সুপ্রিম কোর্ট ৪ আগস্টের নির্দেশে সেই অনুচ্ছেদগুলি বাতিল করেছে, যেখানে এলাহাবাদ হাইকোর্টের একজন বিচারপতিকে ফৌজদারি মামলা থেকে সরানোর কথা বলা হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের ১৩ জন বিচারপতি প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখেছিলেন।
Allahabad high court: দেশের বিচার ব্যবস্থায় স্বাধীনতা এবং ভারসাম্য নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সামনে এসেছে। সুপ্রিম কোর্ট ৪ আগস্ট তারিখে দেওয়া তার আদেশ থেকে দুটি অনুচ্ছেদ সরিয়ে দিয়েছে, যেখানে এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি প্রশান্ত কুমারকে ফৌজদারি মামলার শুনানি থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এলাহাবাদ হাইকোর্টের ১৩ জন বিচারপতির প্রধান বিচারপতিকে লেখা একটি চিঠির পরেই এই পরিবর্তনটি ঘটে।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশটি কী ছিল?
৪ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি — বিচারপতি জে.বি. পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর. মহাদেবান — একটি নজিরবিহীন আদেশে বলেছিলেন যে বিচারপতি প্রশান্ত কুমার আর ফৌজদারি মামলার শুনানি করতে পারবেন না। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল যে তিনি একটি দেওয়ানি মামলায় ফৌজদারি কার্যক্রমের 'ভুলবশত' অনুমতি দিয়েছিলেন। এর আগেও সুপ্রিম কোর্ট তাঁর জামিন দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। এই আদেশ অনুসারে, বিচারপতি প্রশান্ত কুমারকে তাঁর অবসর পর্যন্ত ফৌজদারি মামলার শুনানি থেকে দূরে রাখার কথা বলা হয়েছিল।
এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতিদের সম্মিলিত চিঠি
এই আদেশের পরে হাইকোর্টের অভ্যন্তরে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। এলাহাবাদ হাইকোর্টের ১৩ জন বর্তমান বিচারপতি প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখে সুপ্রিম কোর্টের আদেশটি কার্যকর না করার আবেদন জানিয়েছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল যে এই আদেশ কেবল সাংবিধানিক মূল্যবোধের পরিপন্থী নয়, বরং এটি হাইকোর্টের স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে যে এই বিষয়ে দ্রুত 'ফুল কোর্ট মিটিং' (সমস্ত বিচারকের বৈঠক) ডেকে বিবেচনা করা উচিত, যাতে এটি নির্ধারণ করা যায় যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কার্যকর করা জরুরি কিনা।
বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতার উপর গুরুতর প্রশ্ন
এই পুরো বিতর্কটি একটি বড় প্রশ্ন তৈরি করেছে — সুপ্রিম কোর্টের কি এই অধিকার আছে যে তারা কোনও হাইকোর্টের বিচারপতিকে কোন মামলা শুনতে হবে, তা নির্ধারণ করে? সংবিধান অনুসারে, হাইকোর্টের বিচারপতিদের কী ধরনের মামলা দেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করার অধিকার শুধুমাত্র হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে থাকে।
বিচারকদের ধারণা, যদি সুপ্রিম কোর্ট এভাবে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে, তবে এতে বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা বিপন্ন হতে পারে। এর প্রভাব শুধু একজন বিচারকের উপর নয়, বরং পুরো বিচার ব্যবস্থার উপর পড়বে।
সুপ্রিম কোর্ট কেন নিজের আদেশ থেকে অনুচ্ছেদগুলি সরিয়ে দিয়েছে?
ক্রমবর্ধমান বিরোধিতা এবং সাংবিধানিক বিতর্ক দেখে সুপ্রিম কোর্ট নিজের আদেশ সংশোধন করে এবং সেই দুটি অনুচ্ছেদ সরিয়ে দেয়, যেখানে বিচারপতি প্রশান্ত কুমারকে ক্রিমিনাল রোস্টার থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এই পদক্ষেপ বিচার বিভাগীয় ভারসাম্য বজায় রাখার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিচারপতি পারদিওয়ালার মন্তব্য
৬ আগস্ট দেওয়া অন্য একটি আদেশে বিচারপতি পারদিওয়ালা বলেছেন:
'কোনও রায় দেওয়ার আগে আদালতকে প্রথমে বিষয়ের গভীরতা বুঝতে হবে। তারপর এর সাথে জড়িত আইনি সমস্যা এবং পক্ষগুলোর যুক্তির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। সবশেষে, সঠিক আইনি নীতিগুলি প্রয়োগ করতে হবে।'
তিনি এলাহাবাদ হাইকোর্টের সেই আদেশকে আইনগতভাবে ভুল বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে এটি 'ন্যায়শাস্ত্রের প্রতি অবজ্ঞা' প্রদর্শন করে।
এই পুরো ঘটনার প্রভাব
এটি শুধুমাত্র একজন বিচারপতিকে সরানোর বিষয় ছিল না, বরং এটি একটি সাংবিধানিক ভারসাম্য এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর সীমা নির্ধারণের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের নিজের আদেশে পরিবর্তন করা দেখায় যে সাংবিধানিক সংস্থাগুলো নিজেদেরকে संतुलित করতে সক্ষম, এবং বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা রক্ষা করা এদের প্রধান কর্তব্য।