কংগ্রেস এবং বিরোধী দল মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের বিরুদ্ধে ইম্পিচমেন্ট (মহাভিযোগ) আনার কথা বিবেচনা করছে। বিরোধের কারণ হল নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রেস কনফারেন্সে বিরোধীদের সতর্ক করা এবং ভোটার ডেটা সম্পর্কিত প্রশ্ন। ৫ই আগস্টের ইন্ডিয়া ব্লক বৈঠকে এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
নয়াদিল্লি: কংগ্রেস এবং বিরোধী দল সিইসি-র বিরুদ্ধে প্রস্তাব বিবেচনা করছে। ইন্ডিয়া ব্লকের বৈঠকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খার্গে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের বিরুদ্ধে ইম্পিচমেন্ট আনার প্রস্তাব রাখেন। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সম্প্রতি বিরোধীদের দেওয়া সতর্কতা এবং বিগত দিনে রাহুল গান্ধীর উপস্থাপনার পরে উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বিরোধীদের অভিযোগ: নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্ব
কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দল দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করে আসছে। রাহুল গান্ধী সম্প্রতি এই বিষয়ে একটি বিস্তারিত উপস্থাপনা পেশ করেছেন, যেখানে তিনি অভিযোগ করেছেন যে নির্বাচন কমিশন বিজেপির পক্ষে কাজ করছে এবং বিরোধী দলের ভোটারদের সঠিক প্রতিনিধিত্ব করছে না। এই উপস্থাপনার পরে রাজনৈতিক পরিবেশে উত্তেজনা বেড়েছে।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খার্গে ইন্ডিয়া ব্লকের বৈঠকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে ইম্পিচমেন্ট প্রস্তাব আনার কথা বলেছেন। যদিও, বৈঠকে শুধুমাত্র প্রস্তাব আনা হয়েছে এবং এর ওপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি।
নির্বাচন কমিশনের অবস্থান: সতর্কতা এবং নিজের বক্তব্য
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার রবিবার প্রেস কনফারেন্স করে নিজের বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেন যে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে "ভোট চুরি" এবং 'কারচুপি'র মতো যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা মিথ্যা এবং কমিশন এতে ভয় পায় না, না ভোটাররা। তিনি সমস্ত রাজনৈতিক দলকে স্পষ্ট সতর্ক করে দিয়ে বলেন যে প্রমাণ ছাড়া অভিযোগ করা উচিত নয়।
নির্বাচন কমিশন আরও বলেছে যে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন এবং তাদের কার্যনির্বাহী বিভাগের সঙ্গে সম্পর্ক নিরীক্ষণ কমিশন করে। সমস্ত দল তাদের দৃষ্টিতে সমান, এবং কারও প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা হয় না। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন যে যদি কোনও দলের কাছে কোনও গরমিলের প্রমাণ থাকে, তবে তাদের কমিশনের কাছে পেশ করা উচিত, শুধুমাত্র অভিযোগ করে কিছু হবে না।
ইম্পিচমেন্টের কারণ
ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে অসন্তোষের প্রধান কারণ হিসেবে তাঁর প্রেস কনফারেন্সকে মনে করা হচ্ছে। কমিশন বিরোধী দলগুলোকে এক সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দাখিল করতে এবং সমস্ত প্রমাণ পেশ করার নির্দেশ দিয়েছিল। বিরোধীরা এই পদক্ষেপকে সাংবিধানিক পদের মর্যাদা দুর্বল করার শামিল বলে মনে করছে।
কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ বলেছেন যে যদি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বিজেপির নেতাদের বিরুদ্ধে একই ধরনের প্রেস কনফারেন্স না করেন, তবে এটি পক্ষপাতিত্বের অনুভূতি তৈরি করবে। তাঁর বক্তব্য, নির্বাচন কমিশনের এই আচরণ সাংবিধানিক পদের মর্যাদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশ এবং SIR বিতর্ক
এই বিতর্কের পটভূমিতে সুপ্রিম কোর্টের একটি সিদ্ধান্তও রয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট বিহারে এসআইআর (SIR)-এর অধীনে ৬৫ লক্ষ মানুষের নাম প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছিল। কংগ্রেস এই সিদ্ধান্ত এবং তার বাস্তবায়ন নিয়েও নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করছে।
রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছেন যে বিহার এবং কর্ণাটকের মতো রাজ্যগুলোতে নির্বাচন কমিশন বিজেপির পক্ষে কাজ করে এবং নতুন ভোটারদের মাধ্যমে নির্বাচনে কারচুপি হয়। তাঁর বক্তব্য, নির্বাচন কমিশনকে তাদের নিরপেক্ষ হওয়ার দাবি প্রমাণ করতে হবে।
রাজনৈতিক তৎপরতা এবং সম্ভাব্য ইম্পিচমেন্ট
ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে ইম্পিচমেন্ট আনার প্রস্তাব আসায় রাজনৈতিক তৎপরতা বেড়ে গেছে। যদিও এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে এই পদক্ষেপ ভারতীয় গণতন্ত্র এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভারসাম্যের জন্য গুরুতর ইঙ্গিত।
বিরোধী দলের নেতারা বলছেন যে যদি নির্বাচন কমিশন তাদের অবস্থানে উন্নতি না করে এবং বিরোধীদের অভিযোগের যথাযথ প্রতিক্রিয়া না জানায়, তবে ইম্পিচমেন্ট প্রস্তাবকে গুরুত্বের সাথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হতে পারে।