২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন—মাত্র ছ’মাসের ভিতরেই বাংলার আকাশ জুড়ে জমে উঠেছে বিপজ্জনক ধূলিকণার পরত। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (CPCB) ও সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (CREA)-এর যৌথ সমীক্ষা তেমনই চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে পরিবেশবিদ থেকে চিকিৎসক মহলে। রাজ্যের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র কণার উপস্থিতি এতটাই বেশি যে, তা সোজাসুজি ফুসফুসে ঢুকে গিয়ে মানুষের শরীরে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।এখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে পিএম ১০ ও ২.৫ আসলে কী এবং এগুলোর মাত্রা কেন চিন্তার কারণ, সেই প্রেক্ষাপটে সরকারি সীমা ও বাস্তব চিত্রের ফারাক বোঝানো হয়েছে।
কলকাতা-সহ রাজ্যের প্রধান শহরগুলির দূষণ চিত্র ভয় ধরাল
রিপোর্ট বলছে, কলকাতায় পিএম ১০–এর পরিমাণ ৮৮ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার, যা স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৪৬ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে পিএম ২.৫–এর পরিমাণ ৪৪ মাইক্রোগ্রাম—এটাও বিপদসীমার ওপরে। আশঙ্কার বিষয়, এই তথ্য জানুয়ারি থেকে জুন—গ্রীষ্ম ও বর্ষার সময়ে সংগ্রহ করা। অথচ এই সময় দূষণের পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকার কথা। অর্থাৎ, ঋতুচক্রের স্বাভাবিক ভারসাম্যেও সম্ভবত প্রভাব পড়ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে এই পরিসংখ্যান।এখানে কলকাতা শহরের দূষণ পরিস্থিতির নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে এবং ঋতু অনুযায়ী দূষণ কমার সম্ভাবনা না থাকায় বাড়তি উদ্বেগের দিকটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা আসানসোল–দুর্গাপুরে, রক্ষা শুধু হলদিয়ায়
রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল এবং দুর্গাপুর। আসানসোলে প্রতি ঘনমিটারে পিএম ২.৫-এর পরিমাণ ৬০ মাইক্রোগ্রাম, যা জাতীয় গড়ের থেকে দেড় গুণ বেশি। দুর্গাপুরে পিএম ১০-এর হার সবচেয়ে বেশি—১৪৬ মাইক্রোগ্রাম! তুলনায় অনেকটাই ভালো অবস্থায় আছে শুধুমাত্র হলদিয়া। এই শহরে পিএম ২.৫-এর পরিমাণ স্বাভাবিকের নিচে থাকায় কিছুটা স্বস্তি মিলেছে প্রশাসনের কাছে। তবে একাধিক পরিবেশবিদের মত—এই চিত্র যদি বছরের শুরুতেই এমন হয়, তবে শীতকালে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হতে বাধ্য।রাজ্যের শহরভিত্তিক দূষণের পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে কোথায় দূষণ সর্বোচ্চ এবং কোথায় তুলনামূলক নিয়ন্ত্রিত তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
সমাধানের উপায় কী? প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন
যতই গাড়ির নিয়ন্ত্রণ, শিল্পাঞ্চলের নজরদারি বা নির্মাণের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক না কেন, বাস্তবে তার বাস্তবায়নে ঘাটতির প্রভাব স্পষ্ট। একাধিক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, স্থানীয় পৌর সংস্থা থেকে জেলা প্রশাসন পর্যন্ত দূষণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে একযোগে কাজ না করলে শুধু সরকারি রিপোর্ট দিয়ে দূষণ আটকানো যাবে না। পাশাপাশি, সাধারণ নাগরিকেরও উচিত মাস্ক পরা, বেশি দূষিত এলাকাগুলিতে হাঁটাহাঁটি এড়িয়ে চলা, এবং দূষণ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি।দূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক ও সামাজিক স্তরের দায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং নাগরিক দায়িত্বের কথাও আলোকপাত করা হয়েছে।
শ্বাসে বিষ ঢুকছে, ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এখনই!
পরিসংখ্যানের অঙ্ক আর তথ্যের ভারে বোঝা যাচ্ছে, বাংলার বাতাসে শ্বাস নেওয়া আজ নিরাপদ নয়। দূষণের ঘনঘটা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে শহর থেকে শহরতলি, গ্রাম পর্যন্ত। শিশুরা, বৃদ্ধরা এবং অসুস্থরা আজ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। এখনই যদি স্থানীয় প্রশাসন থেকে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সক্রিয় না হন, তাহলে আগামী দিনে এই বায়ু দূষণ বাংলার স্বাস্থ্যকে বিপন্ন করে তুলবে—অত্যন্ত নীরব অথচ অপ্রতিরোধ্যভাবে।