ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর হুঁশিয়ারি, BRICS দেশগুলি যদি আমেরিকা-বিরোধী নীতি সমর্থন করে, তবে তাদের উপর ১০% অতিরিক্ত শুল্ক চাপানো হবে। এর ফলে ভারত সহ একাধিক দেশের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। BRICS এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করেছে।
BRICS: আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প BRICS দেশগুলিকে সতর্ক করেছেন যে, তারা যদি আমেরিকা-বিরোধী নীতি সমর্থন করে, তবে তাদের উপর ১০% অতিরিক্ত শুল্ক বসানো হবে। এই হুমকির জেরে বিশ্ব বাণিজ্য জগতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে। আসুন, বুঝি কেন ট্রাম্প BRICS-কে নিশানা করছেন এবং এর ফল কী হতে পারে।
ট্রাম্পের হুমকি, যা বিশ্ব রাজনীতিকে ফের উত্তপ্ত করল
ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোস্যাল’-এ BRICS দেশগুলিকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যদি তারা আমেরিকার নীতির বিরোধিতা করে অথবা আমেরিকা-বিরোধী নীতি সমর্থন করে, তবে তাদের ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্কের বোঝা বইতে হবে। এর আগে, সোমবার ট্রাম্প জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া সহ ১৪টি দেশের উপর ২৫% থেকে ৪০% পর্যন্ত শুল্ক বসানোর ঘোষণা করেছিলেন।
BRICS কী এবং কেন এটি আমেরিকার নজরে?
BRICS হল পাঁচটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলির একটি জোট – ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। এটি ২০০৯ সালে গঠিত হয়েছিল। সম্প্রতি ইরান, ইথিওপিয়া, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইন্দোনেশিয়াকেও এর সদস্য করা হয়েছে। BRICS-এর উদ্দেশ্য হল বিশ্ব বাণিজ্য এবং আর্থিক কাঠামোতে উন্নয়নশীল দেশগুলির অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা।
ডলারের উপর নির্ভরতা কমানোর প্রচেষ্টায় আমেরিকার উদ্বেগ
BRICS দেশগুলি দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন ডলারের উপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করছে। রাশিয়া এবং চীন ইতিমধ্যেই নিজেদের মধ্যেকার বাণিজ্যে স্থানীয় মুদ্রা ব্যবহার করছে। ২০২২ সালে রাশিয়া BRICS কারেন্সি-র (মুদ্রা) বিষয়টি উত্থাপন করেছিল। শুধু তাই নয়, আমেরিকা রাশিয়া এবং ইরানকে SWIFT-এর মতো বিশ্ব আর্থিক নেটওয়ার্ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকে অনেক দেশ ডলারের বিকল্প খুঁজতে শুরু করেছে।
ট্রাম্পের ১০০% শুল্কের পুরোনো হুমকি
এই প্রথম নয়, যখন ট্রাম্প BRICS দেশগুলিকে শুল্কের হুমকি দিয়েছেন। ২০২৫ সালের শুরুতে তিনি বলেছিলেন, যদি BRICS দেশগুলি ডলারকে চ্যালেঞ্জ জানায়, তবে তাদের ১০০% শুল্কের সম্মুখীন হতে হবে। বর্তমানে তিনি ১০% শুল্কের কথা বলেছেন, তবে এটি একটি ইঙ্গিত যে বিষয়টি কতটা গুরুতর হতে পারে।
রয়টার্সের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন বর্তমানে সমস্ত BRICS দেশগুলির উপর তাৎক্ষণিকভাবে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছে না। তবে, যদি কোনো দেশ মার্কিন নীতির বিরুদ্ধে যায়, তবে তার উপর এই অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকর হতে পারে।
ভারতের জন্য এই হুমকি কতটা উদ্বেগের?
ভারত BRICS-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং সাম্প্রতিক ঘোষণাপত্রে মার্কিন শুল্কের সমালোচনার উপর স্বাক্ষর করেছে। এমতাবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, ট্রাম্পের এই হুমকি কি ভারতের জন্যও সমস্যা তৈরি করতে পারে?
বর্তমানে ট্রাম্প ভারতের উপর শুল্ক আরোপ করেননি। বরং তিনি বলেছেন, আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি শীঘ্রই চূড়ান্ত হতে পারে। কিন্তু, যদি ভারত ডলারের বিকল্প নিয়ে BRICS-এর সঙ্গে পদক্ষেপ করে, তবে তাকেও আমেরিকার নিশানায় পড়তে হতে পারে।
ব্রিক্সের শক্তি: বিশ্ব GDP-তে ৩৫% অবদান
BRICS দেশগুলি এখন বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪৫% প্রতিনিধিত্ব করে এবং বিশ্ব GDP-তে তাদের অবদান ৩৫% এর বেশি। এই দেশগুলি কেবল অর্থনৈতিক দিক থেকেই শক্তিশালী হচ্ছে না, বরং বিশ্ব ক্ষমতার ভারসাম্যেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আমেরিকার আশঙ্কা, যদি এই দেশগুলি একত্রিত হয়ে ডলারের পরিবর্তে অন্য কোনো মুদ্রা ব্যবহার করে, তবে তা তাদের অর্থনৈতিক আধিপত্যকে দুর্বল করতে পারে।
ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতির কড়া জবাব
ট্রাম্পের হুমকির সবচেয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুই ইনাসিও লুলা দা সিলভার তরফ থেকে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, বিশ্ব এখন বদলে গেছে এবং আমাদের কোনো সম্রাটের প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, BRICS দেশগুলি বিশ্ব অর্থনীতিকে আরও সুষম এবং ন্যায়সঙ্গত করার লক্ষ্যে কাজ করছে, যা কিছু মানুষের কাছে অস্বস্তিকর।