বীরভূম জেলা তৃণমূলের রাজনৈতিক মানচিত্রে বরাবরই জায়গা করে নিয়েছে দু'টি শক্তিশালী মেরু—একদিকে অনুব্রত মণ্ডল, অন্যদিকে কাজল শেখ। দুই নেতার সম্পর্ক কখনো অলিখিত সমঝোতা, কখনো প্রকাশ্য বিদ্বেষ। কিন্তু এবার আবারও নতুন করে সামনে এল পুরনো সেই দ্বন্দ্ব—কাজলের গ্রাফ পড়ছে, কেষ্টর সূর্য ক্রমশ মধ্যগগনে।
দলে ‘আবার কেষ্ট-যুগ’ শুরু? কক্ষচ্যুত কাজল শিবির
দলের অভ্যন্তরে নানা সূত্র বলছে, অনুব্রতের ‘পুনরুৎ্থান’ মানে কাজলের জন্য সময়টা ভালো যাচ্ছে না। একসময় জেলা রাজনীতির অন্যতম প্রভাবশালী মুখ হয়ে ওঠা কাজল শেখের নাম এখন অনেকটাই পিছিয়ে। দলে গুরুত্ব হারানো, মঞ্চে নাম না থাকা কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণের বাইরে রাখা—সবই বলে দিচ্ছে, হাওয়া ঘুরছে। কেষ্টর ফিরে আসা মানে আবার তাঁর ছায়াতেই জেলাজুড়ে তৃণমূলের দিকনির্দেশ।
নির্বাচনী মঞ্চে প্রশাসনের আশীর্বাদ কেষ্টর ঝুলিতে
শুধু দলের ভিতরে নয়, প্রশাসনিক স্তরেও ফের কেষ্টর প্রতি পক্ষপাত চোখে পড়ার মতো। সম্প্রতি জেলার সরকারি অনুষ্ঠানে অতিথি তালিকার শীর্ষে তাঁর নাম, জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পুনর্বহাল, এমনকি বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ—সবই ইঙ্গিত দিচ্ছে, রাজ্যের উপরমহল ফের তাঁর উপর আস্থা রাখছে। প্রশাসনিক এই 'সবুজ সংকেত'ই তাঁকে আরও দৃঢ় করেছে।
কাজলের ‘পিছিয়ে পড়া’ রাজনৈতিক ইশারা মাত্র?
তৃণমূল ঘনিষ্ঠ একাধিক মহল বলছে, কাজলের পিছিয়ে পড়া কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়। বরং এটা একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়ার ফল। যে শিবিরে কাজল ছিলেন, তাদের গুরুত্ব এখন অনেকটাই ক্ষীণ। আর কেষ্টর নাম ফের মঞ্চে শীর্ষে মানেই দলের অন্দরেও ‘মেসেজ’ স্পষ্ট—পুরনো বিশ্বস্তদের ঘিরেই সংগঠন সাজানো হবে।
মুখে বন্ধ, অন্তরে আগুন—দ্বন্দ্বে ফের টগবগ বীরভূম
যদিও প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলছেন না, কিন্তু রাজনৈতিক মহল বুঝে নিচ্ছে—জেলার তৃণমূল এখনও দ্বন্দ্বমুক্ত নয়। কেষ্ট-ঘনিষ্ঠদের মুখে হাসি, আর কাজল-পন্থীরা গুটিয়ে নিচ্ছেন ডানা। দলের ভিতরের এই ঠান্ডা লড়াই এবার কি প্রকাশ্যে আসবে? না কি আরও কৌশলী লড়াই চলবে নেপথ্যে?
কে থাকবে উপরে, কে হবে স্মৃতি?
বীরভূমে তৃণমূলের নেতৃত্ব নিয়ে যে পালাবদলের ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে, তা আগামী পঞ্চায়েত কিংবা লোকসভা নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে। কেষ্টর পুনরুত্থান যদি অব্যাহত থাকে, তবে কাজলের জায়গা কোথায়—তা নিয়ে দলেই প্রশ্ন উঠছে। আর তৃণমূলের ইতিহাস বলে, একদা প্রভাবশালীরাও দলবদলের ভিড়ে হারিয়ে যান—তাই ‘পতন ও উত্থানের’ এই খেলা একমাত্র সময়ই বলবে, কার হাসি টিকে থাকবে শেষ অবধি।