মে ডে... ভেসে থাকার ক্ষমতা নেই— শেষ চিৎকারের ১৫ সেকেন্ড পর ধ্বংস! এয়ার ইন্ডিয়া ট্র্যাজেডির তদন্তে উঠে এল গা শিউরে ওঠার তথ্য

মে ডে... ভেসে থাকার ক্ষমতা নেই— শেষ চিৎকারের ১৫ সেকেন্ড পর ধ্বংস! এয়ার ইন্ডিয়া ট্র্যাজেডির তদন্তে উঠে এল গা শিউরে ওঠার তথ্য
সর্বশেষ আপডেট: 30-11--0001

মে ডে বলে শেষ আর্তনাদ, পাইলটের সতর্কবার্তাও পড়ল অসার

আকাশের বুকে ভেসে থাকা একটি বোয়িং ড্রিমলাইনার। হঠাৎই ভেঙে পড়ে এক বহুতলের ছাদে। এই মুহূর্তের ঠিক ১৫ সেকেন্ড আগে, ককপিট থেকে ছুটে আসে এক গম্ভীর, আতঙ্কিত কণ্ঠস্বর—"মে ডে, মে ডে…। ব্লুমবার্গের রিপোর্ট বলছে, ওই আর্তনাদে সতর্ক হয়েছিল এটিসি, কিন্তু কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে সময় পায়নি তারা। যে সময় দরকার ছিল, তা ছিল না কারও হাতে। সেই ১৫ সেকেন্ডই লিখে দেয় শতাধিক যাত্রীর জীবনের ইতি।

অভিজ্ঞ পাইলটও আটকাতে পারলেন না নিয়তির খেলা

সুমিত সবরওয়াল—যিনি জীবনে ৮২০০ ঘণ্টা আকাশে উড়েছেন, অসংখ্য বিপদ সামলেছেন, সেই অভিজ্ঞ পাইলটও এবার থেমে গেলেন মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে। তাঁর শেষ আর্তনাদ, তাঁর কণ্ঠে ভেসে এল মৃত্যুভয়—বিমান শক্তি হারাচ্ছে, আমরা আর ভেসে থাকতে পারছি না! সেই চিৎকার আকাশে মিলিয়ে গেল, আর নিচে গড়ে উঠল মৃত্যুর ধ্বংসস্তূপ।

মে ডে’— এক আন্তর্জাতিক সংকেত, যার মানে শুধুই বাঁচার আকুতি

‘Mayday’—একটি সঙ্কেত, যার শিকড় ফরাসি শব্দ ‘m’aidez’ অর্থাৎ ‘আমাকে সাহায্য করুন’–এ। এই শব্দ উচ্চারিত হয় তখনই, যখন সামনে শুধুই মৃত্যু, পেছনে কোনও আশ্রয় নেই। আহমেদাবাদের আকাশেও সেই চিৎকার ভেসে এসেছিল, কিন্তু প্রযুক্তি, সংযোগ এবং সময়—সবই যেন সেদিন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।

বিমান উঠেছিল মাত্র ৬৫২ ফুট, তারপরই মৃত্যুর পতন

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বিমানটি রানওয়ে ছেড়ে আকাশে ওঠে ঠিকই, কিন্তু মাত্র ৬৫২ ফুট উচ্চতায় পৌঁছতেই সেটি হঠাৎ করে পড়তে শুরু করে। প্রতি মিনিটে ৪৭৫ ফুট বেগে নামতে থাকে বিমানটি, আর সেই ভয়াবহ গতির ধাক্কায় কোনও প্রতিরোধের সুযোগই রইল না।

ইঞ্জিন বিকল! নাকি আরও কোনও প্রযুক্তিগত গলদ?

এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (AAIB) প্রাথমিকভাবে বলেছে, বিমানটির দুটি ইঞ্জিনই একসঙ্গে বিকল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এমন অভিজ্ঞ পাইলটের উপস্থিতিতে শুধুমাত্র ইঞ্জিন বিকলেই এমন বিধ্বংসী পরিণতি—তাতে একরকম সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। কারণ তদন্তকারীদের মতে, অন্য আরও কোনও প্রযুক্তিগত ত্রুটি কি লুকিয়ে ছিল?

সিমুলেটরে ঘটানো হয় বিপর্যয়ের পুনর্নির্মাণ, ফল মিলল না

ফ্লাইট সিমুলেটরে বিমানের একই পরিস্থিতি তৈরি করে দেখা হয়েছে—ল্যান্ডিং গিয়ার নামানো, ডানার ফ্ল্যাপ ওপরে তোলা—কিন্তু সেখানেও এমন ভয়ানক দুর্ঘটনা ঘটেনি। এই পরীক্ষা প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে—তা হলে কি বোর্ডের কোনও সফটওয়্যার গ্লিচ ছিল? নাকি বিমানচালনার নির্দেশাবলীতে কোথাও ছিল ভুল?

বিধ্বস্ত কাঠামোর নিচে চাপা পড়ে গেছে শত স্বপ্ন

বিমানটি পড়ে গিয়েছিল এক বহুতলের ছাদে। তাতে শুধু যাত্রী নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় বহু ঘর, পরিবার ও ভবিষ্যৎ। চিৎকারে ভরে যায় এলাকা, ছুটে আসে উদ্ধারকারী দল। কিন্তু যে জীবন চলে যায়, তাকে ফেরানো যায় না। সেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে গেছে না বলা গল্প, অজস্র স্বপ্ন।

আকাশ থেকে ছিটকে পড়া যান্ত্রিক বিশ্বাসের মৃত্যুবার্তা

এটি শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং আকাশে আমাদের যে বিশ্বাস—যে বিমানে উঠলেই নিরাপদে পৌঁছব—সেই বিশ্বাসেরই এক নির্মম ভাঙন। প্রশ্ন উঠছে: এত বড় এয়ারলাইন্স, এত প্রযুক্তি, এত নিয়ন্ত্রণ—তবু কেন বারবার ভেঙে পড়ছে আকাশযান?

চোখে জল, কানে বাজে ‘মে ডে’—স্মৃতির পাতা থেকে মুছবে না এই মুহূর্ত

আজও যেন কানে বাজে সেই শেষ আওয়াজ—মে ডে… ভেসে থাকার ক্ষমতা নেই…। এটি কেবল পাইলটের নয়, এক মানবতার আর্তনাদ। আহমেদাবাদ ট্র্যাজেডি শুধু একটি বিমান দুর্ঘটনা নয়, এটি সভ্যতার প্রযুক্তি নির্ভরতার অন্ধবিশ্বাসের টেস্ট কেস—যেখানে ১৫ সেকেন্ডের ব্যবধানে জীবনের সব নিশ্চয়তা মুছে যায়।

Leave a comment