'বাংলাদেশি ভাষা' চিহ্নিত করল দিল্লি পুলিশ, উত্তাল রাজনীতি
দিল্লি পুলিশের একটি চিঠিতে বাংলা ভাষাকে 'বাংলাদেশি ভাষা' বলে উল্লেখ করার ঘটনায় চরম বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। চিঠিটি সামনে আসতেই রাজ্যে রাজনৈতিক আবহ এক লহমায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রশ্ন উঠছে—যে ভাষায় লেখা হয়েছে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত, সেটিকে কীভাবে বাংলাদেশি ভাষা বলা হয়?
মমতার তীব্র প্রতিক্রিয়া: ‘অপমান সহ্য করব না’
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। টুইটারে নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেন, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, রবীন্দ্রনাথ-স্বামী বিবেকানন্দের ভাষা, জাতীয় সঙ্গীতের ভাষা। এই ভাষাকে বাংলাদেশি বলা জাতির প্রতি চরম অবমাননা।
তৃণমূলের জোরালো প্রতিবাদ: দিল্লি পুলিশের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপমান
তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনাকে ‘বাঙালিদের প্রতি ধারাবাহিক আক্রমণ’ বলে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর কথায়, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে মাসের পর মাস বাংলা ভাষীদের হেনস্থা করা হচ্ছে। এবার কেন্দ্রীয় পুলিশের চিঠিতে অপমান করা হল পুরো জাতিকে।
দক্ষিণ ভারতের সমর্থন: স্ট্যালিনের পাশে দাঁড়ানো তাৎপর্যপূর্ণ
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন সোমবার এক সরকারি বিবৃতিতে এই চিঠির তীব্র নিন্দা করে বলেন, এটি নিছক ভুল নয়, এটি একটি শাসনব্যবস্থার পক্ষপাতদুষ্ট মানসিকতার প্রতিফলন।" পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যালিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে লেখেন, “বাংলার ভাষা ও জাতির জন্য তিনি ঢাল হিসেবে লড়ছেন।
চিঠির পেছনের বিতর্কিত অফিসার, কোথা থেকে সূত্রপাত?
দিল্লির লোধি কলোনি থানার পুলিশ অফিসার অমিত দত্ত ওই চিঠি পাঠিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বঙ্গভবনের অফিসার-ইন-চার্জকে। তৃণমূলের দাবি, চিঠিতে বারংবার বাংলা ভাষাকে 'বাংলাদেশি ভাষা' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা আদতে একটি গভীর রাজনীতির অংশ।
বাঙালি সত্ত্বার অপমান? সরব অমর্ত্য সেন, মনে করালেন চর্যাপদ
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, বাংলা ভাষা শুধু বর্তমান নয়, তার হাজার বছরের ঐতিহ্য রয়েছে—চর্যাপদের ভাষা, বিদ্যাসাগরের সংস্কার, রবীন্দ্রনাথের কাব্য। এই ভাষাকে বিদেশি বলে দাগানো বাঙালি সত্ত্বার উপর সরাসরি আঘাত।
বিপরীতে বিজেপির দাবি: ‘মমতা নাটক করছেন, বাংলাদেশিদের রক্ষা করছেন’
এই ইস্যুতে পাল্টা আক্রমণ করেছে বিজেপি। সাংসদ জগন্নাথ সরকার অভিযোগ করেন, “বাংলায় দেড় কোটির বেশি অবৈধ বাংলাদেশি ভোটার আছে। মমতা তাঁদেরই রক্ষা করছেন। SIR প্রকল্পের মাধ্যমে যাদের বাদ দেওয়া হবে, সেই কারণেই এত অস্থিরতা। দিল্লি পুলিশের চিঠি নিয়ে তাঁর ব্যাখ্যা, “এটা আসলে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের বাস্তব ছবি।
‘বাংলা’ রাজনীতির কেন্দ্রে: বোলপুর থেকে নতুন ভাষা আন্দোলনের ডাক
এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবারও ভাষা রাজনীতিকে সামনে এনে দাবি তোলেন—বাংলার জন্য লড়াই করতে হবে। বোলপুর থেকে ভাষা আন্দোলনের নতুন সূচনা হোক। তাঁর মতে, বাংলাকে হেয় করা মানেই জাতীয় ঐতিহ্যকে অস্বীকার করা। এটা কোনওভাবেই বরদাস্ত করা যাবে না।
শুধু ভাষা নয়, এ লড়াই পরিচয়ের
দিল্লি পুলিশের একটি চিঠি আজ সারাদেশে তুলে দিয়েছে এক গভীর প্রশ্ন—আমরা কি আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, পরিচয়ের সম্মান রাখতে পারছি? এই বিতর্ক শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি দেশের জাতীয় ঐক্য ও সাংবিধানিক বৈচিত্র্যের প্রতিচ্ছবি। প্রশ্ন এখন শুধুই একটাই—‘বাংলা’ কি তবে এখন নিজভূমে পরবাসী?