অবসরের পরেও পাঁচ দফা পুনর্নিয়োগ! স্বাস্থ্য–শিক্ষার বিশেষ সচিবের পদ ঘিরে তীব্র বিতর্ক

অবসরের পরেও পাঁচ দফা পুনর্নিয়োগ! স্বাস্থ্য–শিক্ষার বিশেষ সচিবের পদ ঘিরে তীব্র বিতর্ক

রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা দফতরের বিশেষ সচিব পদে টানা চার বছর ধরে রয়েছেন একই ব্যক্তি। ২০২৩ সালের মার্চে অবসর নেওয়ার পরও তাঁকে একবার নয়, পরপর পাঁচবার পুনর্নিয়োগ করেছে সরকার। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর মেয়াদ শেষ হলেও কি আবারও তাঁর চেয়ারে থাকা নিশ্চিত হবে? এই প্রশ্ন এখন ঘুরছে চিকিৎসক মহল থেকে প্রশাসনিক স্তরে।

পুনর্নিয়োগে ক্ষোভ বাড়ছে চিকিৎসক মহলে

স্বাস্থ্য-শিক্ষা বিভাগে দায়িত্বে রয়েছেন প্রাক্তন অধ্যাপক অনিরুদ্ধ নিয়োগী। ২০২১ সালের জুনে কল্যাণীর জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ থেকে সরাসরি তাঁকে স্বাস্থ্যভবনে বিশেষ সচিবের আসনে বসানো হয়। অবসরের বয়সসীমা পেরিয়ে গেলেও, তাঁকে ওএসডি তথা স্পেশাল সেক্রেটারি মেডিক্যাল এডুকেশন করে রাখা হয়েছে। চিকিৎসক–শিক্ষক মহলের একাংশ মনে করছেন, এভাবে টানা পুনর্নিয়োগ অন্যায্য ও প্রশ্নবিদ্ধ।

যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত, অভিযোগ উঠছে পদ্ধতি নিয়েও

রাজ্যে বর্তমানে ২৬টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ, চারটি পিজি প্রতিষ্ঠান ও একটি স্বাস্থ্য-পরিবারকল্যাণ ইনস্টিটিউট রয়েছে। প্রিন্সিপাল–ডিরেক্টর মিলিয়ে অধ্যক্ষ পদমর্যাদার শিক্ষক-চিকিৎসকের সংখ্যা অন্তত ৩১। এছাড়াও শতাধিক সিনিয়র অধ্যাপক রয়েছেন। তাঁদের উপযুক্ততা থাকা সত্ত্বেও, বিশেষ সচিব পদে নতুন কাউকে না বসিয়ে একই ব্যক্তিকে রাখার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ বাড়ছে। অভিযোগ উঠছে— যোগ্য প্রার্থীদের আবেদন জানানোর কোনও সুযোগই দেওয়া হচ্ছে না।

প্রশাসনিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন

অভিযোগকারীরা বলছেন, যুগ্ম সচিব পদ তুলে হঠাৎ বিশেষ সচিব পদ সৃষ্টির বৈধতা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। রাতারাতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত এক অধ্যাপককে কীভাবে সরাসরি স্বাস্থ্যভবনে বসানো হলো, তা নিয়েও উঠছে নৈতিকতার প্রশ্ন। বালির বাসিন্দা শিক্ষক বিশ্বজিৎ মিত্র মুখ্যসচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, পাঁচবার পুনর্নিয়োগের নথি সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি— যা আরও সন্দেহ বাড়াচ্ছে।

সরকারের নীরবতা, বাড়ছে জল্পনা

আগামী ১ অক্টোবর থেকে কি বিশেষ সচিব পদে নতুন কাউকে দেখা যাবে? নাকি অনিরুদ্ধ নিয়োগীকেই ফের রাখা হবে? এই প্রশ্ন এখন লাখ টাকার। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, “সব দিক ভেবে নিয়োগ হয়েছে। পুনর্নিয়োগের সিদ্ধান্ত সরকারের। আগে থেকে কিছু বলা যাবে না।” অন্যদিকে বিশেষ সচিব অনিরুদ্ধ নিয়োগীর সাফ কথা— আমি নিজে কোনও অনুরোধ করিনি। সরকার চাইলে সেটা তাদের সিদ্ধান্ত।

৬৫ বছর বয়সে অবসরের পরও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে টানা পাঁচ বার পুনর্নিয়োগ— এই নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত ঘিরে তীব্র বিতর্ক ছড়িয়েছে স্বাস্থ্যভবনে। সরকারি চিকিৎসক–শিক্ষক মহলের প্রশ্ন, যোগ্য প্রার্থী শতাধিক থাকলেও কেন একজনকেই বারংবার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে? অভিযোগ জমা পড়েছে মুখ্যসচিবের দপ্তরেও।

Leave a comment