তিনি অঘোরী সম্প্রদায়ের মহান সন্ত ও যোগী ছিলেন। রাজস্থানের শেখাওয়াটি অঞ্চলে তাঁর জীবন ভক্তি, তপস্যা এবং অলৌকিক কাজের জন্য বিখ্যাত ছিল। তাঁর অনুগামীরা আজও তাঁকে ঐশ্বরিক শক্তি ও পথপ্রদর্শক হিসেবে শ্রদ্ধা করেন।
বাবলিয়া বাবা: পরমহংস গণেশনারায়ণ ও বাবুলিয়া পণ্ডিত নামেও পরিচিত, তিনি ভারতীয় ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। অঘোরী সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত এই সন্ত তাঁর জীবনকে ভক্তি, তপস্যা এবং যোগের পথে উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর জীবন আধ্যাত্মিক গভীরতা, অলৌকিক কাজ এবং অনুগামীদের প্রতি নিষ্ঠার প্রতীক ছিল। বাবুলিয়া বাবা রাজস্থানের শেখাওয়াটি অঞ্চলে পূজনীয় সন্ত হিসাবে বিবেচিত হন এবং তাঁর অনুগামীরা তাঁকে ঐশ্বরিক শক্তি এবং অলৌকিক ক্ষমতার উৎস বলে মনে করেন।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
বাবুলিয়া বাবার জন্ম গণেশনারায়ণ রূপে শেখাওয়াটির ঝুনঝুনু জেলার বুগালা গ্রামে বিক্রম সংবতের ১৯০৩ সালের পৌষ মাসের প্রথম দিনে হয়েছিল। তিনি ঘনশ্যামদাস ও গৌরাদেবীর পুত্র হিসাবে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষাতেই বিদ্যা ও ভক্তির ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল। অল্প বয়সেই তিনি ফারসি ভাষা শিখেছিলেন, যা সেই সময়ের বিদ্বানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হিসাবে বিবেচিত হত। তাঁর পিতা-মাতা তাঁকে संस्कार ও ধর্মের জ্ঞান দিয়েছিলেন, যার ফলে তাঁর মন আধ্যাত্মিক জীবনের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল।
অঘোরী সম্প্রদায়ে প্রবেশ
১৯৪৭ সালে বাবুলিয়া বাবা চিড়াওয়া শহরে চলে যান এবং অঘোরী সম্প্রদায়ে যোগ দেন। অঘোরী সম্প্রদায়, যা সাধারণ জীবনের সীমা অতিক্রম করে তপস্যা ও ধ্যানে মগ্ন থাকে, তা তাঁর ব্যক্তিত্ব ও যোগিক সাধনার জন্য উপযুক্ত ছিল। বাবুলিয়া বাবা অঘোরী জীবনধারা সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করেন এবং নিয়মিত দেবী দুর্গার পূজা ও তাঁর মন্ত্র জপ করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে মন্ত্র উচ্চারণ সত্য ও আধ্যাত্মিক শক্তির উৎস।
ভক্তি, ধ্যান ও আধ্যাত্মিক সিদ্ধি
বাবুলিয়া বাবা তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময় ধ্যান, ভক্তি এবং যোগে কাটিয়েছেন। অল্প বয়স থেকেই তিনি আধ্যাত্মিক সাধনা ও ভক্তির মাধ্যমে অনেক সিদ্ধি লাভ করেছিলেন। তাঁর অলৌকিক কাজ তাঁকে কেবল তাঁর অঞ্চলেই নয়, বরং সারা দেশে বিখ্যাত করে তোলে। লোকেরা তাঁর অনুগামী হয়ে ওঠে এবং তাঁর আশ্রয়ে আসতে শুরু করে। তাঁর অনুগামীরা বিশ্বাস করতেন যে বাবার মুখ থেকে উচ্চারিত দুর্গা মন্ত্রে अद्भुत শক্তি ছিল, যা সত্যকে প্রকাশ করত।
অনুগামী ও লোক শ্রদ্ধা
বাবুলিয়া বাবার অলৌকিক কাজ দেখার জন্য তাঁর অনুগামীরা দূর-দূরান্ত থেকে আসতেন। তাঁর সাধনা ও যোগের ক্ষমতা অনেক মানুষকে আকৃষ্ট করেছিল, আবার কেউ কেউ তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী ও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ভীতও হত। চিরওয়া ও বুগালাতে তাঁকে গ্রামদেবতা হিসাবে পূজার প্রথা আছে। তাঁর অনুগামীদের মধ্যে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিও ছিলেন, যেমন বিড়লা পরিবারের যুগল কিশোর বিড়লা এবং খেতড়ির अजीत সিং।
জীবনের শেষ দিন
সংবতের ১৯৬৯ সালের পৌষ মাসের নবমী তিথিতে বাবুলিয়া বাবার মৃত্যু হয়। তিনি যোগাভ্যাসের সময় দেহত্যাগ করেন এবং এর পরে তাঁর দাহ স্থানে একটি মন্দির নির্মাণ করা হয়। এই মন্দিরে তাঁর সুন্দর মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে, যা আজও ভক্তরা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে পূজা করেন। তাঁর অনুগামী ও ভক্তরা আজও তাঁর শিক্ষা, ভক্তি এবং তপস্যা স্মরণ করেন এবং তাঁর দেখানো পথে চলেন।
বাবুলিয়া বাবার মন্দির ও তীর্থস্থান
বাবুলিয়া বাবার সম্মানে ভারতের অনেক স্থানে মন্দির ও তীর্থস্থান তৈরি করা হয়েছে। প্রধান স্থানগুলি হল বুগালা, নবলগড়, গুঢ়াগোরজি এবং চিড়াওয়া। এছাড়াও খেতড়ি নগর, পিলানি, মুকুন্দগড়, बांसवाड़ा, गौरीवाड़ा, বাস নানগ, কুচামন, কলকাতা, হায়দ্রাবাদ, আহমেদাবাদ, গোয়ালিয়র এবং মুম্বাইতেও তাঁর মন্দির স্থাপিত হয়েছে। যুগল কিশোর বিড়লা ১৯৫৯ সালে তাঁর স্মরণে একটি ঘাট এবং গণেশ লাট নামে একটি উঁচু স্তূপ তৈরি করিয়েছিলেন। এই স্থানগুলি আজও ভক্তদের জন্য আধ্যাত্মিক কেন্দ্র এবং পূজার স্থান হিসাবে কাজ করে।
সংগ্রহশালা ও বাবুলিয়া বাবা মেমোরিয়াল
বুগালা গ্রামে তাঁর পারিবারিক বাড়িটিকে একটি সংগ্রহশালায় রূপান্তরিত করা হয়েছে। এর পরিচালনা করে মুম্বাই-ভিত্তিক বাবুলিয়া বাবা মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। এই সংগ্রহশালায় বাবার জীবন, তাঁর অলৌকিক কাজ এবং শিক্ষা সম্পর্কিত অনেক শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে। এই সংগ্রহশালা কেবল ভক্তদের জন্যই নয়, গবেষক এবং ইতিহাস প্রেমীদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
অলৌকিক ঘটনা ও আধ্যাত্মিক প্রভাব
বাবুলিয়া বাবার জীবনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল তাঁর অলৌকিক ক্ষমতা। তাঁর অনুগামীরা বিশ্বাস করতেন যে তাঁর প্রতিটি কাজ ও মন্ত্র একটি ঐশ্বরিক শক্তির প্রতীক ছিল। তিনি কেবল তাঁর অনুগামীদের পথ প্রদর্শন করেননি, বরং সমাজে ধর্ম ও আধ্যাত্মিক চেতনাও বৃদ্ধি করেছিলেন। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী, সাধনা ও তপস্যা আজও মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।
বাবুলিয়া বাবা কেবল একজন সন্তই ছিলেন না, বরং অঘোরী সম্প্রদায়ের এক মহান যোগী ও তপস্বী ছিলেন। তাঁর জীবন ভক্তি, তপস্যা ও জ্ঞানের এক অপূর্ব সমন্বয় ছিল। তাঁর অনুগামীরা আজও তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভক্তির সাথে স্মরণ করেন। তাঁর মন্দির, তীর্থস্থান এবং সংগ্রহশালা তাঁর স্মৃতিকে জীবিত রেখেছে। বাবুলিয়া বাবার জীবন আমাদের শেখায় যে, প্রকৃত ভক্তি, তপস্যা এবং জ্ঞানের উৎসর্গ জীবনে উচ্চ আধ্যাত্মিক লক্ষ্য অর্জনের পথ প্রশস্ত করে।