AAIB-এর রিপোর্টে প্রকাশ, আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার আগে দুটি ইঞ্জিনের ফুয়েল সুইচ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। FAA 2018 সালে এই ত্রুটি সম্পর্কে সতর্ক করেছিল, কিন্তু সেটিকে উপেক্ষা করা হয়েছিল।
বিমান দুর্ঘটনা: 12 জুন, আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনার ওপর এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (AAIB)-এর প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এই রিপোর্টে স্পষ্ট করা হয়েছে যে দুর্ঘটনার কয়েক সেকেন্ড আগে বিমানের দুটি ইঞ্জিনের ফুয়েল সুইচ প্রায় একই সঙ্গে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এটিকে একটি গুরুতর কারিগরি ত্রুটি হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এর পরে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দুটি ফুয়েল সুইচ আবার চালুও হয়ে যায়, কিন্তু ততক্ষণে বিমানের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় এবং দুর্ঘটনা ঘটে।
2018 সালেই সতর্কতা জারি করা হয়েছিল
AAIB-এর রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছে যে, আমেরিকার ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA) 2018 সালেই বোয়িং বিমানের ফুয়েল সুইচের সম্ভাব্য ত্রুটি নিয়ে একটি সতর্কতা জারি করেছিল। এই সতর্কতা স্পেশাল এয়ারওয়ার্থিনেস ইনফরমেশন বুলেটিন (SAIB No. NM-18-33) হিসেবে জারি করা হয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছিল যে বোয়িং-এর কিছু মডেলে ফুয়েল সুইচ নিরাপত্তা লক ছাড়াই চালু বা বন্ধ করা যেতে পারে।
ফুয়েল সুইচ লকিং সিস্টেম তৈরি করেছে বিপদ
FAA তাদের সতর্কতায় উল্লেখ করেছিল যে ফুয়েল সুইচের লকিং সিস্টেম সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ নয়। এই ত্রুটির কারণে সুইচটি অজান্তে বা সামান্য কম্পনেও নড়াচড়া করতে পারে। FAA সমস্ত এয়ারলাইনকে তাদের বিমানের ফুয়েল সুইচগুলি পরীক্ষা করার এবং যেখানে প্রয়োজন সেখানে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু এই সতর্কতাটি ছিল শুধুমাত্র একটি পরামর্শ, বাধ্যতামূলক নয়, তাই এয়ার ইন্ডিয়া এই বিষয়ে কোনও দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়নি।
এয়ার ইন্ডিয়ার গাফিলতিই কারণ
AAIB-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, FAA-এর এই পরামর্শকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি এবং এয়ার ইন্ডিয়া তাদের বিমানের ফুয়েল সুইচের লকিং পরীক্ষা করায়নি। যদি সময় থাকতে এই সতর্কতার ওপর কাজ করা হতো, তাহলে সম্ভবত এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। এটি এমন একটি উদাহরণ যেখানে একটি সম্ভাব্য ত্রুটির অবহেলা প্রাণঘাতী রূপ নিয়েছে।
পাইলট সংগঠন রিপোর্টের উপর প্রশ্ন তুলেছে
এয়ারলাইন পাইলট অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (ALPA) AAIB-এর রিপোর্টের ওপর আপত্তি জানিয়েছে। ALPA-র সভাপতি স্যাম থমাস বলেছেন যে এই তদন্তে পাইলটকে দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যেখানে আসল কারণ হল কারিগরি ত্রুটি। তাঁর বক্তব্য, রিপোর্টে ফুয়েল সুইচের ত্রুটি স্বীকার করা হলেও, দায়ভার পাইলটের উপর চাপানো হচ্ছে, যা ALPA সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করে।
FAA-এর ভূমিকা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন
এই ঘটনার পরে FAA-এর ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। যদি ফুয়েল সুইচে এমন গুরুতর ত্রুটি ছিল, তবে এটিকে শুধুমাত্র পরামর্শ হিসেবে কেন জারি করা হয়েছিল? FAA এটিকে "unsafe condition"-এর বিভাগে রাখেনি, তাই কোনও বাধ্যতামূলক নির্দেশ জারি করা হয়নি। এখন, যখন এই কারিগরি ত্রুটি একটি বাস্তব দুর্ঘটনার কারণ হয়েছে, তখন FAA-এর নীতির পর্যালোচনার দাবি উঠছে।
এটিও উদ্বেগের বিষয় যে বোয়িং-এর মতো নির্ভরযোগ্য বিমান প্রস্তুতকারক কেন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সুইচের জন্য এমন ডিজাইন তৈরি করেছে, যেখানে লকিং মেকানিজম ঠিক মতো কাজ করে না। এই ডিজাইন ত্রুটি এতটাই গুরুতর যে এটি জ্বালানি সরবরাহের উপর প্রভাব ফেলে এবং সরাসরি বিমান নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এখন বিশেষজ্ঞরা জোর দিচ্ছেন যে এই ধরনের সরঞ্জামের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনরায় পরীক্ষা করা উচিত। পাইলট সংগঠনগুলিরও বক্তব্য, প্রতিবার দুর্ঘটনার পরে শুধুমাত্র পাইলটকে দোষ দেওয়া সহজ, কিন্তু কারিগরি তদন্ত এবং সিস্টেমের দায়িত্বকে উপেক্ষা করা যায় না।