তৃণমূলের অভিযোগের পাল্টা অস্ত্র বিজেপির হাতে দুর্গাপুজো
ভিনরাজ্যে বাংলাভাষীদের হেনস্থা প্রসঙ্গে শাসক দল তৃণমূল টানা আক্রমণ শানাচ্ছে। তারা দাবি করছে, বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যে বাঙালিদের বারবার আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে। এরই জবাব দিতে এবার গেরুয়া শিবির হাতিয়ার করছে দুর্গাপুজোকে। ‘বাঙালি মিলন সমারোহ’ কর্মসূচি নিয়ে বিজেপি শিবির চায় বাঙালিদের পাশে থাকার বার্তা স্পষ্টভাবে পৌঁছে দিতে।
বাঙালিদের দুর্গাপুজো আয়োজন ঘিরে গড়ল বিশেষ কমিটি
দেশের নানা প্রান্তে বাঙালি সমাজ দুর্গাপুজো আয়োজন করে থাকে। সেই আয়োজনের সময় যাতে কোনও সমস্যায় পড়তে না হয়, সে কারণে বিজেপি গঠন করেছে একটি বিশেষ নজরদারি কমিটি। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যেখানে বিজেপি শাসন করছে, সেখানেও এবং যেখানে গেরুয়া শিবির ক্ষমতায় নেই, সেখানেও দুর্গাপুজো ঘিরে বাঙালি সমাজকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বাঙালি ভোটব্যাঙ্কে প্রভাব বিস্তারের কৌশল আঁকছে বিজেপি।
তৃণমূলের বাঙালি অস্মিতা ইস্যুর পাল্টা দাওয়াই
‘বাংলায় কথা বললেই আক্রান্ত হতে হচ্ছে’—এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে বাঙালি অস্মিতার রাজনীতি তীব্র করেছে তৃণমূল। বিজেপি এবার সেই আক্রমণের পাল্টা জবাব দিতে চাইছে দুর্গাপুজো ঘিরে জনসংযোগের মাধ্যমে। সম্প্রতি দিল্লিতে উপরাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে দুর্গাপুজো আয়োজন বিষয়ে আলোচনা করেছেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, দেশজুড়ে বাঙালিরা যেন নির্বিঘ্নে উৎসব পালন করতে পারেন, সেটাই মূল লক্ষ্য।
দুর্গাপুজোয় ভিনরাজ্যে পাড়ি দেবেন ২৭ বঙ্গ বিজেপি নেতা
এই উদ্যোগকে সামনে রেখেই বিজেপি দেশজুড়ে ‘বাঙালি মিলন সমারোহ’-এর প্রচার করছে। সর্বভারতীয় স্তরে এই কর্মসূচির নেতৃত্বে রয়েছেন দলের দুই সাধারণ সম্পাদক দুষ্যন্ত কুমার গৌতম ও তরুণ চুঘ।
বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্বের নজরদারিতে নতুন উদ্যোগ
বিভিন্ন রাজ্যে গঠিত দুর্গাপুজো কমিটিগুলির দায়িত্বে রয়েছেন স্থানীয় নেতৃত্ব, পাশাপাশি বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বঙ্গ বিজেপির নেতাদেরও। মঙ্গলবার কলকাতায় এসে এ নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তরুণ চুঘ। তাঁর বক্তব্য, বাঙালিদের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে পাশে থেকে বিজেপি প্রমাণ করতে চায়—তারা শুধু ভোটের সময় নয়, বরাবর বাঙালিদের পাশে আছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে ভোটকেন্দ্রিক কৌশল
রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেপির এই উদ্যোগ নিছক সামাজিক দায়বদ্ধতা নয়, এর পেছনে রয়েছে স্পষ্ট ভোটকেন্দ্রিক হিসেব। তৃণমূল ক্রমাগত অভিযোগ করছে যে বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালিরা হেনস্থা ও বৈষম্যের শিকার। তাই পাল্টা ইমেজ গড়তেই বিজেপি দুর্গাপুজোকে ব্যবহার করছে। বিশেষ করে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে তাদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছে গেরুয়া শিবির।
আসন্ন লোকসভা ভোটের আগে ‘ফেস্টিভ্যাল পলিটিক্স’
বিশেষজ্ঞদের মতে, লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি বাংলার ভোটারদের মন জয় করতে নতুন দাওয়াই বের করছে। দুর্গাপুজোকে ঘিরে জনসংযোগ আসলে সাংস্কৃতিক আবেগের স্রোতে ভেসে ভোটব্যাঙ্ক শক্ত করার কৌশল। তৃণমূল যেখানে হেনস্থার অভিযোগ তুলছে, সেখানে বিজেপি বলছে—আমরাই বাঙালিদের প্রকৃত সঙ্গী। ফলে উৎসবের আবহে রাজনৈতিক লড়াই আরও তীব্র হতে চলেছে।