রানাঘাট লাইনে সংস্কারের কাজ, বাতিল ১০টি লোকাল ট্রেন, ছুটির দিনে বিপাকে নিত্যযাত্রী
একদিকে ছুটির আমেজ, অন্যদিকে রেলের বিজ্ঞপ্তিতে মন খারাপ বহু ট্রেনযাত্রীর। রবিবার সকালেই পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, মোট ১০টি লোকাল ট্রেন আজ বাতিল রাখা হয়েছে। রানাঘাট স্টেশনের ৪ নম্বর লাইনে জরুরি সংস্কারের কাজ চলায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে কৃষ্ণনগর ও শান্তিপুরের দিকের যাত্রীদের অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।
রাত পর্যন্ত চলবে সংস্কারের কাজ
রেল সূত্রের খবর অনুযায়ী, রবিবার রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত রানাঘাট স্টেশনের নির্দিষ্ট লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকবে। এই সময়সীমার মধ্যেই ট্র্যাকের রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। তবে এই সময় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বহু নিত্যযাত্রী ও সাধারণ যাত্রী।
বাতিল ট্রেনের তালিকা প্রকাশ
পূর্ব রেল প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, রানাঘাট-শান্তিপুর রুটের আপ ও ডাউন মিলিয়ে মোট ৬টি ট্রেন বাতিল হয়েছে — ৩১৭৮৫, ৩১৭৮১, ৩১৭৮৩, ৩১৭৮৮, ৩১৭৮২, ৩১৭৮৬। পাশাপাশি রানাঘাট-কৃষ্ণনগর লাইনের ৪টি ট্রেন — ৩১৭২৩, ৩১৭২৫, ৩১৭২২, ৩১৭২৬ আজ আর চলবে না।
শান্তিপুর থেকে নয়, যাত্রার শেষ ও শুরু রানাঘাটেই
শুধু বাতিল নয়, কিছু ট্রেনের রুটেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। বনগাঁ-শান্তিপুর লোকাল (৩৩৭৫২) ট্রেনটি আজ শান্তিপুর পর্যন্ত না গিয়ে রানাঘাটেই যাত্রা শেষ করবে। অপরদিকে শান্তিপুর-বনগাঁ (৩৩৭৫১) ট্রেন আজ শান্তিপুর থেকে ছাড়বে না, পরিবর্তে রানাঘাট থেকেই ছাড়বে।
রেলের বক্তব্য: যাত্রীদের স্বার্থেই আগাম সিদ্ধান্ত
পূর্ব রেলের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, লাইনের মেরামতি সময়মতো সম্পূর্ণ করতেই ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। যাত্রীদের দুর্ভোগ যাতে না হয়, তাই আগেভাগে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বাস্তবে রোজকার যাত্রী এবং ছুটির দিনে যাত্রার পরিকল্পনায় যাঁরা বেরিয়েছিলেন, তাঁদের অসুবিধা কম হয়নি।
আদ্রা ডিভিশনেও বাতিল বিশেষ মেমু ট্রেন
শুধু শিয়ালদহ নয়, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশনেও মেরামতির কাজ চলছে। ফলে আসানসোল-আদ্রা মেমু স্পেশাল ট্রেন ৬৮০৪৬ (আপ) ও ৬৮০৪৫ (ডাউন) — রবিবার, সোমবার এবং ২৪ থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত বাতিল থাকবে। এমনকী এই ট্রেনে যাঁরা নিয়মিত যাতায়াত করেন, তাঁদেরও রুট পরিবর্তনের কথা ভাবতে হচ্ছে।
দক্ষিণ শাখাতেও বাতিল লক্ষ্মীকান্তপুর-নামখানা ট্রেন
শিয়ালদহ ডিভিশনের দক্ষিণ শাখাতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। লক্ষ্মীকান্তপুর-নামখানা শাখার ট্র্যাকে দুর্বলতা দেখা দেওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে মেরামতির কাজ শুরু করা হয়েছে আজ থেকেই। এর জেরে ওই রুটের এক জোড়া লোকাল ট্রেন বাতিল রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগও বন্ধ রাখা হয়েছে, ফলে পরিষেবায় বড়সড় প্রভাব পড়েছে।
ভ্রমণপথে বিঘ্ন, ক্ষুব্ধ যাত্রীরা
ছুটির দিনে অনেকেই পিকনিক কিংবা আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। সেই রকমই অনেক যাত্রী হঠাৎ ট্রেন বাতিলের খবরে রীতিমতো বিপাকে পড়েছেন। রেল যদি আগেভাগে বিকল্প পরিষেবা চালু করত বা বাস সংযোগে সহায়তা করত, যাত্রীদের দুর্ভোগ অনেকটাই কমত বলে অভিযোগ উঠছে।
রেলের অনুরোধ ও যাত্রীদের দাবি
পূর্ব রেলের তরফে অনুরোধ করা হয়েছে, যাত্রীরা যেন স্টেশন থেকে অথবা রেলওয়ের অফিসিয়াল অ্যাপ থেকে পরিষেবার আপডেট জেনে তবেই যাত্রায় রওনা দেন। তবে যাত্রীদের একাংশ দাবি তুলেছেন, রক্ষণাবেক্ষণের কাজের সময় আগেভাগে ট্রেন বাতিলের পাশাপাশি বিকল্প পরিবহণের ব্যবস্থাও করতে হবে।
পরিকাঠামোর উন্নয়নে দরকার সচেতন পরিকল্পনা
রেল পরিকাঠামো উন্নত ও নিরাপদ রাখতে এই ধরনের সংস্কারমূলক কাজ প্রয়োজনীয় হলেও তা যেন সাধারণ যাত্রীদের জীবন দুর্বিষহ না করে তোলে, সেদিকে নজর দেওয়া রেল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। হঠাৎ বাতিল না করে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে যাত্রীদের সহায়তা করা হলে, এমন পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।