ট্রাম্পের নীতিতে ভারত-চীন সম্পর্ক: নতুন সমীকরণ?

ট্রাম্পের নীতিতে ভারত-চীন সম্পর্ক: নতুন সমীকরণ?

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি বিশ্ব ভূ-রাজনীতিকে বদলে দিয়েছে। আমেরিকার আগ্রাসী মনোভাবের মধ্যে ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক উন্নতির দিকে যাচ্ছে। উভয় দেশ সহযোগিতা ও ভারসাম্যের নতুন পথে অগ্রসর হচ্ছে।

Changed The World Scene: ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচরণ ও নীতি প্রায়শই বিশ্বের জন্য বিস্ময়কর। তিনি সকালে এক কথা বলেন, বিকেলে অন্য কথা, এবং রাতে তার অবস্থান আবার পরিবর্তিত হয়। কিন্তু তার এই অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও, ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের পর এমন একটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা বিশ্ব রাজনীতির সমীকরণ পরিবর্তন করতে শুরু করেছে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউস থেকে ট্রাম্পের একটি ছবি প্রকাশ করা হয়, যেখানে তার মাথায় সোনার মুকুট এবং মুখে সম্রাটের মতো হাসি ছিল। ছবির ক্যাপশনে লেখা ছিল "Long live the King"। এটি কেবল প্রতীকী ছিল না, বরং তার চিন্তাভাবনা ও নীতি নির্ধারণের পদ্ধতির স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল।

'আমেরিকা ফার্স্ট'-এর আগ্রাসী নীতি

ট্রাম্পের 'আমেরিকা ফার্স্ট' এজেন্ডা আবারও বিশ্বের উপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে। তিনি ক্রমাগত তার পুরনো মিত্রদের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন যাতে তারা আমেরিকার সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি করে, অন্যথায় ভারী শুল্কের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। ইউরোপ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে শুরু করে ব্রাজিল এবং উপসাগরীয় দেশগুলোকেও ১ আগস্টের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্পের এই নীতি কেবল বিশ্ব বাণিজ্য বাজারকেই নয়, ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণকেও পরিবর্তন করছে।

এশিয়ায় ভারত ও চীনের সমীকরণে প্রভাব

এশিয়ায় ভারত ও চীনের সম্পর্ককেও ট্রাম্পের নীতি পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করেছে। দুটি দেশ, যারা দীর্ঘকাল ধরে সীমান্ত বিরোধ ও কৌশলগত প্রতিযোগিতায় জড়িত, এখন একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গির দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। এর কারণ হল আমেরিকার পরিবর্তিত কৌশল, যা উভয় দেশের অর্থনীতিকে চাপের মধ্যে ফেলছে। ট্রাম্পের এই মনোভাব ভারত ও চীন উভয়কেই তাদের পারস্পরিক মতভেদগুলি দূরে সরিয়ে রেখে সাধারণ স্বার্থে সহযোগিতা করতে বাধ্য করছে।

ভারত ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংলাপ

গত কয়েক মাসে ভারত ও চীনের মধ্যে বিভিন্ন স্তরে আলোচনা হয়েছে। ভারত, গালওয়ান সংঘর্ষের পর বন্ধ থাকা চীনা নাগরিকদের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা পুনরায় চালু করেছে। চীন ভারতের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এটিকে ইতিবাচক বলেছে। উভয় দেশের মধ্যে সীমান্ত বিষয়ক Working Mechanism for Consultation and Coordination (WMCC)-এর ৩৪তম বৈঠকও দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে ভবিষ্যতের আলোচনার রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে।

এস জয়শঙ্কর ও শি জিনপিংয়ের সাক্ষাৎ

এসসিও বৈঠকের সময় ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের চীন সফর এবং রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ থেকেও ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে উভয় দেশ সম্পর্কের উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর কয়েক সপ্তাহ আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও চীন সফর করেছিলেন। এই ঘটনাগুলো ইঙ্গিত দেয় যে উভয় দেশ পারস্পরিক संवादকে অগ্রাধিকার দিতে শুরু করেছে।

সরাসরি ফ্লাইট এবং তীর্থযাত্রা পুনরুদ্ধার

ভারত ও চীন একে অপরের দেশে সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু করার বিষয়ে আলোচনা করেছে, যা কোভিড-১৯ এবং সীমান্ত বিরোধের কারণে বন্ধ ছিল। এছাড়াও, চীন ২০২৫ সালে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ৮৫,০০০-এর বেশি ভিসা জারি করেছে, বিশেষ করে তীর্থযাত্রার জন্য। ভারতে চীনের রাষ্ট্রদূত ভারতীয়দের চীনে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এটি উভয় দেশের মধ্যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

চীন কি ভারতের নতুন সোভিয়েত ইউনিয়ন হতে পারে?

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে স্থায়ী বন্ধু বা শত্রু বলে কিছু হয় না, কেবল জাতীয় স্বার্থই মুখ্য। শীতল যুদ্ধের সময় ভারতের সবচেয়ে বড় কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সহযোগী ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। আজকের বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে, যখন আমেরিকার নীতি একতরফা চাপ সৃষ্টির, তখন ভারতের জন্য চীন একটি নতুন কৌশলগত বিকল্প হতে পারে। যদিও উভয় দেশের মধ্যে মতভেদ রয়েছে, তবে অভিন্ন স্বার্থ এবং আমেরিকার আগ্রাসী নীতি তাদের একটি মঞ্চে আনতে পারে।

ভারতের কৌশলগত স্বাধীনতার চ্যালেঞ্জ

ভারতের বিশ্বব্যাপী পরিচিতি একটি Non-Aligned Nation হিসেবে। আজও ভারত চেষ্টা করছে যাতে কোনো একটি মেরুতে আবদ্ধ না থেকে নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে। কিন্তু আমেরিকার নীতি, যেখানে সমান অংশগ্রহণের পরিবর্তে চাপের রাজনীতি দেখা যায়, তা ভারতের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য আমেরিকা ভারতকে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছে এবং শুল্ক আরোপের चेतावनी দিয়েছে।

Leave a comment