কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টকে সতর্ক করেছে যে রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতির উপর বিলগুলির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়সীমা চাপানো হলে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হতে পারে। এই বিষয়ে ১৯শে আগস্ট থেকে পাঁচ বিচারকের সাংবিধানিক বেঞ্চ শুনানি করবে।
নয়াদিল্লি: সুপ্রিম কোর্টে ১৯শে আগস্ট থেকে শুরু হওয়া শুনানির আগে কেন্দ্র সরকার লিখিত বক্তব্য দাখিল করেছে। কেন্দ্র বলেছে যে রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালদের উপর বিল নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা ক্ষমতার পৃথকীকরণকে দুর্বল করবে এবং সাংবিধানিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে।
১৯শে আগস্ট থেকে শুনানি হবে
এই শুনানি ১৯শে আগস্ট থেকে শুরু হবে এবং এর জন্য সুপ্রিম কোর্ট পাঁচ বিচারকের একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করেছে। এই বেঞ্চের अध्यक्षता করবেন প্রধান বিচারপতি ভূষণ আর. গাভাই। তাঁর সঙ্গে থাকবেন বিচারপতি সূর্যকান্ত, বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি পি.এস. নরসিমহা এবং বিচারপতি অতুল এস. চান্দুরকার। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু কর্তৃক সংবিধানের ১৪৩ অনুচ্ছেদের অধীনে প্রেরিত ১৪টি সাংবিধানিক প্রশ্নের ভিত্তিতে এই শুনানি হবে।
এই প্রশ্নগুলি সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের ৮ই এপ্রিল, ২০২৫-এর সেই ঐতিহাসিক রায়ের সাথে সম্পর্কিত, যেখানে আদালত প্রথমবারের মতো রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতির উপর রাজ্য বিলের ক্ষেত্রে সময়সীমা আরোপ করার কথা বলেছিল। আদালতের সেই আদেশ ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল।
কেন্দ্রের বক্তব্য: 'সাংবিধানিক বিশৃঙ্খলা'-এর আশঙ্কা
সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে লিখিত বক্তব্য দাখিল করেছেন। এতে বলা হয়েছে যে রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালদের পদ 'রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ' এবং গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ আদর্শের প্রতিনিধিত্ব করে। এই ধরনের পদকে কোনও সময়সীমার মধ্যে বাঁধা শুধুমাত্র সংবিধান নির্মাতাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই যাবে না, বরং এটি 'সাংবিধানিক বিশৃঙ্খলা' তৈরি করতে পারে।
মেহতা যুক্তি দিয়েছেন যে সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টকে অসাধারণ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তবে সেই ক্ষমতা সংবিধান সংশোধন করার জন্য বা সংবিধান নির্মাতাদের স্পষ্ট ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা যাবে না। তিনি বলেন যে বাস্তবায়নে "কিছু সীমিত সমস্যা" অবশ্যই থাকতে পারে, তবে সেগুলি এত বড় নয় যে রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতির মতো সাংবিধানিক পদের মর্যাদা কমিয়ে দেবে।
রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক কৌশলই সমাধান
কেন্দ্রের বক্তব্য হল যদি কখনও রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতি বিলগুলির উপর সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেন, তবে তার সমাধান আদালত নয়, বরং রাজনৈতিক এবং সাংবিধানিক কৌশলের মাধ্যমে হওয়া উচিত। এর কারণ হল সংবিধানে রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালদের জন্য কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমার বিধান রাখা হয়নি। যদি সুপ্রিম কোর্ট এই ধরনের কোনও আদেশ দেয় তবে এটি প্রকৃতপক্ষে সংবিধানের অপ্রত্যক্ষ সংশোধনের মতো হবে।
এপ্রিলের সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে বিতর্ক
৮ই এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে সুপ্রিম কোর্ট একটি ঐতিহাসিক আদেশ দিয়ে বলেছিল যে রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতিকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাজ্য বিলগুলির উপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আদালত মনে করেছিল যে দীর্ঘ সময় ধরে বিলগুলি ফেলে রাখা রাজ্য সরকারগুলির অধিকার এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য বাধা।
তবে, এই আদেশ নিয়েই এখন কেন্দ্র সরকারের আপত্তি রয়েছে। কেন্দ্রের বিশ্বাস যে এই রায় ক্ষমতার পৃথকীকরণের নীতিকে দুর্বল করে এবং বিচার বিভাগ এমন একটি ক্ষেত্রে প্রবেশ করছে, যা সংবিধান নির্মাতারা কার্যনির্বাহী বিভাগের জন্য রেখেছিলেন।
সাংবিধানিক প্রশ্ন এবং গণতন্ত্রের দিক
রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রেরিত ১৪টি সাংবিধানিক প্রশ্নের মধ্যে মূলত এটাই জিজ্ঞাসা করা হয়েছে যে সুপ্রিম কোর্টের কি এই অধিকার আছে যে তিনি রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতির উপর কোনও বিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সময়সীমা আরোপ করতে পারেন? এটি কি বিচার বিভাগ কর্তৃক কার্যনির্বাহী বিভাগের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ হবে না? এবং এই ধরনের আদেশকে কি সাংবিধানিক সংশোধনীর আওতায় আনা উচিত নয়?
এই প্রশ্নগুলির উত্তর আগামী দিনে ভারতের সাংবিধানিক কাঠামো এবং তিনটি বিভাগ—আইনসভা, কার্যনির্বাহী বিভাগ এবং বিচার বিভাগ—এর মধ্যে সম্পর্ককে নতুন দিকনির্দেশ দেবে।