বিহারে ট্রাম্পের নামে ভুয়া আবাসিক শংসাপত্রের আবেদন, FIR দায়ের

বিহারে ট্রাম্পের নামে ভুয়া আবাসিক শংসাপত্রের আবেদন, FIR দায়ের

বিহারের সমষ্টিপুরে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে ভুয়া আবাসিক শংসাপত্রের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আবেদনে তাঁর ছবি এবং কারসাজি করা নথি ছিল। তদন্তের পর আবেদনটি বাতিল করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।

প্রতারণা: বিহারের সমষ্টিপুর জেলায় সরকারি প্রক্রিয়াকে ব্যঙ্গ করার মতো একটি অদ্ভুত এবং চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে এসেছে। এইবার বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে অন্যতম আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে ভুয়া আবাসিক শংসাপত্রের জন্য অনলাইন আবেদন করা হয়েছে। এই ঘটনা এখন আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং প্রশাসন বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম ও ছবি দিয়ে আবেদন

ঘটনাটি সমষ্টিপুর জেলার মোহিউদ্দিন নগর অঞ্চলের, যেখানে অবস্থিত আরটিপিএস (RTPS) লোক সেবা কেন্দ্রে এই ভুয়া আবেদনটি জমা পড়েছিল। আবেদনে আবেদনকারীর নাম ডোনাল্ড ট্রাম্প লেখা ছিল, সেইসঙ্গে তাঁর ছবিও আবেদন পত্রের উপর লাগানো ছিল। আশ্চর্যের বিষয় হল, এই আবেদনে ভারতীয় আধার নম্বর, ঠিকানা এবং বারকোডের মতো সংবেদনশীল তথ্যগুলির সঙ্গে কারসাজি করা হয়েছিল। ঠিকানায় লেখা ছিল: গ্রাম – হাসানপুর, ওয়ার্ড নম্বর – ১৩, পোস্ট – বাকরপুর, থানা – মোহিউদ্দিন নগর, জেলা – সমষ্টিপুর। তদন্তের সময় এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে এই পুরো আবেদনটি জাল। আধার এবং অন্যান্য নথির প্রমাণিকতা পাওয়া যায়নি, যার পরে ৪ আগস্ট ২০২৫ তারিখে আবেদনটি বাতিল করা হয়।

আরটিপিএস আধিকারিকের নিশ্চিতকরণ

এই বিষয়ে আরটিপিএস-এর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৃষ্টি সাগর জানান, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে আসা এই আবেদনটি সম্পূর্ণ নকল ছিল। আধিকারিকদের সন্দেহ হওয়া মাত্রই তাঁরা নথিপত্রগুলি ভালোভাবে খতিয়ে দেখেন এবং কারসাজি হওয়ার প্রমাণ পাওয়ার পর আবেদনটি বাতিল করে দেন। এর পাশাপাশি সমষ্টিপুর সাইবার থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তিনি আরও আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, সম্ভবত নির্বাচন কমিশন কর্তৃক পরিচালিত সংশোধনী অভিযানকে প্রভাবিত করার জন্য বা প্রশাসনিক প্রক্রিয়াকে কালিমালিপ্ত করার উদ্দেশ্যে এই কাজ করা হয়ে থাকতে পারে। তদন্তকারী সংস্থাকে এই পুরো বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে

এই প্রথমবার নয় যে বিহারে এই ধরনের অদ্ভুত এবং মিথ্যা আবেদন জমা পড়েছে। এর আগেও বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামে এমন ভুয়া আবেদন সামনে এসেছে। কয়েক সপ্তাহ আগে ভোজপুরি ফিল্মের অভিনেত্রী মোনালিসার নামে একটি অনলাইন আবেদন এসেছিল, যেখানে তাঁর ছবি এবং একটি মনগড়া ঠিকানা দেওয়া হয়েছিল। বিভাগ সেই বিষয়েও এফআইআর দায়ের করেছিল।

একইভাবে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের নামেও একটি ভুয়া আবেদন পাওয়া গিয়েছিল, যেখানে তাঁর ছবির সঙ্গে মুজাফফরপুর জেলার ঠিকানা দেওয়া হয়েছিল। এই মামলাগুলিতেও পুলিশ এবং সাইবার দল তদন্ত করছে।

সাইবার অপরাধীদের ওপর লাগাম টানার প্রস্তুতি

যেহেতু সরকারি পরিষেবাগুলি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তরিত হচ্ছে, সেই কারণে সাইবার অপরাধও বাড়ছে। এই ধরনের ঘটনা থেকে এটা স্পষ্ট যে কিছু লোক লোক সেবা কেন্দ্রের সিস্টেমের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে জালিয়াতি করছে।

সমষ্টিপুর সাইবার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে এই মামলায় ব্যবহৃত আইপি অ্যাড্রেস, ডিভাইসের বিবরণ এবং সিস্টেম লগগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই এটা জানার চেষ্টা করা হবে যে এই আবেদনটি কোন কম্পিউটার বা মোবাইল ডিভাইস থেকে এবং কোন স্থান থেকে পূরণ করা হয়েছিল। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইটি আইনের কঠোর ধারার অধীনে মামলা চলবে, যেখানে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।

জনগণের মধ্যে উদ্বেগ বৃদ্ধি, প্রশাসনের কাছে কঠোর পদক্ষেপের দাবি

এই ঘটনা সামনে আসার পর স্থানীয় নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের বক্তব্য হল, যদি এই ধরনের ভুয়া কার্যকলাপ বিনা বাধায় চলতে থাকে, তাহলে প্রকৃত অভাবীরা সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। জনগণ প্রশাসনের কাছে কড়া নজরদারি এবং দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানিয়েছে।

Leave a comment