বস্তারে মাওবাদী হিংসা: উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী বিচারপতির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

বস্তারে মাওবাদী হিংসা: উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী বিচারপতির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

বস্তারের মাওবাদী হিংসা পীড়িতরা উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী বিচারপতি বি সুদর্শন রেড্ডির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের বক্তব্য, তাঁর রায়ের কারণে সালওয়া জুডুম শেষ হয়ে যায় এবং মাওবাদীরা অবাধ ছাড় পায়। সাংসদদের সমর্থন না করার আবেদন।

নয়া দিল্লি: উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী বিচারপতি বি সুদর্শন রেড্ডিকে নিয়ে বস্তারের মাওবাদী হিংসা পীড়িতরা বড় অভিযোগ করেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের তাঁর একটি রায়ের কারণে বস্তারের আদিবাসীরা মাওবাদীদের সামনে অসহায় হয়ে পড়েছিল। এখন সেই ব্যক্তিকেই দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদের প্রার্থী করা হয়েছে, যা নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা প্রশ্ন তুলেছেন।

সাংসদদের উদ্দেশ্যে চিঠি

বস্তারের হিংসা পীড়িতরা সমস্ত সাংসদকে চিঠি লিখেছেন। তাঁদের বক্তব্য, বিচারপতি বি সুদর্শন রেড্ডির রায়ের কারণে সালওয়া জুডুম আন্দোলনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় এবং মাওবাদীরা অবাধ ছাড় পেয়ে যায়।

ক্ষতিগ্রস্তদের অনুসারে সালওয়া জুডুম বস্তারের আদিবাসীদের নিজেদের আন্দোলন ছিল। মাওবাদীদের হিংসায় অতিষ্ঠ হয়ে সেখানকার মানুষ ব্বস্তারে সন্ত্রাস শেষ করার জন্য এই আন্দোলন শুরু করেছিল। কিন্তু ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্ট এই আন্দোলনকে অবৈধ ঘোষণা করে বন্ধ করে দেয়। এরপর মাওবাদীরা সেই আদিবাসীদের উপর হামলা করতে শুরু করে, যারা সালওয়া জুডুমের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

সালওয়া জুডুম বন্ধ হওয়ার পরে বেড়েছে হিংসা

উত্তর বস্তারের কাঁকের জেলার চারগাঁওয়ের প্রাক্তন উপসর্পঞ্চ সিয়ারাম রামটেকের তার চিঠিতে লিখেছেন, সালওয়া জুডুম আন্দোলন আদিবাসীদের মধ্যে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করেছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এটিকে বন্ধ করে দেওয়ার সাথে সাথেই মাওবাদীরা আবার শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

সিয়ারাম রামটেক নিজেও মাওবাদী হিংসার শিকার হয়েছিলেন। তিনি চিঠিতে জানিয়েছেন, জমিতে কাজ করার সময় মাওবাদীরা তাঁকে ঘিরে ধরেছিল। একটি গুলি পায়ে এবং তিনটি গুলি পেটে মারে এবং মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়। তিনি কোনোমতে বেঁচে যান, কিন্তু হাজার হাজার মানুষ ছিলেন যারা এই হিংসায় মারা গেছেন বা সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন।

বস্তারের মানুষের আবেদন

সিয়ারাম রামটেকের বক্তব্য, যদি ২০১১ সালে সালওয়া জুডুমের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা না হত, তাহলে বস্তার থেকে মাওবাদী হিংসা অনেক আগেই শেষ হয়ে যেতে পারত। তিনি সাংসদদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, এমন কোনো ব্যক্তিকে উপরাষ্ট্রপতি পদে বসানো উচিত নয়, যিনি বস্তারের জনসাধারণকে মাওবাদী হিংসার সামনে অসহায় করে দিয়েছেন।

সুকুমার ক্ষতিগ্রস্তদের বেদনাদায়ক কাহিনী

সুকুমা জেলার ভীমাপুরামের বাসিন্দা অশোক গন্দামীও সাংসদদের চিঠি লিখে তাঁর যন্ত্রণা প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সালওয়া জুডুম বন্ধ হওয়ার পরে তাঁদের পরিবারের উপর মাওবাদীদের অত্যাচার নেমে আসে।

তাঁর ভাগ্নী মড়কম সুক্কীর বাবাকে মাওবাদীরা হত্যা করে। এরপর মাওবাদীদের লাগানো আইইডি বিস্ফোরণে সুক্কীর একটি পা উড়ে যায়। অশোক গন্দামীর বক্তব্য, যদি সালওয়া জুডুম বন্ধ না হত, তাহলে হয়ত তাঁদের পরিবারের এই অবস্থা হত না।

কংগ্রেসের উপরও প্রশ্ন

ক্ষতিগ্রস্তরা কংগ্রেসের উপরও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, কংগ্রেস এবং তার প্রবীণ নেতারা শেষ পর্যন্ত কী বার্তা দিয়ে এমন এক ব্যক্তিকে উপরাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী করছেন, যাঁর সিদ্ধান্তে মাওবাদীদের লাভ হয়েছে এবং আদিবাসীদের শুধু কষ্টই বেড়েছে।

মাওবাদী হিংসার পুরনো যন্ত্রণা আজও জীবিত

বস্তারের অনেক গ্রামে সালওয়া জুডুম আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন আজও তাঁদের ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছেন। কেউ তাঁদের পরিবার হারিয়েছেন, তো কেউ পঙ্গু হয়ে গেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের রায় তাঁদের মাওবাদী হিংসার জন্য অরক্ষিত করে দিয়েছে এবং এখন সেই ব্যক্তিকেই দেশের সর্বোচ্চ পদগুলির মধ্যে একটির জন্য মনোনীত করা হচ্ছে।

সাংসদদের কাছে আবেদন

বস্তারের ক্ষতিগ্রস্তরা সাংসদদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, তাঁরা যেন বস্তারের মানুষের কথা শোনেন। তাঁদের বক্তব্য, উপরাষ্ট্রপতির মতো পদে এমন কোনো ব্যক্তি থাকা উচিত নয়, যাঁর সিদ্ধান্তে আদিবাসীরা মাওবাদী হিংসার শিকার হয়েছেন।

Leave a comment