জেলা ধরে নির্বাচনী রণকৌশল আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার নিয়ে শুরু সাংগঠনিক বৈঠক নেতৃত্বে অভিষেক

জেলা ধরে নির্বাচনী রণকৌশল আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার নিয়ে শুরু সাংগঠনিক বৈঠক নেতৃত্বে অভিষেক

জেলা ধরে শুরু বড়সড় প্রস্তুতি, অভিষেকের নেতৃত্বে নতুন দিশা

২০২৬-র বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখে সাংগঠনিক শক্তি যাচাইয়ে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আজ, সোমবার থেকে শুরু হল জেলা ভিত্তিক বৈঠকের প্রথম ধাপ। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আজ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলা নিয়ে। এই বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন জেলা সভাপতি থেকে সাংসদ, যুব সভাপতি, চেয়ারম্যান ও সমস্ত বিধায়করা। নির্বাচনের আগে এই জেলা ভিত্তিক বৈঠক যে তৃণমূলের পরিকল্পিত রাজনৈতিক কৌশলের অংশ, তা কার্যত স্পষ্ট।

সাপ্তাহিক রূপরেখা স্পষ্ট, বুধবার মালদহ-জলপাইগুড়ি, বৃহস্পতিবার দক্ষিণ দিনাজপুর-জঙ্গিপুর

তৃণমূল সূত্রে খবর, শুধু আজ নয়, এই সপ্তাহজুড়ে একাধিক জেলার বৈঠক ধারাবাহিকভাবে হবে। বুধবার মালদহ ও জলপাইগুড়ি এবং বৃহস্পতিবার দক্ষিণ দিনাজপুর ও জঙ্গিপুর জেলার সংগঠন নিয়ে হবে পৃথক বৈঠক। এরপর ১১ অগাস্ট উত্তর দিনাজপুর নিয়ে বৈঠক করবেন অভিষেক। লক্ষ্য একটাই— নির্বাচনের আগেই তৃণমূলের মাটির স্তরের শক্তি যাচাই করে নেওয়া।

বৈঠক শুধুই রুটিন নয়, লক্ষ্য ২০২৬

তৃণমূল নেতৃত্ব মুখে বললেও যে এটি শুধুই নিয়মিত বৈঠক, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, এই বৈঠকগুলিতে তিনটি মূল বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে— জেলা নেতৃত্বের কার্যকারিতা, বুথ স্তরের কর্মীদের সক্রিয়তা এবং তৃণমূলের সদ্য চালু হওয়া জনমুখী কর্মসূচির বাস্তবায়ন। বলা হচ্ছে, এই বৈঠকগুলি থেকেই ঠিক হবে কোন নেতা পরবর্তী পর্যায়ে নির্বাচনী দায়িত্ব পাবেন।

বাংলা ভাষা ইস্যুতে ফের কড়া বার্তা, সংগঠন থেকেই শুরু প্রতিবাদ

বর্তমানে বাংলা ভাষা ইস্যুতে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বৈঠক সেই প্রেক্ষিতেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তৃণমূলের পক্ষ থেকে আগেই অভিযোগ করা হয়েছে, ভিন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলা বলার কারণে 'বাংলাদেশি' তকমা দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে অভিষেক ও মমতা উভয়েই ইতিমধ্যে রাস্তায় নেমেছেন। এই ইস্যুতে জেলা এবং ব্লক স্তরে আন্দোলনের রূপরেখাও স্থির হতে পারে এই বৈঠকেই।

সংগঠন ঢেলে সাজানোর বার্তা, এক ব্যক্তি এক পদ নীতিতে নজর

সূত্রের খবর, চলতি সপ্তাহ থেকেই জেলার বিভিন্ন স্তরে সংগঠনের নতুন পদাধিকারীদের নাম প্রকাশ শুরু হবে। "এক ব্যক্তি এক পদ" নীতিকে সামনে রেখেই এগোতে চাইছে নেতৃত্ব। জনসংযোগে দক্ষ নেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ফলে পুরনো নেতাদের অনেকেই হয়তো পদ হারাতে পারেন, আবার নতুন মুখ উঠে আসার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

৫ অগাস্ট ঐতিহাসিক বৈঠকের দিকে নজর, ৯ হাজার জনপ্রতিনিধি হাজির থাকবেন

সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে ৫ অগাস্টের বৈঠক, যেখানে প্রায় ৯ হাজার জনপ্রতিনিধিকে ডাকা হয়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর অনুযায়ী, সেই বৈঠকে রাজ্যের সমস্ত জেলার নেতৃত্ব উপস্থিত থাকবেন। ভিন রাজ্যে বাংলাভাষী শ্রমিকদের উপর অত্যাচার হলে কীভাবে তাৎক্ষণিকভাবে দলীয় নেতৃত্ব পাশে দাঁড়াবে, তা নিয়েও বিস্তারিত নির্দেশ আসতে পারে। সেই সঙ্গে বুথ ও পঞ্চায়েত স্তরে প্রতিবাদের রূপরেখাও দেওয়া হবে।

উত্তরে বাড়তি গুরুত্ব, কোচবিহার-আলিপুরদুয়ারে নজর কেন্দ্রীভূত

উত্তরবঙ্গ সবসময় তৃণমূলের জন্য তুলনামূলক কঠিন জমি। সেই কারণেই প্রথম দিনেই আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার নিয়ে বৈঠক, যা রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিজেপির দখলে থাকা এই এলাকাগুলিতে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করার বার্তা দিয়েছেন অভিষেক। উত্তরবঙ্গে জনসংযোগ বাড়াতে তৃণমূল এবার ‘ডোর টু ডোর’ কৌশলেই বাজি রাখছে।

ভোটযুদ্ধের মহড়া শুরু, নজরে প্রতিটি জেলা

সর্বত্র একটাই বার্তা— আর কোনো ঢিলেমি নয়। দলের কর্মীরা কোথায়, কতটা সক্রিয়, তা জানতে এবং সংগঠনের রূপ বদলে দিতে তৃণমূলের এই বৈঠক পর্ব কার্যত ভোটের আগাম মহড়া বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। নির্বাচনের এখনও এক বছরের বেশি সময় থাকলেও, এখন থেকেই গেমপ্ল্যান স্পষ্ট করে দিচ্ছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস।

Leave a comment