বিহারের ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন অভিযান নিয়ে এডিআর সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে। সংস্থাটি নির্বাচন কমিশনের নির্দেশকে স্বেচ্ছাচারী এবং সংবিধান বিরোধী বলেছে।
বিহার ভোটার তালিকা: বিহারে ভোটার তালিকা নিয়ে চলমান বিশেষ নিবিড় সংশোধন অভিযান এখন বিচার বিভাগের আওতায় এসেছে। বেসরকারি সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন অফ ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর) এই অভিযানের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। সংস্থাটি নির্বাচন কমিশনের জারি করা নির্দেশ বাতিল করার আবেদন জানিয়েছে।
এডিআরের অভিযোগ, এই নির্দেশ সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদ (সাম্যের অধিকার), ১৯ (স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার), ২১ (জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার), ৩২৫ এবং ৩২৬ (নির্বাচন সংক্রান্ত অধিকার)-এর লঙ্ঘন। এছাড়াও, এই নির্দেশ জনপ্রতিনিধিত্ব আইন ১৯৫০ এবং রেজিস্ট্রেশন অফ ইলেক্টরস রুলস ১৯৬০-এর নিয়ম ২১এ-এরও পরিপন্থী।
এডিআরের আবেদনের ভিত্তি কী
এডিআর আদালতে দাখিল করা আবেদনে বলেছে যে নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত কোনো উপযুক্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে, স্বেচ্ছাচারীভাবে নেওয়া হয়েছে। সংস্থাটির দাবি, এই প্রক্রিয়ার কারণে বিহারের লক্ষ লক্ষ প্রকৃত ভোটার ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে।
এডিআর তাদের আবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে এই বিশেষ অভিযান মূলত তাদের বিরুদ্ধে, যাদের নাগরিকত্ব বা পরিচয় সংক্রান্ত পর্যাপ্ত নথি নেই। বিশেষ করে দরিদ্র, পরিযায়ী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষজন এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
নথি চাওয়ার বিষয়ে আপত্তি
নির্বাচন কমিশনের জারি করা নির্দেশিকা অনুযায়ী, ভোটার তালিকায় নাম যোগ করতে বা বহাল রাখতে নাগরিকদের নিজেদের নাগরিকত্বের পাশাপাশি তাদের বাবা-মায়ের নাগরিকত্বও প্রমাণ করতে হবে। এর জন্য নির্দিষ্ট কিছু নথি চাওয়া হয়েছে, যেখানে আধার কার্ড এবং রেশন কার্ডের মতো সাধারণভাবে স্বীকৃত নথিগুলি গ্রহণ করা হচ্ছে না।
এডিআরের বক্তব্য, এর ফলে তাদের চরম অসুবিধা হতে পারে যাদের জন্ম সনদ বা বাবা-মায়ের রেকর্ডের মতো নথি নেই। বিহারের মতো রাজ্যে, যেখানে শিক্ষা, নথিপত্র এবং প্রশাসনিক সুযোগ-সুবিধা তুলনামূলকভাবে দুর্বল, সেখানে এই প্রক্রিয়া লক্ষ লক্ষ নাগরিককে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে।
৩৬২ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘনের অভিযোগ
সংবিধানের ৩৬২ অনুচ্ছেদ বলে যে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের কোনো ভেদাভেদ ছাড়াই ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে। এডিআরের যুক্তি, কমিশন কর্তৃক গৃহীত প্রক্রিয়া এই অনুচ্ছেদেরও লঙ্ঘন করে, কারণ প্রয়োজনীয় নথির অভাবে প্রকৃত ভোটারদের বাদ দেওয়া হতে পারে।
অবাস্তব সময়সীমা নিয়ে প্রশ্ন
এডিআর আরও বলেছে যে নির্বাচন কমিশন এই বিশেষ অভিযান কার্যকর করার জন্য একটি অবাস্তব এবং অস্বাভাবিক সময়সীমা নির্ধারণ করেছে।
উল্লেখ্য, নভেম্বর ২০২৫-এ বিহার বিধানসভা নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে। এমতাবস্থায়, এই সময়সীমার মধ্যে নথি সংগ্রহ করা এবং নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করা লক্ষ লক্ষ নাগরিকের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। বিশেষ করে তাদের জন্য, যারা পরিযায়ী অথবা যাদের জীবিকার উপায় সীমিত।
ভোটার তালিকায় স্বচ্ছতা
এডিআর আদালতের কাছে আবেদন করেছে যে, তারা যেন এই নির্দেশ বাতিল করে, যাতে কোনো যোগ্য ভোটার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত না হয়। সংস্থাটির বক্তব্য, ভোটার তালিকা থেকে নাম সরানোর প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ, পক্ষপাতহীন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া উচিত। সংবিধানে প্রত্যেক নাগরিককে ভোটের অধিকার দেওয়া হয়েছে। এই অধিকার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন যে নির্বাচন কমিশনের কার্যকারিতা কোনো প্রকার বৈষম্যমূলক বা অবাস্তব না হয়।