জেলা সভাপতি উত্তম ঘনিষ্ঠ পীযূষকান্তি পণ্ডা এবং যুব সভাপতি জালালউদ্দিন খানও উত্তমপন্থী হওয়ায় দলের একাংশ মনে করছে, এই বিভাজনেই সুবিধা নিচ্ছে বিজেপি। যদিও প্রকাশ্যে উভয়েই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

অধিকারী পরিবারের অদৃশ্য ছায়া

স্থানীয় নেতৃত্বের অভিযোগ, এখনও জেলার একাংশে অধিকারী পরিবারের প্রভাব অটুট। তৃণমূলের নির্বাচনী প্রচার ও সাংগঠনিক কর্মসূচিতে এই ছায়া প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। ফলে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে কাঁথি জেলার চ্যালেঞ্জ অনেকটা বড়। এখানে শুধু বিজেপির মোকাবিলা নয়, বরং অধিকারীদের প্রভাব কাটানোও বড় লড়াই।

অখিল গিরি ও উত্তম বারিকের দাবি

বৈঠক শেষে অখিল গিরি বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে মতবিরোধ থাকতে পারে, কিন্তু গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। ভোটের সময় সবাই একসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতীক জোড়া ফুলকে জেতানোর জন্য কাজ করবে।’’ অপরদিকে উত্তম বারিক দাবি করেছেন, দলের মধ্যে কোনও বিভাজন নেই। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্র রাজ্যের টাকা আটকে রেখেছে। মানুষ এবার তার জবাব দেবে।

সামনে ২০২৬-এর যুদ্ধ

শিলিগুড়ি ও কাঁথি—দুটি জেলাই তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে বড় পরীক্ষা। সংগঠনকে মজবুত করা, প্রচারে গতি আনা, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব দূরে রাখা—সবই এখন শীর্ষ নেতৃত্বের প্রধান লক্ষ্য। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করেছেন, কোনও মতবিরোধ বা প্রভাবশালী পরিবারের ছায়া নয়, কেবল একজোট লড়াইয়ের মাধ্যমেই জেতা সম্ভব।

Leave a comment