২০২৫ সালে মোট চারটি গ্রহণ লাগবে, যার মধ্যে দুটি সূর্য গ্রহণ এবং দুটি চন্দ্র গ্রহণ হবে। এই চারটি মহাজাগতিক ঘটনার মধ্যে এখন পরবর্তীটি হলো বছরের দ্বিতীয় সূর্য গ্রহণ, যা সেপ্টেম্বরে লাগবে। এই সূর্য গ্রহণ জ্যোতির্বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে এর প্রভাব গণ্য করা হবে না, কারণ এটি ভারতে দেখা যাবে না।
কীভাবে সূর্য গ্রহণ লাগে
সূর্য গ্রহণ তখন হয় যখন চাঁদ, পৃথিবী এবং সূর্যের মধ্যে এমনভাবে আসে যে এটি সূর্যের আলোকে পৃথিবীতে পৌঁছাতে কিছুক্ষণের জন্য বাধা দেয়। যখন চাঁদ সম্পূর্ণরূপে সূর্যকে ঢেকে দেয়, তখন তাকে পূর্ণ সূর্য গ্রহণ বলে, এবং যখন চাঁদ সূর্যের কেবল কিছু অংশ ঢাকে, তখন তাকে আংশিক সূর্য গ্রহণ বলা হয়। এই ঘটনা কেবল অমাবস্যার দিনই ঘটতে পারে।
গ্রহণের তারিখ ও সময়
২০২৫ সালের দ্বিতীয় সূর্য গ্রহণ ২১ সেপ্টেম্বর রাতে শুরু হবে। ভারতীয় সময় অনুযায়ী, এই গ্রহণ রাত ১১টায় শুরু হবে এবং পরের দিন অর্থাৎ ২২ সেপ্টেম্বর সকাল ৩টা ২৪ মিনিট পর্যন্ত চলবে। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে এই গ্রহণ ৪ ঘণ্টা ২৪ মিনিট ধরে চলবে। যদিও এটি একটি আংশিক সূর্য গ্রহণ হবে।
ভারতে দেখা যাবে না এই সূর্য গ্রহণ
এই সূর্য গ্রহণ ভারতে দেখা যাবে না। অর্থাৎ, দেশের কোনো অংশে মানুষ এই মহাজাগতিক ঘটনাকে নিজের চোখে দেখতে পারবে না। এর প্রধান কারণ হলো এই গ্রহণ সেই সময় লাগবে যখন ভারতে রাতের বেলা থাকবে এবং সূর্য দেখা যাবে না। এছাড়াও, গ্রহণের কক্ষপথ এমন হবে যে এটি কেবল পৃথিবীর কিছু বিশেষ অংশে দেখা যাবে।
কোন দেশে দেখা যাবে সূর্য গ্রহণ
এই আংশিক সূর্য গ্রহণ বিশ্বের কিছু নির্বাচিত অংশে দেখা যাবে। নিউজিল্যান্ড, ফিজি, অ্যান্টার্কটিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষ এই মহাজাগতিক দৃশ্য দেখতে পারবে। এদের মধ্যে কিছু অঞ্চলে এই গ্রহণ স্পষ্টভাবে দেখা যাবে। যেখানে সূর্য দিগন্তের কাছাকাছি থাকবে, সেখানে এর ঝলক সীমিত সময়ের জন্য পাওয়া যাবে।
ভারতে সূতক কাল প্রযোজ্য হবে না
যেহেতু এই সূর্য গ্রহণ ভারতে দেখা যাবে না, তাই এখানে ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী সূতক কালও প্রযোজ্য হবে না। সাধারণত সূর্য বা চন্দ্র গ্রহণ লাগার ১২ ঘণ্টা আগে সূতক কাল শুরু হয়ে যায়, যেখানে মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, পূজা-অর্চনা স্থগিত করে দেওয়া হয় এবং বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। কিন্তু যেহেতু এই গ্রহণ ভারতে দেখা যাবে না, তাই এখানকার মন্দির, পূজা-অর্চনা এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকবে।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য সাবধানতার কথা কেন বলা হয়
গ্রহণের সময় প্রায়শই গর্ভবতী মহিলাদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই বিশ্বাস বহু বছর ধরে চলে আসছে, যেখানে বলা হয় যে গ্রহণের সময় শরীরে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। যদিও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে এর কোনো প্রমাণ নেই, তবে ঐতিহ্যগতভাবে লোকেরা এখনও এই সময়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করে। তবে যেহেতু এই গ্রহণ ভারতে দেখা যাবে না, তাই এমন কোনো অতিরিক্ত সাবধানতার প্রয়োজন হবে না।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে গ্রহণ
জ্যোতির্বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সূর্য গ্রহণ একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং অধ্যয়নযোগ্য ঘটনা। বিজ্ঞানীদের জন্য এটি একটি সুযোগ যখন তারা সূর্যের চারপাশে থাকা করোনা (সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডল) অধ্যয়ন করতে পারে। যদিও এটি আংশিক গ্রহণ হওয়ার কারণে এর বৈজ্ঞানিক উপযোগিতা সীমিত হবে, তবুও যে অঞ্চলগুলিতে এটি দেখা যাবে সেখানে কিছু বিশ্লেষণ সম্ভব হতে পারে।
২০২৫ সালের বাকি গ্রহণ
এই বছর মোট চারটি গ্রহণ হবে। এর মধ্যে প্রথম সূর্য গ্রহণ ২৯ মার্চ হয়ে গেছে, যা একটি পূর্ণ সূর্য গ্রহণ ছিল এবং সেটিও ভারতে দেখা যায়নি। এখন ২১-২২ সেপ্টেম্বর এই দ্বিতীয় সূর্য গ্রহণ লাগবে। এছাড়াও, বছরে দুটি চন্দ্র গ্রহণও ঘটবে। প্রথম চন্দ্র গ্রহণ ১৪-১৫ মার্চ হয়ে গেছে এবং দ্বিতীয় চন্দ্র গ্রহণ ৭-৮ সেপ্টেম্বর লাগবে, যা আংশিক হবে এবং ভারতের কিছু অংশে দেখা যেতে পারে।
ভবিষ্যতের মহাজাগতিক ঘটনার উপর নজর
গ্রহণ জাতীয় ঘটনা কেবল বিজ্ঞানী বা জ্যোতিষীদের জন্য নয়, বরং সাধারণ মানুষের জন্যও আগ্রহের বিষয়। লোকেরা এই ঘটনাগুলি দেখে উৎসাহিত হয় এবং তাদের সম্পর্কে আরও জানার চেষ্টা করে। তবে এটি মনে রাখতে হবে যে সূর্য গ্রহণকে কোনো সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়া খালি চোখে দেখা চোখের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। যেখানে এই গ্রহণ দেখা যাবে, সেখানে লোকেদের প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।