শ্রাবণ মাসে কোন গাছ লাগালে ভাগ্য বদলাতে পারে?

শ্রাবণ মাসে কোন গাছ লাগালে ভাগ্য বদলাতে পারে?

শ্রাবণ মাস হিন্দুধর্মে শুধু পূজা-পাঠ ও ভক্তির জন্য বিশেষ নয়, এই সময়ে করা প্রতিটি ধর্মীয় ও পরিবেশগত কাজ বহুগুণ ফল দেয়। এই মাসে বাড়িতে কিছু বিশেষ গাছ লাগানোর ঐতিহ্য ও বিশ্বাস রয়েছে, যা জীবনকে সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তিতে পরিপূর্ণ করে তোলে।

এমন সময়ে যখন সবাই আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং মানসিক শান্তির সন্ধানে থাকে, শ্রবণের এই পবিত্র উপলক্ষ একটি সোনালী সুযোগ নিয়ে আসে। বাস্তু এবং ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে কিছু গাছ বাড়িতে লাগালে ইতিবাচক শক্তি আসে, বাড়িতে লক্ষ্মী এবং শিবের বাস হয় এবং দুর্ভাগ্যও দূর হতে শুরু করে।

বেল গাছের চারা: শিবের বিশেষ কৃপা পাওয়ার মাধ্যম

শ্রাবণ মাস শিবের ভক্তির মাস হিসাবে বিবেচিত হয় এবং তাই বেল গাছ লাগানো খুব শুভ। এই গাছটি ভগবান শিবের কাছে অত্যন্ত প্রিয় এবং এটি পূজায় বিশেষ স্থান অধিকার করে।
বেল গাছ যদি বাড়ির উত্তর দিকে বা পশ্চিম দিকে লাগানো হয়, তবে এটি কেবল আধ্যাত্মিক শক্তি বাড়ায় না, সেই সাথে বাড়িতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতেও সাহায্য করে।

শমী গাছ: শনিদেব ও শিব উভয়ের কৃপা পাওয়ার গাছ

শমী গাছও শ্রাবণ মাসে লাগানোর জন্য অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এটি বাড়ির প্রধান দরজার বাম দিকে লাগানোর প্রথা আছে।
এই গাছের বিশেষত্ব হল এটি কেবল শিবের কৃপা এনে দেয় তাই নয়, শনিদেবকেও প্রসন্ন করে।
শমী গাছ যদি শ্রাবণ মাসের শনিবার লাগানো হয়, তবে এটি নেতিবাচক শক্তি দূর করে এবং ধন বৃদ্ধি করে বলে মনে করা হয়।

তুলসী গাছ: বাড়িতে সুখ, শান্তি ও ইতিবাচকতার উৎস

তুলসী গাছ ভারতীয় সংস্কৃতিতে পবিত্রতার প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়। একে দেবী লক্ষ্মীর রূপও বলা হয়।
শ্রাবণ মাসে তুলসী গাছ লাগানো বিশেষভাবে ফলদায়ক বলে মনে করা হয়।
এই গাছটি বাড়ির উত্তর-পূর্ব দিকে বা উঠানের মাঝখানে লাগানো সবচেয়ে ভালো। এতে বাড়ির পরিবেশ শুদ্ধ থাকে এবং মানসিক চাপও কমে যায়।

হরসিঙ্গার গাছ: স্বাস্থ্য এবং সমৃদ্ধি উভয় ক্ষেত্রেই সহায়ক

হরসিঙ্গার, যা Parijat নামেও পরিচিত, শ্রাবণ মাসে খুবই শুভ বলে মনে করা হয়।
বাস্তু অনুসারে এটি বাড়ির পূর্ব দিকে লাগানো উচিত।
এই গাছ সম্পর্কে বিশ্বাস করা হয় যে এটি আর্থিক সঙ্কট দূর করে, ঘরে সুখ-শান্তি আনে এবং মানসিক শান্তিও প্রদান করে।
হরসিঙ্গারের ফুল রাতে ফোটে এবং এর সুগন্ধ পরিবেশকে ইতিবাচক শক্তিতে ভরে তোলে।

লক্ষ্মণা গাছ: ধন আগমনের প্রতীক

শ্রাবণ মাসে লক্ষ্মণা নামক গাছটিকেও শুভ মনে করা হয়। এটি বাড়িতে লাগালে মা লক্ষ্মীর কৃপা পাওয়া যায় বলে বিশ্বাস করা হয়।
এই গাছটি আপনি টবে, বারান্দায় বা বাড়ির বাগানে লাগাতে পারেন।
বলা হয়ে থাকে যে এই গাছটি নেতিবাচক শক্তি সরিয়ে ধন আকর্ষণ করে।
বাস্তু অনুসারে, এটি উত্তর দিকে লাগানো শুভ।

শ্রাবণে সবুজের সমারোহ ও আধ্যাত্মিকতার মেলবন্ধন

বর্ষার সময় হওয়ায় শ্রাবণ মাস গাছ লাগানোর সেরা সময়। মাটি আর্দ্র থাকে, পরিবেশে আর্দ্রতা থাকে এবং গাছপালা দ্রুত বেড়ে ওঠে।
এমন পরিস্থিতিতে, এই শুভ গাছগুলি যখন আপনি আপনার বাড়িতে লাগান, তখন এটি কেবল প্রকৃতির সাথে সংযোগের একটি মাধ্যম হয়ে ওঠে না, সেই সাথে আধ্যাত্মিকতা এবং ভাগ্যের দরজাও খুলে দেয়।

গাছের সঠিক দিকের গুরুত্ব

বাস্তুশাস্ত্রে গাছের সঠিক দিকের অনেক গুরুত্ব রয়েছে।
আপনি যদি এই গাছগুলিকে সঠিক দিকে লাগান, তবেই এটি সম্পূর্ণ ফল দেয়।
বেল গাছ উত্তর বা পশ্চিমে, শমী গাছ প্রধান দরজার বাম দিকে, তুলসী গাছ উত্তর-পূর্বে, হরসিঙ্গার গাছ পূর্বে এবং লক্ষ্মণা গাছ উত্তর দিকে লাগানো উচিত।

এই গাছগুলি ধর্মীয় বিশ্বাস এবং বৈজ্ঞানিক উভয় দিককেই যুক্ত করে

এই গাছগুলি লাগানোর ধর্মীয় কারণ তো আছেই, তবে এর পেছনে বৈজ্ঞানিক দিকও লুকিয়ে আছে।
যেমন, তুলসী বাতাসকে বিশুদ্ধ করে, হরসিঙ্গারের সুগন্ধ মানসিক চাপ কমায়, বেল পাতার রস বাতাসের জীবাণু ধ্বংস করে এবং শমী গাছ মাটির গুণাগুণ উন্নত করে।
এভাবে এই গাছপালা শুধু ভাগ্য পরিবর্তন করে না, জীবনকে সব দিক থেকে ইতিবাচক করে তোলে।

প্রতিটি গাছ এক একটি শক্তির উৎস

প্রতিটি গাছ নিজের মধ্যে একটি শক্তির কেন্দ্র। বেল গাছ আধ্যাত্মিক শক্তি দেয়, শমী গ্রহের অবস্থানকে উন্নত করে, তুলসী মানসিক শান্তি আনে, হরসিঙ্গার স্বাস্থ্য এবং সমৃদ্ধির সাথে জড়িত, এবং লক্ষ্মণা ধন-লাভের প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়।
শ্রাবণ মাস হল সেই সময় যখন আপনি এই পাঁচটি গাছকে গ্রহণ করে আপনার জীবনের দিক পরিবর্তন করতে পারেন, শুধু একটু শ্রদ্ধা এবং সঠিক তথ্যের প্রয়োজন।

Leave a comment