ত্রিমুখী ঘূর্ণাবর্তের জালে দক্ষিণবঙ্গ, সপ্তাহান্তেও জারি থাকবে বৃষ্টি

ত্রিমুখী ঘূর্ণাবর্তের জালে দক্ষিণবঙ্গ, সপ্তাহান্তেও জারি থাকবে বৃষ্টি
সর্বশেষ আপডেট: 30-11--0001

ওড়িশা ও সংলগ্ন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণাবর্ত, পূর্ব-পশ্চিম অক্ষরেখা এবং সক্রিয় মৌসুমী বায়ু মিলিয়ে এক ত্রিমুখী প্রাকৃতিক বন্ধনে জড়িয়ে পড়েছে দক্ষিণবঙ্গ। এই তিন উপাদানের সম্মিলিত প্রভাবে রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে বৃষ্টির দাপট। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, রবিবার পর্যন্ত বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারী বৃষ্টি চলবে একাধিক জেলায়। উত্তরবঙ্গে এই মুহূর্তে বৃষ্টির প্রকোপ কিছুটা কমলেও, আগামী সপ্তাহের শুরুতেই ফের প্রবল বর্ষণের আভাস মিলছে। প্রাকৃতিক অবস্থান বলছে, বাংলার আকাশে অন্তত আরও কয়েকদিন রোদ্দুরের দেখা মিলবে না।

আকাশ কালো, হাওয়া দমকা, দক্ষিণবঙ্গে জারি টানা বৃষ্টির সতর্কতা

দক্ষিণবঙ্গের আকাশ জুড়ে ঘন কালো মেঘের আনাগোনা চলছেই। সেই সঙ্গে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে বইছে ঝোড়ো হাওয়া। হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পাশাপাশি বজ্রবিদ্যুৎও দেখা দিতে পারে বলে জানাচ্ছে হাওয়া অফিস। তবে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা—বিশেষ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব-পশ্চিম বর্ধমান, দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলায়। প্রশাসনিক স্তরে জারি হয়েছে সতর্কতা, নিচু এলাকা জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা।

শনি-রবিবার বিরতির পরেই উত্তরবঙ্গে প্রবল বৃষ্টির দ্বিতীয় ধাক্কা

উত্তরবঙ্গে আপাতত শনি ও রবিবার কিছুটা স্বস্তি মিললেও, সপ্তাহের শুরুতেই অর্থাৎ সোমবার থেকে ফের সক্রিয় হয়ে উঠবে বর্ষা। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার সহ পার্বত্য ও সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস স্পষ্ট। দিনাজপুরের দুই জেলাতেও বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টির তাণ্ডব চলবে। হাওয়ার গতিবেগ এবং বজ্রপাতের আশঙ্কাও যথেষ্ট রয়ে যাচ্ছে। এই প্রবণতা বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে, জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।

কলকাতায় মেঘ-ঝড়ের খেলা জারি, সাময়িক স্বস্তির ইঙ্গিত আগামী সপ্তাহে

রাজ্যের রাজধানী কলকাতা যেন থেমে থেমে ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে এক অদৃশ্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরেই শহরবাসী সকাল-বিকেল কখনও মেঘলা আকাশ, কখনও হালকা বৃষ্টির হাতছানিতে দিন কাটাচ্ছেন। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস বলছে, এই ধারা রবিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। যেকোনও মুহূর্তে নেমে আসতে পারে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ, সঙ্গে থাকছে তর্জন-গর্জন করা বজ্রবিদ্যুৎও।

কলকাতার আকাশে এখনই যে রোদ উঠবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বরং ঘন ঘন পরিবর্তনশীল আবহাওয়া নিয়ে সতর্ক করেছে দফতর। বিশেষ করে ঘণ্টায় ৩০-৪০ কিলোমিটার বেগে বইতে থাকা দমকা ঝোড়ো হাওয়া নাগরিকদের চিন্তা বাড়াচ্ছে। কেউ যদি ছাতা ছাড়াই বের হন, তবে খানিকটা ঝুঁকিতেই থাকতে হবে।

তবে সুখবর একটাই—আপাতত সোমবার থেকে বৃষ্টির তীব্রতা কমবে বলে পূর্বাভাস। কিন্তু এখানেই শেষ নয় দুর্ভোগের। কারণ আকাশ পরিষ্কার হলেই রোদ আর বাতাসের জলীয় বাষ্প মিলিয়ে তৈরি হবে অস্বস্তিকর গরমের পরিস্থিতি। শহরের তাপমাত্রা থাকবে তুলনামূলকভাবে উঁচুতে, ফলে গায়ে ঘাম আর অস্বস্তির অনুভব তাড়াতে পারবেন না কেউই। কলকাতাবাসীকে তাই আপাতত ধৈর্য ধরেই বর্ষার ভাপা-ভেজা আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।

উঠছে-নামছে পারদ, রোদ উঠলেই ঘাম ঝরাচ্ছে শহরবাসী

কলকাতার আবহাওয়া আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক থাকলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। শুক্রবার শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের তুলনায় সামান্য বেশি। আবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩১.২ ডিগ্রি, স্বাভাবিকের চেয়ে ১.৪ ডিগ্রি কম। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৮০ থেকে ৯৫ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। ফলে রোদ উঠলেই ঘামের স্রোত এবং চরম অস্বস্তির মধ্যেই কাটছে শহরবাসীর দিন। শেষ ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ২.৫ মিলিমিটার, কিন্তু আর্দ্রতা যেন বাড়িয়ে তুলেছে অসহ্য গরমের অনুভূতি।

Leave a comment