এয়ার ইন্ডিয়া AI171 দুর্ঘটনার তদন্তে বড়োসড়ো তথ্য প্রকাশ। দুর্ঘটনার আগে বিদ্যুৎ সরবরাহে ত্রুটি ধরা পরে। জ্বালানি সরবরাহ বন্ধের দাবি খারিজ হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টে নতুন মোড়।
Air India Plane Crash: আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান AI171 এর দুর্ঘটনার তদন্তে নতুন মোড়। পূর্বে পশ্চিমা গণমাধ্যম এই দুর্ঘটনার জন্য পাইলটদের দায়ী করেছিল। কিন্তু বর্তমানে যে তথ্য সামনে এসেছে, তা এই তত্ত্বকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে। তদন্তে জানা গেছে যে বিমানটির বিদ্যুৎ সরবরাহে গুরুতর ত্রুটি ছিল। এছাড়াও, বিমানের পিছনের অংশে আগুন লাগেনি, যা থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে দুর্ঘটনার মূল কারণ অন্য কিছু হতে পারে।
পশ্চিমা গণমাধ্যম পাইলটদের অভিযুক্ত করেছিল
১২ই জুন আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে উড্ডয়নের সময় এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI171 কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দুর্ঘটনার শিকার হয়। প্রাথমিক রিপোর্টের পর পশ্চিমা গণমাধ্যম দাবি করে যে পাইলট ইচ্ছাকৃতভাবে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল, যার ফলে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। তদন্তে প্রাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতে এই দাবি এখন সন্দেহের মধ্যে রয়েছে।
বিদ্যুৎ সরবরাহে ত্রুটি ছিল আসল কারণ
তদন্তকারী কর্মকর্তাদের মতে, বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে এর বিদ্যুৎ সরবরাহ বার বার ব্যাহত হচ্ছিল। এই দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একমাত্র যাত্রী বিশ্বাস কুমার রমেশও জানিয়েছেন যে দুর্ঘটনার আগে বিমানের আলো ক্রমাগত বন্ধ এবং চালু হচ্ছিল। এটি সরাসরি বিমানের পাওয়ার সাপ্লাইতে ত্রুটির দিকে ইঙ্গিত করে।
প্লেনের পিছনের অংশ পোড়েনি
দুর্ঘটনার পর তদন্ত দল প্লেনের পিছনের অংশটি প্রায় অক্ষত অবস্থায় পেয়েছে। সেখানে আগুনের কোনো চিহ্ন ছিল না। এই অংশে প্লেনের অক্সিলারি পাওয়ার ইউনিট (APU) ছিল, যা ইঞ্জিন চালু করতে এবং পাওয়ার ব্যাকআপ দিতে কাজ করে।
APU-তে বৈদ্যুতিক ত্রুটির ইঙ্গিত
তদন্তে APU এবং এর আশেপাশের অংশে বৈদ্যুতিক আগুন লাগার চিহ্ন পাওয়া গেছে। APU প্লেনের পেছনের দিকে থাকে এবং যখন ইঞ্জিন বন্ধ থাকে বা গ্রাউন্ডে থাকে, তখন এখান থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে APU যদি অকার্যকর হয়ে যায় বা শর্ট সার্কিট হয়, তাহলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে।
STAB POS XDCR-এ প্রযুক্তিগত ত্রুটি দেখা গিয়েছিল
দুর্ঘটনার আগে এই বিমানটি দিল্লি থেকে আহমেদাবাদে এসেছিল এবং সেই সময় STAB POS XDCR কম্পোনেন্টে ত্রুটি ধরা পড়েছিল। এই কম্পোনেন্টটিও প্লেনের পেছনের অংশে থাকে। টেকনিক্যাল টিম আহমেদাবাদ বিমানবন্দরে এই ত্রুটি মেরামত করেছিল, কিন্তু তদন্তে জানা গেছে যে এই মেরামত সম্ভবত সম্পূর্ণরূপে সফল হয়নি।
জ্বালানি সরবরাহ বন্ধের তত্ত্বের ওপর প্রশ্ন
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে পাওয়ার সাপ্লাই ব্যাহত হলে জ্বালানি সরবরাহের ওপরও প্রভাব পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে পাইলট সম্ভবত ইঞ্জিন পুনরায় চালু করার চেষ্টায় জ্বালানি চালু-বন্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করার পরে তা পুনরায় চালু করার সময় পাওয়া যায়নি এবং প্লেনটি বিধ্বস্ত হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে তা পুনরায় চালু করার প্রক্রিয়ায় মাত্র ১ সেকেন্ড সময় লাগে। যদি কোনো পাইলট ভুল করে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করেও থাকেন, তবে অন্য পাইলটের কাছে তা পুনরায় চালু করার যথেষ্ট সময় ছিল। এতে স্পষ্ট যে শুধুমাত্র জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করাকেই দুর্ঘটনার কারণ মনে করা সঠিক নয়।
নিরাপদ অংশ থেকে ক্রু সদস্যের মৃতদেহ উদ্ধার
দুর্ঘটনার পর প্লেনের পিছনের অংশ থেকে একজন কেবিন ক্রু সদস্যের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি সিট বেল্ট দিয়ে বাঁধা ছিলেন এবং ধাক্কার কারণে তার মৃত্যু হয়। এই মৃতদেহটি দুর্ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পর পাওয়া যায় এবং রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসার কারণে অনেকটা পচে গিয়েছিল। এতে আরও নিশ্চিত হওয়া যায় যে বিমানের পিছনের অংশে আগুন লাগেনি এবং ওই অংশটি অনেকটা অক্ষত ছিল।
AAIB-এর তদন্ত চলছে
Aircraft Accident Investigation Bureau (AAIB) বিমানের সমস্ত অংশ আহমেদাবাদে সংরক্ষণ করেছে। সমস্ত কম্পোনেন্টের बारीकी से जांच করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, STAB POS XDCR, APU এবং অন্যান্য অংশ থেকে ডেটা সংগ্রহ করে দুর্ঘটনার আসল কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে।