রাশিয়া কর্তৃক পাকিস্তানি সংবাদপত্র 'দ্য ফ্রন্টিয়ার পোস্ট'-এর বিরুদ্ধে রুশ-বিরোধী মতামত প্রচারের অভিযোগ

রাশিয়া কর্তৃক পাকিস্তানি সংবাদপত্র 'দ্য ফ্রন্টিয়ার পোস্ট'-এর বিরুদ্ধে রুশ-বিরোধী মতামত প্রচারের অভিযোগ

রাশিয়া পাকিস্তানি সংবাদপত্র ‘দ্য ফ্রন্টিয়ার পোস্ট’-এর বিরুদ্ধে রুশ-বিরোধী মতামত প্রচারের অভিযোগ এনেছে। রুশ দূতাবাস জানিয়েছে যে, সংবাদপত্রটির প্রতিবেদন পক্ষপাতদুষ্ট এবং এটি পশ্চিমা গণমাধ্যমের আখ্যানকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই ইস্যুতে কূটনৈতিক উত্তেজনা বেড়েছে।

বিশ্ব সংবাদ: রাশিয়া ও পাকিস্তানের মধ্যে গণমাধ্যম নিয়ে উত্তেজনা বেড়েছে। রাশিয়া পাকিস্তানের ইংরেজি সংবাদপত্র ‘দ্য ফ্রন্টিয়ার পোস্ট’-এর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছে যে, এই সংবাদপত্রটি ক্রমাগত রুশ-বিরোধী মতামত প্রচার করছে এবং পশ্চিমা দেশগুলির প্রচারণাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই অভিযোগ পাকিস্তানের গণমাধ্যম নীতি, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতি নিয়ে বড় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এই বিতর্ককে কেবল একটি বিবৃতি বা প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে না, বরং এটি এখন উভয় দেশের সম্পর্কের সংবেদনশীল দিকগুলোকেও প্রভাবিত করছে।

রুশ দূতাবাসের বিবৃতি

ইসলামাবাদে অবস্থিত রুশ দূতাবাস একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করে বলেছে যে, ‘দ্য ফ্রন্টিয়ার পোস্ট’-এ প্রকাশিত বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক সংবাদ এবং সম্পাদকীয় বিষয়বস্তু রুশ-বিরোধী। দূতাবাস জানিয়েছে যে, সংবাদপত্রটির প্রতিবেদনে ভারসাম্যের অভাব দেখা যায় এবং রাশিয়া সম্পর্কে ইতিবাচক বা নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিযুক্ত নিবন্ধগুলিকে ইচ্ছাকৃতভাবে স্থান দেওয়া হয় না। রাশিয়া দাবি করেছে যে, সংবাদপত্রটির সংবাদ নেটওয়ার্ক মার্কিন রাজধানী ওয়াশিংটন দ্বারা প্রভাবিত, যেখানে সম্পাদকীয় দল রাশিয়ার বিদেশ নীতির কঠোর সমালোচনাকারী বিশ্লেষক, লেখক এবং ভাষ্যকারদের অগ্রাধিকার দেয়।

মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাকি রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব

রুশ দূতাবাস তাদের বিবৃতিতে এটিও স্পষ্ট করেছে যে, এটি ‘Freedom of Expression’ (মত প্রকাশের স্বাধীনতা)-এর বিষয় নয়, বরং এটি ‘Political Bias’ (রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব)-এর বিষয়। রাশিয়া বলছে যে, যে কোনও গণমাধ্যম সংস্থার অধিকার আছে যে কোনও বিষয়ে মতামত প্রকাশের, কিন্তু যখন ক্রমাগত একতরফা বিষয়বস্তু প্রকাশিত হয় এবং অন্য মতাদর্শ বা দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয়, তখন এটি সাংবাদিকতা না হয়ে প্রচারে (Propaganda) পরিণত হয়। দূতাবাসের মতে, সংবাদপত্রটির ভাষা ও বিষয়বস্তুতে ‘Russophobic’ অর্থাৎ রাশিয়ার প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব স্পষ্ট দেখা যায়।

আফগানিস্তান সম্মেলনের কভারেজ না করায় আপত্তি

রাশিয়া এও বলেছে যে, যদি ‘দ্য ফ্রন্টিয়ার পোস্ট’ নিরপেক্ষ ও ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিবেদনের নীতি অনুসরণ করত, তাহলে তারা ৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ‘মস্কো ফরম্যাট কনসালটেশন অন আফগানিস্তান’ সম্মেলনকে উপেক্ষা করত না। এই বৈঠক আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং এটিকে চীন, ইরান, পাকিস্তান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলির গণমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলি গুরুত্ব সহকারে প্রতিবেদন করেছিল। কিন্তু ‘দ্য ফ্রন্টিয়ার পোস্ট’-এ এই সম্মেলনের কোনও উল্লেখই পাওয়া যায়নি। রাশিয়া বলছে যে, এটি স্পষ্ট ইঙ্গিত যে সংবাদপত্রটির সম্পাদকীয় নীতি পূর্বনির্ধারিত আখ্যানের উপর ভিত্তি করে তৈরি।

রাশিয়ার অর্থনীতি নিয়ে করা দাবির জবাব

সংবাদপত্রটি তাদের কিছু প্রতিবেদনে লিখেছিল যে, পশ্চিমা দেশগুলির আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার অর্থনীতি দুর্বল হচ্ছে। রুশ দূতাবাস এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে আনুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। দূতাবাস জানিয়েছে যে, ২০২৪ সালে রাশিয়ার জিডিপি ৪.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং উৎপাদন খাতে ৮.৫ শতাংশ বৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছে। বেকারত্বের হার মাত্র ২.৫ শতাংশ। দূতাবাসের মতে, এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে রাশিয়ার অর্থনীতি শুধু স্থিতিশীলই নয়, বরং উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া বলছে যে, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও উৎপাদন, রপ্তানি এবং শিল্পোন্নতিতে কোনও পতন আসেনি।

রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা নিয়ে জবাব

সংবাদপত্রটিতে রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। এর জবাবে রাশিয়া বলেছে যে, তাদের সামরিক প্রস্তুতি এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা আগের চেয়ে আরও উন্নত। দূতাবাস ‘বুরেভেস্টনিক’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ‘পোসাইডন’ আন্ডারওয়াটার ভেহিকলের সাম্প্রতিক পরীক্ষার কথা উল্লেখ করেছে। রাশিয়া বলছে যে, তাদের প্রতিরক্ষা শক্তি এবং প্রযুক্তিগত বিকাশ নিয়ে ছড়ানো সন্দেহের উদ্দেশ্য হল রাশিয়ার বৈশ্বিক অবস্থান এবং কৌশলগত প্রভাবকে দুর্বল দেখানো।

পাকিস্তানি জনগণের প্রতি রাশিয়ার আবেদন

তাদের বিবৃতির শেষে রুশ দূতাবাস পাকিস্তানের জনগণের কাছে আবেদন করেছে যে, তারা কেবল একটি উৎসের উপর নির্ভর করে খবর না পড়েন। দূতাবাস বলেছে যে, গণমাধ্যম ব্যবহারকারীর উচিত বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা এবং তারপর নিজের বিচারবুদ্ধি দিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো। রাশিয়া বলছে যে, বিদেশ-সমর্থিত গণমাধ্যম প্রায়শই তাদের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থ অনুযায়ী খবর উপস্থাপন করে এবং এমন পরিস্থিতিতে আসল চিত্র অনেক সময় অস্পষ্ট হয়ে যায়।

Leave a comment