ভারতে আইফোন উৎপাদন বৃদ্ধি: ট্রাম্পের সতর্কতা অগ্রাহ্য করলো অ্যাপল

ভারতে আইফোন উৎপাদন বৃদ্ধি: ট্রাম্পের সতর্কতা অগ্রাহ্য করলো অ্যাপল

ট্রাম্পের সতর্কতা অগ্রাহ্য করে ভারতে আইফোন উৎপাদন বাড়িয়েছে অ্যাপল। ফক্সকন চেন্নাইয়ের পর বেঙ্গালুরুতে দ্বিতীয় প্ল্যান্ট শুরু করেছে, যেখানে আইফোন-১৭ তৈরি হচ্ছে। কোম্পানির লক্ষ্য এই বছরের শেষ নাগাদ ভারতে আইফোন উৎপাদন ৬ কোটি ইউনিটে পৌঁছানো।

 আইফোন উৎপাদন: মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সতর্কতা সত্ত্বেও অ্যাপল ভারতে তাদের উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফক্সকন ২.৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে বেঙ্গালুরুর দেভানহাল্লিতে নতুন প্ল্যান্ট শুরু করেছে, যা চেন্নাইয়ের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারখানা। এখানে আইফোন-১৭-এর নির্মাণ ছোট পরিসরে শুরু হয়ে গেছে। অ্যাপলের লক্ষ্য এই বছরের শেষ নাগাদ ভারতে ৬ কোটি আইফোন তৈরি করা। সিইও টিম কুকের মতে, আমেরিকাতে বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ আইফোন ভারত থেকে রপ্তানি করা হবে, যা ভারতকে বিশ্বব্যাপী প্রোডাকশন হাব হওয়ার দিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।

বেঙ্গালুরুতে ২৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ

ফক্সকন, যা বিশ্বের বৃহত্তম কন্ট্রাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি এবং অ্যাপলের জন্য আইফোন তৈরি করে, তারা বেঙ্গালুরুতে তাদের নতুন কারখানাতে প্রায় ২.৮ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এই প্ল্যান্টে বর্তমানে ছোট আকারে উৎপাদন শুরু হয়েছে, কিন্তু আগামী মাসগুলোতে এর বিস্তার করা হবে। এটি চীনের বাইরে ফক্সকনের দ্বিতীয় বৃহত্তম কারখানা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ভারত হবে বড় প্রোডাকশন হাব

অ্যাপলের পরিকল্পনা হল ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ভারতে আইফোন উৎপাদন ৬ কোটি ইউনিটে নিয়ে যাওয়া। গত বছর কোম্পানি প্রায় ৩.৫ থেকে ৪ কোটি ইউনিট তৈরি করেছিল। এর মানে হল আগামী মাসগুলোতে ভারত থেকে তৈরি হওয়া আইফোনের সংখ্যা দ্রুত বাড়বে। অ্যাপলের সিইও টিম কুক আগেই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে আমেরিকাতে বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ আইফোন ভারত থেকেই আমদানি করা হবে।

ট্রাম্পের সতর্কতা অগ্রাহ্য করা হয়েছে

কিছু মাস আগে ট্রাম্প অ্যাপলকে ভারতে প্ল্যান্ট তৈরি করার পরিকল্পনা বন্ধ করতে বলেছিলেন। কাতার সফরের সময় তিনি অ্যাপলের সিইও টিম কুকের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেছিলেন। ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছিলেন যে আমেরিকা চায় অ্যাপল তাদের উৎপাদন ভারতের পরিবর্তে আমেরিকাতে বাড়াক। এমনকি তিনি এও বলেছিলেন যে ভারত নিজের খেয়াল নিজেই রাখতে পারে এবং সেখানে নতুন কারখানা তৈরি করতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই।

কিন্তু অ্যাপল এই সতর্কতা কানে তোলেনি। কোম্পানি উল্টে ভারতে দ্বিতীয় বৃহত্তম কারখানা খুলে এটা পরিষ্কার করে দিয়েছে যে তাদের ফোকাস এখন ভারতকে বিশ্বব্যাপী প্রোডাকশন হাব বানানোর দিকে।

চেন্নাইয়ের পর বেঙ্গালুরুতেও উৎপাদন

চেন্নাইতে আগে থেকেই অ্যাপলের একটি বড় প্ল্যান্ট চলছে, যেখানে আইফোন-১৭-এর উৎপাদন চলছিল। এখন বেঙ্গালুরুর দেভানহাল্লিতে নতুন প্ল্যান্ট থেকেও উৎপাদন শুরু হয়ে গেছে। দুটি বড় কারখানা থাকার ফলে ভারতে আইফোন ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের স্তর দ্রুত বাড়বে। এতে দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে এবং ভারতের পরিচিতি বিশ্বব্যাপী টেক হাব হিসেবে আরও শক্তিশালী হবে।

কেন বাড়ল ভারতে অ্যাপলের ভরসা

অ্যাপলের ভারতের উপর ভরসা করার অনেক কারণ রয়েছে। চীনে ক্রমাগত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি এবং সেখানকার কঠোর নীতি কোম্পানিগুলোর জন্য সমস্যা তৈরি করছে। অন্যদিকে ভারতে বড় ভোক্তা বাজার, বিনিয়োগের জন্য উৎসাহ এবং স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ট করছে। এছাড়াও ভারত সরকারও "মেক ইন ইন্ডিয়া" এবং প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেন্টিভ স্কিমের মতো প্রকল্পের মাধ্যমে টেক কোম্পানিগুলোকে বড় அளவில் সহযোগিতা করছে।

নতুন প্ল্যান্ট থেকে কতটা বাড়বে উৎপাদন ক্ষমতা

বেঙ্গালুরু প্ল্যান্ট শুরু হওয়ার ফলে অ্যাপলের উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বাড়বে। প্রাথমিক পর্যায়ে এখানে ছোট আকারে উৎপাদন শুরু করা হয়েছে, তবে ধীরে ধীরে এটি চেন্নাই প্ল্যান্টের সমান হয়ে যাবে। অনুমান করা হচ্ছে যে দুটি কারখানা মিলিয়ে বছরে ছয় কোটি আইফোন তৈরি করা হবে। এতে শুধুমাত্র ভারতে তৈরি আইফোনের সংখ্যা বাড়বে না, আমেরিকা ও ইউরোপের মতো বাজারেও ভারত থেকে তৈরি ইউনিট পাঠানো হবে।

Leave a comment