বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন (SIR) অভিযান রাজ্যের রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। যেখানে বিরোধী দলগুলি এই অভিযান নিয়ে সরকারের সমালোচনা করছে, সেখানে এখন এনডিএ-র মধ্যেও এই বিষয়ে প্রতিবাদের সুর শোনা যাচ্ছে। জেডিইউ বিধায়ক সঞ্জীব সিং এবং সাংসদ গিরিধারী যাদব অভিযানের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে এলজেপি (রামবিলাস) সংযত মনোভাব নিয়েছে। এই বিষয়ে এখন বিজেপি প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং বিরোধী দলের পাশাপাশি সহযোগী দলগুলোকেও পরামর্শ দিয়েছে।
বিজেপির স্পষ্ট কথা: জালিয়াতির বিরুদ্ধে এসআইআর জরুরি
বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই বিহার বিজেপির মুখপাত্র প্রভাকর মিশ্র এসআইআর নিয়ে চলমান বিতর্ক সম্পর্কে বলেন যে, এই পদক্ষেপটি জাল ভোটারদের অপসারণের জন্য প্রয়োজনীয়। তিনি বলেন, বিরোধী দলেরা এই অভিযানের বিরোধিতা করছে কারণ স্বচ্ছতার কারণে তাদের কৌশল ব্যর্থ হচ্ছে। জেডিইউ নেতাদের মন্তব্য সম্পর্কে তিনি বলেন যে, সাংসদ গিরিধারী যাদব এবং বিধায়ক সঞ্জীব সিং সম্ভবত বিভ্রান্ত এবং তাদের দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি স্পষ্ট করা উচিত।
প্রভাকর মিশ্র আরও বলেন যে, এসআইআর-এর মতো উদ্যোগগুলি সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে শক্তিশালী পদক্ষেপ এবং যারা ভোটার তালিকায় কারচুপি করে সুবিধা নিতে চায় তারাই এর বিরোধিতা করছে। তিনি বলেন, এটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক কৌশল, যাতে আসল বিষয় থেকে দৃষ্টি সরানো যায়।
এনডিএ-র ঐক্যের উপর আস্থা
বিজেপি মুখপাত্র এই বিতর্ক সত্ত্বেও এনডিএ-র ঐক্যকে শক্তিশালী বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, জেডিইউ-এর কিছু নেতার বক্তব্য তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং শীঘ্রই দলীয় নেতৃত্ব তাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করবে। তিনি দাবি করেন যে এনডিএ-তে কোনও ফাটল নেই এবং এই ঐক্যই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে জোটকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা এনে দেবে।
বিরোধী দলের ওপর আক্রমণ করে মিশ্র বলেন যে, আরজেডি এবং কংগ্রেসের মতো দলগুলি জাল ভোটারদের ওপর নির্ভর করে নির্বাচন জেতার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, কিন্তু নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগে তাদের পায়ের তলার মাটি সরে গেছে। তিনি অভিযোগ করেন যে, এই কারণেই এই দলগুলো কালো কাপড় পরে বিক্ষোভ করছে এবং এটিকে গণতন্ত্র রক্ষার প্রচেষ্টা বলে চালানোর চেষ্টা করছে।
এলজেপির ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান
এই পুরো বিষয়ে চিরাগ পাসোয়ানের দল এলজেপি (রামবিলাস) একটি ভারসাম্যপূর্ণ এবং সংযত বিবৃতি দিয়েছে। দলের মুখপাত্র শশী ভূষণ প্রসাদ বলেন যে, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক সংস্থা এবং সমস্ত দলের উচিত এর কাজে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকা। তিনি বলেন, এসআইআর প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করা উচিত।
জেডিইউ নেতাদের কটাক্ষ করে শশী ভূষণ বলেন যে, সঞ্জীব সিং এবং গিরিধারী যাদব সম্ভবত বিভ্রান্ত। তিনি স্পষ্ট করে বলেন যে, যদি চূড়ান্ত তালিকায় কোনও প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ যায়, তবে এলজেপিও এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলবে এবং প্রয়োজনে পুরোনো ভোটার তালিকা অনুসারে নির্বাচন করার দাবি জানাবে। তবে আপাতত বাগবিতণ্ডা করা থেকে বিরত থেকে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া উচিত।
জেডিইউ-ও প্রশ্ন তুলেছে
এই বিষয়ে জেডিইউ বিধায়ক সঞ্জীব সিং উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন যে, যারা কাজের জন্য বাইরে গেছেন এবং ছয় মাস পর্যন্ত ছুটি নিতে পারবেন না, তাদের নাম যদি ভোটার তালিকা থেকে বাদ যায় তবে তা দুর্ভাগ্যজনক। একই সময়ে, সাংসদ গিরিধারী যাদব নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন যে, লোকসভা নির্বাচনের জন্য তৈরি করা ভোটার তালিকা যদি সঠিক ছিল, তবে কয়েক মাস পর সেই তালিকা বিধানসভা নির্বাচনের জন্য ভুল হতে পারে কী করে?
গিরিধারী যাদব বলেন যে, যদি ভোটার তালিকায় কোনও গরমিল থাকে, তার মানে তিনি নিজেও ভুল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন, যা পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
এসআইআর অভিযান নিয়ে বিহারের রাজনীতি সরগরম। যেখানে বিজেপি এটিকে স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতার দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে, সেখানে সহযোগী দলগুলোর মধ্যে ভিন্ন সুর শোনা যাচ্ছে। এখন সবার নজর নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত তালিকার দিকে এবং রাজনৈতিক দলগুলো এর ওপর কী প্রতিক্রিয়া জানায় সেদিকে।