উত্তরকাশীর ধারালি, হর্ষিল এবং সুক্কি টপে মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে ব্যাপক ধ্বংসলীলা। ১০ জনের মৃত্যু, সেনা জওয়ান নিখোঁজ। ১৩০ জনেরও বেশি মানুষকে সফলভাবে উদ্ধার করা হয়েছে।
Uttarakhand Cloudburst: উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলায় মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে ব্যাপক ধ্বংসলীলা হয়েছে। ধারালি গ্রাম সহ হর্ষিল এবং সুক্কি টপে বন্যা ও ধসের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত। এ পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে, যেখানে ১০ জন সেনা জওয়ান সহ আরও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। সেনা, এসডিআরএফ, এনডিআরএফ এবং স্থানীয় প্রশাসন যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে।
মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে বিধ্বংসী বন্যা
উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলার ধারালি গ্রামে সোমবার গভীর রাতে হঠাৎ মেঘ ভাঙে। এই ঘটনা ক্ষীরগঙ্গা নদীর জল catchment এলাকায় ঘটেছে, যার ফলে নদীতে প্রবল স্রোত এবং ধসের সাথে বন্যা দেখা যায়। এই বন্যা ধারালি গ্রামকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। জলের বেগ এতটাই বেশি ছিল যে তিন-চার তলা বাড়ি এবং ২০টিরও বেশি হোটেল, হোমস্টে ও বাড়িঘর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে।
ধারালি ছাড়াও সুক্কি ও হর্ষিলও ক্ষতিগ্রস্ত
বন্যা শুধু ধারালিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ক্ষীরগঙ্গা নদীর প্রবল স্রোত পাহাড়ের দুটি দিকে তার পথ তৈরি করে। একটি ধারা ধারালির দিকে যায় এবং অন্যটি সুক্কি গ্রামের দিকে। সুক্কি টপ এবং হর্ষিল এলাকাতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হর্ষিল আর্মি ক্যাম্পের হেলিপ্যাড ডুবে গেছে এবং ক্যাম্পের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে।
এ পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু, সেনার ১০ জওয়ান নিখোঁজ
এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও, সেনার ১০ জন জওয়ানসহ অনেক নাগরিক নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। স্থানীয় প্রশাসন, সেনার ১৪তম রাজরিফ ইউনিট, এসডিআরএফ, এনডিআরএফ এবং পুলিশ পুরো শক্তি দিয়ে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। কর্নেল হর্ষবর্ধনের নেতৃত্বে প্রায় ১৫০ জন সৈনিক উদ্ধার অভিযানে যুক্ত রয়েছেন।
১৩০ জনের বেশি মানুষকে বাঁচানো গেছে
উদ্ধার অভিযান একটানা চলছে। সেনা ও উদ্ধারকারী দলগুলো এ পর্যন্ত ১৩০ জনের বেশি মানুষকে নিরাপদে উদ্ধার করেছে। অনেককে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে স্থানান্তর করা হয়েছে, বাকিদের অস্থায়ী শিবিরে রাখা হয়েছে।
অর্ধেক ধারালি গ্রাম ধসে বিধ্বস্ত
ধারালি গ্রাম, যা গঙ্গোত্রী ধাম যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান, এই দুর্যোগের সবচেয়ে বড় শিকার হয়েছে। গ্রামের প্রায় অর্ধেক অংশ ধস ও কাদায় ঢেকে গেছে। অনেক পরিবারের বাড়ি, দোকান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। উদ্ধারকারী দল ধসের নিচে চাপা পড়া লোকদের সন্ধান করছে।
শহ खोजी কুকুরের দল মোতায়েন
এনডিআরএফ প্রথমবারের মতো উত্তরাখণ্ডে মৃতদেহ খুঁজে বের করার জন্য বিশেষ ডগ স্কোয়াড মোতায়েন করেছে। এই টিমকে দিল্লি থেকে এয়ারলিফট করা হয়েছে। এছাড়াও, উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে, যার প্রতিটি দলে ৩৫ জনের বেশি প্রশিক্ষিত জওয়ান রয়েছে।
স্টেট কন্ট্রোল রুম থেকে নজরদারি
ধারালি অঞ্চলে আসা এই দুর্যোগের উপর নজরদারি স্টেট কন্ট্রোল রুম থেকে করা হচ্ছে। স্যাটেলাইট ও ড্রোন এর মাধ্যমেও এলাকার পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে, যাতে ত্রাণ কাজগুলো আরও ভালোভাবে পরিচালনা করা যায়।
খারাপ আবহাওয়া ত্রাণ কাজে বাধা দিচ্ছে
পুরো উত্তরাখণ্ডে একটানা বৃষ্টির কারণে উদ্ধার অভিযানে অনেকবার বাধা আসছে। ভূমিধসের ঘটনাও ঘটছে, যার কারণে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। আকাশপথে উদ্ধারকাজেও অসুবিধা হচ্ছে, কারণ অনেক এলাকায় দৃশ্যমানতা খুবই কম।
হরিদ্বারে রেললাইন बाधित
হরিদ্বারের ভীমগৌড়া টানেলের কাছে পাহাড়ের ধস রেললাইনের ওপর পড়ায় হরিদ্বার-দেরাদুন রেল পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে এবং যাত্রীদের বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শোকপ্রকাশ
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন যে রাজ্য সরকারের তত্ত্বাবধানে ত্রাণ কাজ দ্রুত চলছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সম্ভাব্য সব ধরনের সাহায্য করা হবে। তিনি মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামির কাছ থেকেও পরিস্থিতির খবর নিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন যে কেন্দ্র সরকার উত্তরাখণ্ডকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
বৃষ্টি নিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি
আবহাওয়া দফতর উত্তরাখণ্ডে আগামী দিনে আরও ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে। বুধবার হরিদ্বার, নৈনিতাল এবং উধম সিং নগর জেলাগুলিতে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। একই সময়ে, চম্পাওয়াত, বাগেশ্বর, উত্তরকাশী, পৌড়ি, টিहरी এবং দেরাদুন জেলাগুলিতে অরেঞ্জ অ্যালার্ট ঘোষণা করা হয়েছে। এতে স্পষ্ট যে সংকট এখনও কাটেনি এবং लोगोंको সতর্ক থাকার প্রয়োজন।