শরতের হাওয়ায় পুজোর আমেজ
নিম্নচাপের ভ্রুকুটি আকাশে থাকলেও শরতের মেঘে ভেসে আসছে দুর্গাপুজোর আগমনী বার্তা। বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব ঘিরে প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই তুঙ্গে। এ বছর সেপ্টেম্বরের শেষেই পুজো। সেই উৎসবের দিনগুলো কেমন কাটাবেন অভিনেত্রী থেকে বিধায়ক হয়ে ওঠা সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়?
বদলে যাওয়া জীবন, নতুন দায়িত্ব
গত বছর থেকে সায়ন্তিকার জীবনে বদল এসেছে এক বড় মোড়ে। বরানগর কেন্দ্রের বিধায়ক হিসাবে দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে এখন তাঁর দিনের বেশিরভাগটাই রাজনীতির মঞ্চে কেটে যায়। একসময় শিল্পী হিসাবে পুজোর দিনগুলিতে কাজের চাপ থাকলেও এখন রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি পালনের চাপও যোগ হয়েছে। ফলে আনন্দ আর দায়িত্বের মাঝে টানাপোড়েন বেড়েছে বহুগুণ।
প্রিয় পোষ্যের মৃত্যুতে মন খারাপ
কয়েক মাস আগেই সায়ন্তিকা হারিয়েছেন তাঁর আদরের পোষ্য সিরাজকে। এই মৃত্যু তাঁকে মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছে। তাই এবারের পুজোয় তাঁর আনন্দে খানিকটা ঘাটতি থাকবে বলেই জানিয়েছেন। সিরাজকে হারানোর পর থেকেই তিনি নিয়মিত জিম করা ছেড়ে দিয়েছেন।
কাজ আর পুজোর ব্যস্ততা
বিধায়ক হিসাবে পুজোর সময়ে তাঁর দিন কাটে উদ্বোধন আর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাজিরা দিয়ে। সপ্তমী পর্যন্ত টানা ব্যস্ততা, অষ্টমীর পর কিছুটা সময় পরিবারকে দেওয়া। গত বছর থেকেই বরানগরের একাধিক পুজোর সভাপতি বা পৃষ্ঠপোষক হিসাবে দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে তাঁকে। ফলে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘোরা আর শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্যেই তাঁর উৎসবের রোজনামচা।
কলকাতাতেই কাটে উৎসব
পুজোর সময়ে সায়ন্তিকা কলকাতা ছেড়ে কোথাও যান না। বরানগরের পুজোগুলিই তাঁর কাছে সবচেয়ে কাছের। মা–বাবা পর্যন্ত চলে আসেন মেয়ের সঙ্গে সময় কাটাতে। পরিবার, বন্ধু আর কর্মীদের নিয়েই কলকাতার মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেড়ান তিনি। তবে এখনকার ঘোরা আগের মতো নিছক আনন্দ নয়, বরং দায়িত্ব পালনের অঙ্গ।
ভোগে পুজোর আসল আনন্দ
খাবার নিয়ে সায়ন্তিকার নিজস্ব দর্শন আছে। তিনি বলেন, ওজন বাড়ুক বা কমুক, শরীরের ভেতর থেকে সুস্থ থাকাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পুজোর সময়ে তিনি বিশেষ করে ভোগ খাওয়ার আনন্দ উপভোগ করেন। খিচুড়ি-ভাজা-পায়েশে ভরপুর প্রসাদই তাঁর কাছে উৎসবের আসল স্বাদ।
ডায়েট থেকে ছুটি, ওজন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত
গত তিন মাস ধরে ডায়েট থেকে বিরতি নিয়েছেন সায়ন্তিকা। ইচ্ছে করেই কিছুটা ওজন বাড়াচ্ছেন তিনি। তাঁর মতে, অভিনেত্রী হিসাবে অনস্ক্রিনে ফিরে আসার আগে শরীরকে নতুনভাবে তৈরি করার জন্য এই ‘ব্রেক’ দরকার। আপাতত তিনি সব ধরনের খাবার খাচ্ছেন, জীবনকে উপভোগ করছেন নিজের মতো করে।
শাড়ির প্রতি ভালোবাসা আর পুজোর কেনাকাটা
পুজোর কেনাকাটার দায়িত্ব মা সামলান। শাড়ির প্রতি বিশেষ টান রয়েছে সায়ন্তিকার। সারা বছরই তিনি পোশাক কেনেন, তবে পুজোয় মা যে শাড়ি কিনে দেন, সেটাই তাঁর কাছে বিশেষ আনন্দের।
পুজোয় প্রেমের স্মৃতি
অভিনেত্রী থেকে বিধায়ক হলেও সায়ন্তিকা স্বীকার করেন, ছোটবেলায় পুজোয় প্রেমে পড়েছেন বহুবার। তাঁর কথায়, ‘‘পুজোর প্রেম মাস্ট।’’ তবে সেই প্রেম বেশিদিন টেকেনি, বিসর্জনের সঙ্গেই মিলিয়ে গেছে। এখন আর সময় পান না, তবে পুজোর নস্টালজিয়া তাঁর মনেও রয়ে গেছে।
শৈশবের সল্টলেকের পুজো
সায়ন্তিকার বেড়ে ওঠা সল্টলেকে। ছোটবেলায় সল্টলেকের লাবণি হাউজিং আর এফডি ব্লকের পুজোতেই জমিয়ে কাটত তাঁর উৎসব। বন্ধুদের সঙ্গে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরা, আনন্দে মেতে ওঠা—সবই ছিল শৈশবের সঙ্গী। এখন সময়ের অভাবে সেখানে যাওয়া হয় না, তবে পুজোর সময় বাবা–মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলে একবার সেই মণ্ডপে ঢুঁ মারেন তিনি।
মন খারাপ থাকলেও দায়িত্বে অবিচল
সিরাজকে হারানোর পর মনের ভেতরে দুঃখ থাকলেও দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে কাজের ব্যস্ততায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চান সায়ন্তিকা। তাঁর মতে, আনন্দ–বেদনার মাঝেই দায়িত্ব ঠিক পালন করতে হয়। এ বছর পুজোয় আনন্দ খানিকটা ম্লান হলেও বরানগরের বিধায়ক হিসাবে মানুষের পাশে থাকবেন তিনি।