আমেরিকা একটি বড় পদক্ষেপ নিয়ে ছয়টি ভারতীয় কোম্পানির উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ইরান থেকে পেট্রোলিয়াম এবং পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য কিনেছে, যা মার্কিন আইনের লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হচ্ছে। আমেরিকার বক্তব্য, ইরান থেকে তেল এবং সংশ্লিষ্ট পণ্য বিক্রি তার অর্থনৈতিক কাঠামোকে শক্তিশালী করে, যা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা ছড়ায়।
মার্কিন আইন ও ইরান থেকে তেল বাণিজ্য
ইরানের উপর আমেরিকা আগে থেকেই বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিষেধাজ্ঞাটি তার জ্বালানি খাতের সঙ্গে জড়িত। আমেরিকা বিশ্বজুড়ে কোম্পানিগুলিকে সতর্ক করেছে যে, ইরান থেকে কোনো পেট্রোলিয়াম বা সংশ্লিষ্ট পণ্য কেনাবেচা করলে শাস্তি দেওয়া হতে পারে।
মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিদেশ দপ্তরের বক্তব্য, এই কোম্পানিগুলি নির্ধারিত নিয়ম লঙ্ঘন করেছে এবং ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়েছে, যার জেরে এখন তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কোন কোন ভারতীয় কোম্পানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে?
আমেরিকা যে ছয়টি ভারতীয় কোম্পানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তাদের নাম এবং তাদের উপর করা অভিযোগগুলি হল:
- Alchemical Solutions Private Limited
এই কোম্পানির উপর সবচেয়ে বড় অভিযোগ। রিপোর্ট অনুযায়ী, জানুয়ারি ২০২৪ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪-এর মধ্যে এটি প্রায় ৮৪ মিলিয়ন ডলারের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য কিনেছে। এটি সবচেয়ে বেশি আমদানি করা ভারতীয় কোম্পানি বলে জানা গেছে। - Global Industrial Chemicals Limited
এই কোম্পানি জুলাই ২০২৪ থেকে জানুয়ারি ২০২৫-এর মধ্যে প্রায় ৫১ মিলিয়ন ডলারের ইরানি পণ্য আমদানি করেছে। বিশেষ করে মিথানলের চুক্তিতে এর নাম সামনে এসেছে। - Jupiter Dye Chem Private Limited
এই কোম্পানি জানুয়ারি ২০২৪ থেকে জানুয়ারি ২০২৫-এর মধ্যে টলুইন সহ প্রায় ৪৯ মিলিয়ন ডলারের পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য কিনেছে। - Ramniklal S Gosalia And Company
এই কোম্পানির নামও ইরান থেকে মিথানল ও টলুইনের মতো পণ্য আমদানিকারীদের মধ্যে রয়েছে। মোট বাণিজ্য ২২ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে বলে জানা গেছে। - Persistent Petrochem Private Limited
এই কোম্পানি অক্টোবর ২০২৪ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪-এর মধ্যে প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলারের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য আমদানি করেছে। - Kanchan Polymers
এই কোম্পানিও পলিইথিলিন সহ প্রায় ১.৩ মিলিয়ন ডলারের ইরানি পণ্যের ব্যবসা করেছে।
নিষেধাজ্ঞার মানে কী?
এই কোম্পানিগুলির উপর মার্কিন সরকার কর্তৃক আরোপিত নিষেধাজ্ঞার সরাসরি প্রভাব তাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উপর পড়বে।
- এই কোম্পানিগুলির আমেরিকাতে যে সম্পত্তি বা অ্যাকাউন্ট রয়েছে, সেগুলি এখন বাজেয়াপ্ত বা ফ্রিজ করা হয়েছে।
- মার্কিন নাগরিক এবং কোম্পানিগুলি এখন এই ভারতীয় কোম্পানিগুলির সাথে কোনও ধরনের ব্যবসা করতে পারবে না।
- যদি অন্য কোনো কোম্পানি এই নিষিদ্ধ কোম্পানিগুলিতে ৫০% এর বেশি অংশীদারিত্ব কেনে, তবে তার উপরেও একই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে।
- এদের দ্বারা পাঠানো বা গ্রহণ করা যেকোনো পণ্য, পরিষেবা বা অর্থের লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যতক্ষণ না মার্কিন সরকার থেকে বিশেষ অনুমতি পাওয়া যায়।
ভারতের পক্ষ থেকে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া নেই
ভারত সরকার বা এই কোম্পানিগুলির পক্ষ থেকে এই পুরো বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি। যদিও, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে এই ধরনের আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের ফলে ভারতের কিছু কোম্পানির ভাবমূর্তিতে প্রভাব পড়তে পারে।
আমেরিকার পক্ষ থেকে কী বিবৃতি এসেছে?
মার্কিন বিদেশ দপ্তর একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলেছে যে, এই নিষেধাজ্ঞাগুলির উদ্দেশ্য কাউকে শাস্তি দেওয়া নয়, বরং কোম্পানিগুলির আচরণে পরিবর্তন আনা। পাশাপাশি এও বলা হয়েছে যে, এই কোম্পানিগুলি মার্কিন ট্রেজারি বিভাগে আবেদন করে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারে।
বিবৃতিতে এও স্পষ্ট করা হয়েছে যে, আমেরিকা ইরানের তেল থেকে হওয়া আয় বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর ফলে আঞ্চলিক নিরাপত্তা উন্নত রাখতে সাহায্য পাওয়া যায়।
বিষয়টি কতটা গুরুতর?
বিষয়টি শুধু ব্যবসায়িক নয়, এর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও জড়িত। আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমেরিকা কর্তৃক ভারতীয় কোম্পানিগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা, দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে।
অন্যদিকে, এটাও দেখা যাচ্ছে যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন বিশ্বব্যাপী কোম্পানিগুলোকে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে ইরান-এর মতো দেশের সঙ্গে ব্যবসা করার সময় তাদের মার্কিন আইনের প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে।